করোনার প্রাদুর্ভাবে আমিরাতে লক ডাউনে থাকা বাংলাদেশীদের খাদ্য সংকট বাড়ছে।

প্রকাশিত: ৭:৫৪ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ১৩, ২০২০

করোনার প্রাদুর্ভাবে আমিরাতে লক ডাউনে থাকা বাংলাদেশীদের খাদ্য সংকট বাড়ছে।

আলোকিত সময় আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ সংযুক্ত আরব আমিরাতে করোনার প্রাদুর্ভাব থেকে জনসাধারনকে মুক্ত রাখতে লকডাউন সিস্টেম যত দীর্ঘতর হচ্ছে, তত বেশি মানুষের কাছে খাদ্যের অভাব বেড়ে চলেছে। মানুষের স্থির জীবনযাত্রায় নেমে এসেছে যেমন একঘেয়েমিতা,তেমনি খাদ্যসংকটে কর্মহীন মানুষের হাহাকার ক্রমশ বেড়ে চলেছে। দুবাইয়ের যেসব এলাকায় আবাসিক ভবনে সম্পূর্ণরুপে লক ডাউন করা হয়েছে সেসব এলাকায় আমিরাত সরকার সরকারিভাবে খাদ্য সরবরাহ করে যাচ্ছে । অনান্য এলাকার অস্ংখ্য প্রবাসী বাংলাদেশি খাদ্য সংকটে ভুগছে। যেসব প্রবাসী বাংলাদেশিরা খাদ্য সংকটে পড়েছে তাদেরকে বাংলাদেশ কনস্যুলেটের সাথে যোগাযোগ করার কথা বলা হলেও অনেকের অভিযোগ কনস্যুলেটের দেয়া নাম্বারে ফোন করলে ঠিক মত ফোন রিসিভ করা হচ্ছেনা । কোন কোন প্রবাসীর অভিযোগ কমিউনিটি নেতাদের পক্ষ থেকে অনুরোধের দীর্ঘ তালিকা থাকার প্রেক্ষিতে ওই তালিকা অনুযায়ী কনস্যুলেট পাইরোটি দিয়ে খাদ্যদ্রব্য সরবরাহ করে চলেছে। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ কনস্যুলেটের এক কর্মকর্তা জানান বিষয়টি সত্যি নয়, আমরা যাদেরকে খাদ্যদ্রব্য সরবরাহ করছি তাদের ব্যাপারে সঠিক ভাবে জাস্টিফাই করে খাদ্যদ্রব্য দিচ্ছি।তিনি বলেন বাংলাদেশ কনস্যুলেটে পাঁচটি টেলিফোন নাম্বার ২৪ ঘন্টা খোলা রাখা হয়েছে। প্রকৃত অর্থে খাদ্যদ্রব্যের সংকটে পড়া মানুষগুলোকে যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। কেননা অসহায় মানুষের হক একজন সাবলম্বি মানুষকে দিয়ে অন্যের হক নষ্ট করা যায়না। তবে দেখা গেছে যাদের বাসায় খাদ্যদ্রব্য মজুদ রয়েছে এবং যাদের খাদ্য দ্রব্য ক্রয় করার মত যথেষ্ট সামর্থ্য রয়েছে, তারাও খাদ্যের জন্য টাই স্যুট পরে লাইনে দাঁড়াতে । বাংলাদেশ কনস্যুলেটের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা জানান মানুষের চাহিদার তুলনায় আমাদের কাছে খাদ্যের মওজুদ অপ্রতুল। তিনি বলেন দুবাইতে এ মুহূর্তে আড়াই হাজার ব্যক্তি খাদ্যের জন্য আবেদন করেছে। শারজাহতে রয়েছে আড়াই থেকে তিন হাজার ব্যক্তির খাদ্যের চাহিদা। তবে সবচাইতে খাদ্যের চাহিদা বেশি রয়েছে আজমানে। এ অঞ্চলে ৫০০০ ব্যক্তি খাদ্যের জন্য আবেদন করেছে বাংলাদেশ কন্সুলেট দুবাইতে । পাশাপাশি উম্মুল কোয়েনে ১৫০০ ব্যক্তি খাদ্যের জন্য আবেদন করেছে। রাস-আল-খাইমায় খাদ্যের চাহিদা রয়েছে প্রায় ২০০০ ব্যক্তির।সবচেয়ে কম সংখ্যক চাহিদা রয়েছে ফুজাইরায়।এখানে খাদ্য সংকটে পড়া প্রবাসীর আবেদনের সংখ্যা ৪০০ মত হবে বলে ওই কর্মকর্তা উল্লেখ করেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এ কর্মকর্তা জানান যাঁচাই-বাছাইয়ে দেখা গেছে অধিকাংশ লোকজন খাদ্যসংকটে না পড়লেও পরিস্থিতি বুঝে তারা খাদ্য মজুদ করে রাখতে চাই। অনেকে আবার তাদের স্পন্সর থাকা সত্ত্বেও কন্সুলেটে খাদ্যের জন্য ধর্না দিচ্ছেন। তিনি বলেন আমরা এই অবস্থা বিবেচনায় রেখে অভিজ্ঞতা কাজে লাগানোর চেষ্টা করছি । যে সব ব্যক্তিরা প্রকৃত অর্থে নিঃশ্ব এবং যাদের কোনো স্পন্সর নেই,তাদেরকে খাদ্যদ্রব্য দিয়ে