লকডাউনে ভবিষ্যত ঢাকা ফিরে পাচ্ছে অতীত পরিবেশঃ

প্রকাশিত: ৩:১০ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ১, ২০২০

লকডাউনে ভবিষ্যত ঢাকা ফিরে পাচ্ছে অতীত পরিবেশঃ
মোহাম্মদ মাহমুদুল হাসান, বিশেষ প্রতিনিধিঃ ঢাকার এই আকস্মিক বদলে যাওয়ায়, বদলে গেছে এর পরিবেশও। নাগরিক কোলাহল থেমে যাওয়ায় বাড়তে শুরু করেছে পাখিদের কিচিরমিচির। বন্ধ হয়ে গেছে কল-কারখানা, কেমিক্যালের দোকান আর কর্কশ হর্ন কিংবা ইঞ্জিনের শব্দ। শত্রু সৈন্যের মত শহরের চারপাশে ঘিরে থাকা ইটভাটাগুলোর চুল্লি বন্ধ করে চলে গেছে শ্রমিকেরা। ফলে ঢাকার বাতাস থেকে কমতে শুরু করেছে দূষণ। পৃথিবীতে বায়ু দূষণের দিক দিয়ে ঢাকাকে উপরের দিকেই রাখা হয়। এই অদৃশ্য বায়ু দূষণকে মানুষ ভয় না পেলেও অদৃশ্য করোনা ভাইরাসকে ঠিকই ভয় পেয়েছে। করোনা রোধে চলছে অঘোষিত ‘লকডাউন’। ফলে চিত্র পাল্টেছে ঢাকার। স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের (ক্যাপস) গবেষণা বলছে, গত বছরের মার্চের সঙ্গে এ মার্চ মাসের ঢাকার বাতাসের মান কোনোভাবেই মেলানো যাচ্ছে না। গেল এক মাসের নাটকীয়তায় ঢাকার বাতাসে দূষণ অর্ধেকে নেমে এসেছে। প্রতিষ্ঠানটি বলছে, গত ১০ বছরের মধ্যে মার্চ মাসে ঢাকার বাতাসের মান সবচেয়ে ভালো! গবেষণা থেকে জানা যায়, গেল ১০ বছরের ঢাকার বাতাসে দূষণের মাত্রা গড়ে ২০০ এর কাছাকাছি ছিল। এই মুহূর্তে যেটি অবস্থান করছে ১০০ থেকে ১২১ এর ঘরে। দূষণ মাত্রায় বিশ্বে ঢাকার অবস্থান ১৫তম। এয়ার কোয়ালিটি ইন্ডেক্স বলছে, গত দুই বছরে এটি ঢাকার সর্বোচ্চ সূচক। এমনকি দেশ হিসেবেও সূচকে ২৫ এর বাইরে রয়েছে বাংলাদেশ। অথচ এই বছরের শুরুতেও দূষণের মাত্রায় প্রথম তিনের মধ্যে ছিল ঢাকা। দেশ হিসেবে বাংলাদেশের অবস্থানও ছিল ৫ থেকে ১০ এর ঘরে। এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ১৬৭ রেটিং নিয়ে দূষণ তালিকার শীর্ষে রয়েছে থাইল্যান্ডের চিয়াং মাই শহর। ১২১ রেটিং নিয়ে ঢাকার অবস্থান সেখানে ১৫তম। সাধারণত শূন্য থেকে ৫০ পর্যন্ত সূচক থাকলে বলা হয় বাতাসের মান ভালো। ৫১ থেকে ১০০ থাকলে বলা হয় মডারেট। ১০১ থেকে ১৫০ থাকলে অসুস্থ মানুষের জন্য অস্বাস্থ্যকর বলা হয়। ১৫১ থেকে ২০০-এর মধ্যে বায়ুর মান সূচক থাকলে বলা হয় সবার জন্য অস্বাস্থ্যকর। আর ২০১ থেকে ৩০০ পর্যন্ত সূচক থাকলে বায়ুর মান খুবই অস্বাস্থ্যকর বলা হয়। ক্যাপসের গবেষণা বলছে, গেল বৃহস্পতিবার থেকে নাটকীয়ভাবে ঢাকার পরিস্থিতি উন্নতি হতে শুরু করেছে। গতকাল শুক্রবার ঢাকার বাতাসের মান ছিল ১১৪। ক্যাপসের পরিচালক ড. আহমেদ কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন, ‘অপরিকল্পিত উন্নয়ন ও রাস্তার খোড়াখুড়ির কারণে ঢাকার বাতাসের মান সবসময় দূষিত থাকে। ইটের ভাটা এবং আনফিট গাড়ির ধোঁয়ার কারণেও বাতাসে দূষণ বাড়ে। করোনা সংক্রমণের ভয়ে এখন সবকিছুই বন্ধ রয়েছে। স্বাস্থ্যকর হয়ে উঠছে বাতাস। এখন সামান্য বৃষ্টি হলেই ঢাকার বাতাস পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠবে।’ ‘লকডাউন’র কারণে সাধারণ জীবন যাপন থমকে গেলেও এর কিছু ইতিবাচক এবং প্রয়োজনীয় পরিবর্তনও আসছে বলেও জানান তিনি। জলবায়ু পরিবর্তন বিশেষজ্ঞ ডা. আইনুন নিশাত বলেন, ‘যেসব মাধ্যম থেকে বায়ুদূষণ হতো সেগুলো বন্ধ থাকায় মাত্রা কমে এসেছে। এরপর আমরা যদি পরিকল্পনামাফিক উন্নয়ন কর্মকাণ্ড চালিয়ে নেই তাহলে বাতাসের দূষণ আর বাড়বে না। এর জন্য কর্তৃপক্ষকে আন্তরিক হতে হবে।’ উল্লেখ্য, দূষণের জন্য বিখ্যাত হলেও দূষিত শহরের তালিকার প্রথম ৩০ এর মধ্যে নেই চীনের একটি শহরও। এমনি দূষণের তালিকায় সবার উপরে থাকা ভারতের রাজধানী দিল্লিও চলে গেছে তালিকার বিশের বাইরে।

মুজিব বর্ষ

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

Pin It on Pinterest