করোনা রোধে রাজশাহীর রাস্তায় এখনো কঠোর সেনাবাহিনী

প্রকাশিত: ৪:৪৭ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ৪, ২০২০

করোনা রোধে রাজশাহীর রাস্তায় এখনো কঠোর সেনাবাহিনী
ওমর ফারুক, রাজশাহী ব্যুরো: বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া মহামারী করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে বিনা প্রয়োজনে বাড়ির বাইরে বের হওয়া মানুষকে ঘরে ফেরাতে ও সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে রাজশাহী মহানগরীর রাস্তাগুলোতে গত দুইদিনের মত আজ শনিবারও কঠোর অবস্থানে ছিল সেনাবাহি। গত বৃহস্পতিবার থেকে সেনাবাহিনী নগরের গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাঘাটে নজরদারি বাড়ানোর পাশাপাশি বিনা প্রয়োজনে বাড়ির বাইরে বের হওয়া মানুষকে গাড়ি আটকে রাস্তা থেকে ঘুরিয়ে দিচ্ছে। এক্ষেত্রে নগরে চলাচলকারি ছোট অটোরিকশা ও ব্যাটারিচালিত যাত্রীবাহী রিকশাতে থাকা যাত্রীকেউ ঘুরিয়ে পাঠানো হচ্ছে। গত দুই দিনের পাশাপাশি গতকাল শনিবার সকাল থেকেই কঠোর অবস্থানে রাস্তাঘাটে দায়িত্ব পালন করেন সেনাবাহিনীর সদস্যরা। জানা গেছে, বাংলাদেশে প্রথম ইতালি ফেরত করোনা রোগী শনাক্ত হয়ার পর বাংলাদেশ এর প্রভাব কমাতে সরকার তৎপরতা শুরু করে। তার অংশ হিসেবে গত ১৭ মার্চ থেকে সারা দেশের স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়া হয়। এরপর রাজশাহী মহানগর থেকে দূরপাল্লার বাস চলাচল, সারাদেশের ট্রেন চলাচল ও গণপরিবহন বন্ধ করে দেয়া হয়। সেই সাথে গত ২৬ মার্চ থেকে সরকারি ছুটি ঘোষণা দেওয়া হয়। সেই ছুটি বাড়ানো হয়েছে। করোনা মোকাবেলায় ঢাকার বাইরে রাজশাহী মেডিকেল কলেজসহ দেশের বেশ কয়েকটি স্থানে ল্যাব স্থাপন করা হয়েছে। রাজশাহীতে এ পর্যন্ত কোনো করোনা রোগী শনাক্ত হয়নি। তবে শনিবার ৩১৪ জন হোম কোয়ারেন্টাইনে ছিল। এ দিন গত ২৪ ঘন্টায় নতুন ভাবে হোম কোয়ারেন্টাইনে নেয়া হয়। আরো ২০ জনকে এ পর্যন্ত মোট হোম কোয়ারেন্টাইনে ছিল ১০৮০ জন। এখান থেকে ছাড়া পেয়েছে ৭৬৬ জন। সরকারের পক্ষ থেকে করোনা মোকাবেলায় পুলিশ ও জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালতের পাশাপাশি সামাজিক দূরত্ব বজায় ও অপ্রয়োজনে বাড়ির বাইরে মানুষকে নিয়ন্ত্রণ করতে সেনাবাহিনী মাঠে নামানোর ঘোষণা দেওয়া হয়। সেনাবাহিনী নামার পর পর কয়েকদিন রাস্তাঘাটে লোক সমাগম কম দেখা গেলেও গত মঙ্গলবার ও বুধবার আবারও বেশি লোকসমাগম দেখা যায়। এরপর বৃহস্পতিবার থেকে মাঠে কঠোর অবস্থানে থাকার কথা ঘোষণা দেয়া হয় সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে। গত বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার এবং আজ শনিবার রাজশাহী মহানগরীর গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট রাস্তাঘাটে ব্যাপক তৎপর ছিল সেনাসদস্যরা। এদিন সেনাসদস্যরা বিনা কারণে বাড়ির বাইরে বের হওয়া মানুষকে ঘরে ফিরে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করেন। সেই সাথে অপ্রয়োজনে বের হওয়াদের আর বের না হওয়ার জন্য অনুরোধ করেন। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে রাজশাহী মহানগরীর বিভিন্ন বাজার এলাকায় টহল দেওয়া হচ্ছে তার পাশাপাশি মাইকিং করে সতর্ক করা হচ্ছে। গত শুক্রবার জুম্মার দিন রাজশাহী মহানগরীর সাহেব বাজার বড় মসজিদে নামাজ পড়তে আসা মুসল্লিদের হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা করেন সেনাবাহিনী। তার আগে গত দুই দিনে রাজশাহী জেলাজুড়ে বিনা কারণে অপ্রয়োজনে বের হওয়া প্রায় ৭৮ জনকে জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত অর্থদণ্ড ও বিভিন্ন শাস্তি দেয়। এদিকে, সেনাবাহিনীর কঠোর নজরদারির পর আবার পূর্বের মতো ফাঁকা হয়ে যায় নগরীর রাস্তাঘাট সহ বিভিন্ন এলাকা। তবে পাড়া-মহল্লার চায়ের দোকান ও মুদি দোকানের সামনে এখনো কিছু লোকজন বসে আড্ডা দিচ্ছে এমন খবরও পাওয়া গেছে। শুধু তাই নয় রাজশাহীর পুঠিয়ায় বাস বন্ধ থাকার পরও বেশি দামে ঢাকার টিকিট বিক্রি করেছে কিছু অসাধু লোক বলে খবর জানা গেছে। সেনাবাহিনীর পাশাপাশি পুলিশ অন্যান্য আইন শৃঙ্খলা বাহিনী এবং জেলা প্রশাসন সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতে কাজ করে যাচ্ছে। নয়টি উপজেলায় উপজেলা নির্বাহী অফিসারের পক্ষ থেকেও সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতে ও বিনা প্রয়োজনে বাড়ির বাইরে বের না হওয়ার জন্য কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। এসব এলাকায় থানা পুলিশ করোনা রোধে জনসচেতনতা মূলক কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এছাড়াও রাজশাহী জেলা পুলিশ সুপার মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ একটি বিশেষ টিম গঠন করেছেন যে টিমের সদস্যরা পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন উপজেলায় গিয়ে করোনা প্রতিরোধে সতর্কতামূলক কার্যক্রম চালাচ্ছেন। এসব দেখভাল করছেন জেলার একজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার। রাজশাহী জেলা পুলিশ সুপার কঠোরভাবে সার্বক্ষণিক মনিটরিং করছেন বলে জেলা পুলিশের মুখপাত্র ইফতে খায়ের আলম জানিয়েছেন । সচেতন মানুষ গুরুত্বপূর্ণ স্থান ও রাস্তাঘাট এর পাশাপাশি বিভিন্ন পাড়া-মহল্লাতেও মাঝে মাঝে নজরদারি করার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি অনুরোধ করেছেন। আর গ্রামের সাধারণ মানুষদের এসব বিষয়ে বেশি বেশি সচেতন করার জন্য প্রচারণা চালানোর জন্যও অনুরোধ রয়েছে এসব মানুষের পক্ষ থেকে।

মুজিব বর্ষ

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

Pin It on Pinterest