ওমর ফারুক, রাজশাহী ব্যুরো: রাজশাহী মহানগরীতে প্রবেশ ও বাইরে যাওয়া বন্ধ হওয়ায় শুনশান নগরীতে পরিণত হয়েছে রাজশাহী। ছোটখাটো যানবাহন রিক্সা, অটোরিক্সা নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। সেনাবাহিনী, র্যাব, পুলিশ ও জেলা প্রশাসনের কঠোর তৎপরতার পর রাজশাহী মহানগর জুড়ে যানবাহন ও মানুষের আনাগোনা কমেছে। বিশেষ করে গতকাল সোমবার সন্ধ্যা ছয়টার পর থেকেই রাজশাহী মহানগরীতে বাইরের জেলার কোন মানুষ ও যানবাহন প্রবেশ ও রাজশাহী মহানগর থেকে বাইরে যাওয়ার ওপর কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। মহানগরী থেকে কেউ বাইরে যেতে পারবেনা ও বাইরে থেকে কেউ নগরের মধ্যে প্রবেশ করতে পারবে না।
আর সকাল ছয়টা থেকে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত নিত্য প্রয়োজনীয় সবজি বাজার, চালের দোকান খোলা রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সন্ধ্যা ছয়টার পর ওষুধের দোকান ছাড়া কোন দোকান খোলা রাখা যাবে না। কোন দোকান খোলা থাকলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত ও মহামারী করো না ভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে মহানগর পুলিশের পক্ষ থেকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বাজারের দোকান সকাল ছয়টা থেকে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত খোলা রাখার নির্দেশনা থাকলেও পাড়া মহল্লার মুদি দোকান সকাল ছয়টা থেকে দুপুর দুইটা পর্যন্ত খোলা রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এমন নির্দেশনার পর পাড়া মহল্লার চায়ের দোকান বা মুদি দোকান খোলা না থাকায় আড্ডাবাজি ও জনসমাগম নিয়ন্ত্রণের মধ্যে চলে আসবে। নির্দেশ অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে।
আর দেয়া নির্দেশ গুলো সংশ্লিষ্টরা মেনে চলছেন কিনা নজরদারি করা হচ্ছে। কার্যত প্রশাসনের অঘোষিত লকডাউন এর সিদ্ধান্তের পর রাজশাহী মহানগরে একেবারে শুনশান নীরবতা নেমে এসেছে। কারণ এতদিন ছোটখাটো যানবাহন চলাচল করছিল ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দোকান খোলা ছিল। এ কারণে তাও মানুষের কিছুটা আনাগোনা ছিল । এখন সব দোকান বন্ধ হয়ে থাকার কারণে বাইরে মানুষের তেমন দেখা পাওয়া যাচ্ছে না। যেন নগরী এক ভুতুড়ে শুনশান নগরীতে পরিণত হয়েছে। রাস্তায় শুধু এখন বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা টহল দিচ্ছে। আর কেউ বাইরে থাকলে তাকে জেরার মুখে পড়তে হচ্ছে।
গত কয়েকদিনের তুলনায় এখন আর অটোরিকশা বা রিকশা দেখা যাচ্ছে না। এগুলো নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। খুবই জরুরী ছাড়া কোন অটোরিকশা ও রিকশা রাস্তায় চলাচল করতে দেয়া হচ্ছে না। রাজশাহী মহানগরীর প্রবেশ পথগুলোতে বসানো হয়েছে পুলিশি পাহারা। গণমাধ্যমকর্মীদের নির্দিষ্ট পেশাগত কাজে মহানগরের বাইরে যাওয়ার অনুমতি রয়েছে। নগরীর গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে তেমন মানুষের আনাগোনা দেখা যাচ্ছে না। রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার হুমায়ুন কবির মহানগরবাসীর জন্য করোনা মোকাবেলায় এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ পেতে চারটি নির্দেশ দিয়েছেন।নির্দেশগুলো হল, প্রতিদিন সন্ধ্যা ছয়টার পর হতে সকাল ছয়টা পর্যন্ত ঔষধের দোকান ব্যতীত সকল প্রকার দোকান বন্ধ থাকবে,
রাজশাহী মহানগরের বাহির হতে কোন প্রকার যানবাহন বা ব্যক্তি জরুরী প্রয়োজন ছাড়া মহানগরে প্রবেশ করতে পারবেন না বা বাহির হতে পারবেন না, মহানগরের কোন বাসিন্দা জরুরী প্রয়োজন ব্যতিত বাড়ির বাইরে বের হবেন না এবং অযথা কোন যানবাহন রাস্তায় চলাচল করা যাবে না,
