কলাপাড়ায় দুই মানসিক রোগী নিয়ে অসহায় বিধবা

প্রকাশিত: ৬:০০ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ২৭, ২০২০

কলাপাড়ায় দুই মানসিক রোগী নিয়ে অসহায় বিধবা
মো. ওমর ফারুক, কলাপাড়া (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি: আমি দুইডা পাগল লইয়া এহানে (এখানে) অসহায় মহিলা গ্রামে গ্রামে আইট্টা খাই (ভিক্ষা করে খাই)। বয়সের কারনে এহন ভিক্ষা করতেও পারিনা। একটা নাতি আর দুইডা পাগল লইয়া আমি বিধবা মানুষ অসহায় অবস্থায় আছি। ঘড় নাই, দুয়ার নাই, মানুষের বাড়িতে থাকি। এহন, সরকার যদি আমারে একটু সাহায্য করতো, একটু থাকার ব্যবস্থা করে দিত তয় মরার আগে একটু শান্তিতে মরতে পারতাম। কান্নজড়িত কন্ঠে বলতে বলতে চোখ মুছতে শুরু করলেন পয়ষট্টি বছর বয়ষ্ক বিধবা আছিয়া বেগম। বলছিলাম পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া উপজেলার নীলগঞ্জ ইউনিয়নের হোসেনপুর গ্রামের মৃত্যু ছবের ফকিরের বিধবা স্ত্রী আছিয়া বেগমের কথা। নিজের ভিটে-বাড়ি না থাকায় তিনি গ্রামের শহিদ রাড়ি বাড়িতে আস্রিতা হিসাবে বসবাস করছে। স্বামীর মৃত্যুর পর একমাত্র মেয়ে আছমা’কে নিয়ে বাচার স্বপ্ন ছিল তার। সেই আছমা (৩০) আজ পাগল হয়ে মায়ের উপর ভর করে বেঁচে আছে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির সামনের একটি খেতে বসে মনের আনন্দে শাঁক তুলছে আছমা। কখনও কখনও আবার একা একা কি যেনো বলে যাচ্ছে। হঠাৎ দেখে বুঝার উপায় নেই এই মেয়েটি একজন মানসিক রোগী। জানা যায়, সমাজের আর দশটা মেয়েদের মত আছমা জন্মের পর হতে স্বাভাবিক ছিল। এলাকার আব্দুর রশিদ হাওলাদারের সাথে তার বিবাহ হয়েছিল। রুবী নামের একটি কন্যা সন্তানের জননীও হন আছমা। কিন্তু ভাগ্যের নির্মমতায় বিবাহের মাত্র কয়েক বছরের মাথায় তার স্বামী মারা যায়। এরপর গত ৫ বছর ধরে মানসিক রোগী হয়ে মায়ের আস্রয়ে রয়েছেন তিনি। অর্থের অভাবে ভালো চিকিৎসা সেবা দিতে পারছে না বিধবা মা আছিয়া বেগম। অবস্থা এতই খারাপ যে, আছমা’কে এখন শিকলে বেধে রাখতে হয়। এমনিতেই বিধবা আছিয়া বেগমকে নিজের মানসিক রোগী মেয়ে ও নাতিকে নিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে। তদুপরি আরেক পাগল তার বোন ফাতেমা বেগম (৬০) এসে ছুটেছে তার কপালে। এখন দুই পাগলকে লালন পালন করতে রিতীমত হিমশিম খাচ্ছে আছিয়া বেগম। তার মতে, আগেতো এক পাগলকে বেধে রেখে ভিক্ষা করতে যেতে পারতাম। এখন সে ভিক্ষার পথও বন্ধ প্রায়। জানা যায়, এবছর প্রতিবন্ধিদের নতুন নামের তালিকায় আছমা’র নাম থাকলেও এখন পর্যন্ত তারা কোন প্রতিবন্ধি ভাতা পায়নি। অপরদিকে, ফাতেমা বেগমের নাম এখনও প্রতিবন্ধি নামের তালিকায় উঠেনি। সংবাদকর্মীদের সাথে বিধবা আছিয়া বেগম আকুতি করে বলেন, আমি দুইটা পাগল নিয়ে অসহায় অবস্থায় আছি। যদি একটু আর্থিক সহায়তা পেতাম তাহলে আমার মেয়েটাকে ভালো চিকিৎসা করাতে পারতাম। নিজস্ব থাকার জায়গা নেই তাই ভূমিহীন হিসাবে সরকারের নিকট একটু থাকার জায়গার জোর আবেদন রাখেন তিনি। কলাপাড়া উপজেলা সমাজকল্যাণ কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান বলেন, সরকারের অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতা থাকায় একটি খানায় একজনকে ভাতা দেয়া হয়। আছিয়া বেগম যেহেতু বিধবা ভাতা পায় তাই ঐ একই খানায় অন্যজনকে ভাতা দেয়ায় কিছু বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তিনি মানসিক রোগী আছমা বেগম ও ফাতেমা বেগমকে পরবর্তীতে যাতে ভাতা পায় তার ব্যবস্থা করবেন বলে জানান।

 


মুজিব বর্ষ

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

Pin It on Pinterest