আমাদের বাঁচিয়ে রাখতে হবে। আর যারা সামর্থ্যবান তাদেরকে অনুরোধ করব এগিয়ে আসার জন্য এর সংকট মোকাবেলায়। নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা যায় কোভিট ১৯ প্রাদুর্ভাবে লক ডাউনের কারণে খাদ্য সংকটে পড়া বাংলাদেশীদের খাদ্যসংকট এড়াতে বাংলাদেশ সরকার অামিরাতের জন্য ২০ লক্ষ টাকার খাদ্যদ্রব্যের বরাদ্দ দিয়েছেন। তবে এখনো পর্যন্ত এই অর্থ পুরোপুরি আমিরাতের বাংলাদেশ মিশনগুলোতে এসে পৌঁছেনি। সচেতন প্রবাসীদের বক্তব্য মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর জন্য এ বরাদ্দ অত্যন্ত অপ্রতুল। তারা বলেন বাংলাদেশ সরকারকে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর জন্য বিশেষভাবে চিন্তা করতে হবে। কেননা এই অঞ্চলে সিংহভাগ প্রবাসীরা হচ্ছে শ্রমিক। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে সৌদি আরবের পর আমিরাত হচ্ছে শ্রমিক সংখ্যায় দ্বিতীয়।সারা বিশ্বেের বিভিন্ন দেশের প্রবাসীদের হিসেবেও এ সংখ্যা অনূরুপ। আমিরাতে প্রবাসী বাংলাদেশিদের সংখ্যা ১০ লক্ষ্যের উপর হলেও শ্রমিকের সংখ্যা হচ্ছে প্রায় সাত লক্ষ্যের উপরে। এই বিশাল সংখ্যক শ্রমিকদের জন্য আপদ কালীন সময়ে খাদ্য সংকট মোকাবেলায় কোন বরাদ্দ থাকলে তা পর্যাপ্ত পরিমাণ হওয়া উচিত ছিল বলে সচেতন প্রবাসী বাংলাদেশিরা মনে করেন। অভিজ্ঞ প্রবাসীরা আরও জানান কোভিট ১৯ এর প্রাদুর্ভাব আর কতদিন চলবে তা কিন্তু অনিশ্চিত। এর প্রাদুর্ভাব অব্যাহত থাকলে এ অঞ্চলের লক ডাওন সিস্টেমও দীর্ঘ হতে পারে। এমতাবস্থায় প্রবাসে অবস্থানরত সামর্থ্যবান প্রবাসীদের সামর্থ্যও ধীরে ধীরে সংকুচিত হতে পারে। তাই মধ্যপ্রাচ্যের প্রবাসীদের জন্য বাংলাদেশ সরকারকে খাদ্য সংকট মোকাবেলায় বিশেষ নজর রাখতে হবে। এদিকে কোভিট ১৯ প্রাদুর্ভাবে সংকটে পড়া প্রবাসীদের সহায়তায় আমিরাতে যেসব সংগঠন এবং ব্যক্তিবিশেষ এগিয়ে এসেছেন তাদের সংখ্যা ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ইতিমধ্যে অনেক সংগঠন বাংলাদেশ কনস্যুলেটের মাধ্যমে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে।বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিল দুবাই, এবং বাংলাদেশ বিজনেস এসোসিয়েশন আবীর কোভিট ১৯ প্রাদূর্ভাবে খাদ্যসংকটে পড়া প্রবাসীদের জন্য বাংলাদেশ কন্সুলেটের মাধ্যমে বড় বাজেটে সহায়তা করেছেন। কনস্যুলেটে ব্যক্তিগতভাবেও অনেকে সহয়তা করেছেন খাদ্য সঙ্কটে পড়া প্রবাসীদের জন্য। তাছাড়া বাংলাদেশ সমিতি আবুধাবি, বাংলাদেশ সমিতি দুবাই, বাংলাদেশ সমিতি সারজা, বাংলাদেশ সমিতি ফুজাইরা,বাংলাদেশ সমিতি উম্মুল কোয়েন, বাংলাদেশ বিজনেস ফোরাম আজমান, ইয়ুথ বাংলা কালচারাল ফোরাম,ইয়াকুব সুনিক ফাউন্ডেশন, বাবকো গ্রুপ সাংগঠনিক ও কোম্পানির তরফ থেকে খাদ্য সঙ্কটে পড়া প্রবাসীদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। রাজনৈতিক ভাবেও অনেক সংগঠন এগিয়ে এসেছেন খাদ্য সঙ্কটে পড়া কর্মহীন প্রবাসীদের পাশে। এদিকে সংযুক্ত আরব আমিরাতে ১৩ এপ্রিল পর্যন্ত করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যাক্তির সংখ্যা ৪১২৩ জন, ১২ এপ্রিল অাক্রান্তের সংখ্যা ৩৮৭ জন, ১২ এপ্রিল মৃত্যু হয়েছে ২ জন,সুস্থ হয়েছে ৯২ জন, মোট মৃতের সংখ্যা ২২ জন, সুস্থতার সংখ্যা ৬৮০ জন।


মুজিব বর্ষ

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

Pin It on Pinterest