(জরুরী সেবা, চিকিৎসা সেবা, ভোগ্য পণ্য, কৃষি পণ্য, রপ্তানিপণ্য ইত্যাদি পরিবহনকার্যে নিয়োজিত ব্যক্তি ও যানবাহন এ নির্দেশের আওতামুক্ত থাকবে,পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বলবৎ থাকবে। নির্দেশনা অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
এমন নির্দেশনার পর রাজশাহী মহানগরীর প্রবেশ পথগুলোতে থানা পুলিশের টহল টিম ও ট্রাফিক বিভাগের দায়িত্বরত অফিসার কর্তব্য পালন করছে। কাউকে মহানগরের অভ্যন্তরে আসতে দেয়া হচ্ছে না ও বাইরে যেতে দেয়া হচ্ছেনা। বাইরের জেলা থেকে কোন ধরনের লোক যাতায়াত ও মহানগরের মধ্যে থেকে কোন মানুষ বাইরে বের না হতে পারার কারণে মহানগরের জনসমাগম অনেকটাই কমেছে। মঙ্গলবার রাজশাহী মহানগরীর গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা ও এলাকায় ছোটখাট যানবাহনও তেমন চোখে পড়েনি। দুই একটা বের হলো সে গুলোকে মহানগরের বিভিন্ন স্থানে সেনাবাহিনী ও পুলিশের জেরার মুখে পড়তে হচ্ছে। সঠিক উত্তর দিতে না পারলে তাদেরকে ফিরিয়ে দেয়া ও ছোটখাটো শাস্তিও দেওয়া হচ্ছে।
এদিকে, সন্ধ্যা ছয়টার পর ওষুধের দোকান ছাড়া অন্য দোকান বন্ধ থাকার নির্দেশনার পর আরো লোকসমাগম কমেছে। বাইরে লোকসমাগম না হওয়ায় সামাজিক দূরত্ব কিছুটা বেড়ে। প্রশাসনের এমন কঠোর অবস্থানের পর মানুষ কিছুটা সচেতনতা বাড়িয়ে দূরত্ব বজায় রেখে চলাচল করছে। বাংলাদেশ করোনা রোগে আক্রান্ত রোগী চিহ্নিত হওয়ার পর সরকারের পক্ষ থেকে তা নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। তার মধ্যে রয়েছে, স্কুল কলেজ বন্ধ ও বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। প্রয়োজন অনুযায়ী বিভিন্ন এলাকা লকডাউন। দূরপাল্লার বাস বন্ধ ও বিশেষ সরকারি ছুটির ব্যবস্থা।
রাজশাহী মহানগরীতে মানুষের সুরক্ষা ও সংক্রমণ ঠেকাতে বিভিন্ন ব্যবস্থা নিচ্ছে প্রশাসন। মানুষকে সচেতন করতে রাতদিন কাজ করে যাচ্ছে বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। যারা আইন মানছে না তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ চলমান রয়েছে। এটি চলমান থাকবে বলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিশ্চিত করা হয়েছে। এ তথ্য নিশ্চিত করে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (সদর) গোলাম কুদ্দুস বলেন, রাজশাহী মহানগর থেকে কাউকে বাইরে বের হতে দেওয়া হচ্ছে না ও বাইরে থেকে কাউকে প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না। নগরের বিভিন্ন প্রবেশ পথ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সেখানে প্রয়োজন অনুযায়ী পুলিশ ফোর্স অবস্থান করছে। আরএমপি কমিশনার যে চারটি নির্দেশ দিয়েছেন সে চারটি নির্দেশ ঠিকমতো কার্যকর হচ্ছে কিনা তা নজরদারি করা হচ্ছে। কেউ আইন অমান্য করলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। প্রয়োজন ছাড়া বাড়ির বাইরে যে ব্যক্তি বের হবে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
গণমাধ্যমকর্মীদের ব্যাপারে এ বিধিনিষেধ আরো হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, নির্দিষ্ট পেশাগত কাজেই এক মোটর সাইকেলে শুধুমাত্র একজন করে বাইরে যেতে পারবে। তবে অপ্রয়োজনে করার কোন সুযোগ নেই। রাজশাহী জেলা পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সদর ইফতেখায়ের আলম বলেন, রাজশাহী জেলার মধ্যে অন্য জেলা থেকে কাউকে প্রবেশ করতে দেয়া হবে না। যেসব স্থানে পুলিশ চেকপোস্ট রয়েছে সেসব এলাকায় সংশ্লিষ্ট ট্রাফিক পুলিশ থানা পুলিশ এসব বিষয় নিয়ে কঠোর অবস্থানে রয়েছে। রাজশাহী জেলার মধ্যে প্রবেশ করতে ও বের হতে পারবে না। গণমাধ্যমকর্মীরা নির্দিষ্ট পেশাগত কাজে দায়িত্ব পালন করতে পারবে সে ক্ষেত্রে কোনো বাধা দেয়া হবে না।