ঢাকা ৬ ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২১ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৮:৪২ পূর্বাহ্ণ, নভেম্বর ২০, ২০১৯
সাগরপথে মানব পাচারকারী চক্র ফের সক্রিয় হয়ে উঠেছে। তাদের মূল টার্গেট মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা নাগরিকেরা। আর এ লক্ষ্যে পাচারকারীরা রোহিঙ্গা যুবক ও তরুণীদের নানা প্রলোভনের ফাঁদে ফেলে ক্যাম্পের বাইরে এনে সুবিধমাতো জায়গায় জড়ো করছে- এমন তথ্যের ভিত্তিতে ইতোমধ্যে গত সপ্তাহে বেশ কিছু রোহিঙ্গা নারী, শিশুকে উদ্ধার করেছে পুলিশ।
অবৈধভাবে সাগরপথে মালয়েশিয়া পাড়ি জমাতে গিয়ে ২০১৩-২০১৪ সালে কয়েক হাজার বাংলাদেশি ও রোহিঙ্গা সাগরে ডুবে মারা যায়। এখনও নিখোঁজ রয়েছে কয়েক হাজার লোক। প্রশাসনের কঠোর নজরদারিতে একপর্যায়ে মানব পাচার প্রায় বন্ধ হয়ে আসে। তবে সম্প্রতি ফের সক্রিয় হয়ে উঠেছে সেই চক্রটি।
উখিয়া ও টেকনাফের রোহিঙ্গা শিবির থেকে কৌশলে পালিয়ে দালালের হাত ধরে রোহিঙ্গারা মালয়েশিয়া যাওয়ার চেষ্টা করছে। গত ৪ দিন পূর্বে মালয়েশিয়া যাওয়ার সময় টেকনাফের সেন্টমার্টিন উপকূল থেকে ১২২ জন এবং উখিয়ার উপকূল থেকে ১১ জন রোহিঙ্গা নারী-শিশু এবং যুবককে উদ্ধার করে কোস্টগার্ড আর পুলিশ।
নির্ভরযোগ্য সূত্র বলছে, চলতি বছরের নভেম্বর মাসের শুরু থেকে ফের মানব পাচারকারী চক্রটি সক্রিয় হয়ে ওঠার প্রমাণ পাওয়া যায়। টেকনাফ-সেন্টমার্টিন এবং উখিয়া উপকূল থেকে মালয়েশিয়াগামী শতাধিক রোহিঙ্গাকে উদ্ধারের মধ্য দিয়ে তা প্রমাণিত হয়েছে। আর এই বিষয়টি স্থানীয়দের ভাবিয়ে তুলেছে, ভাবাচ্ছে প্রশাসনকেও।জানা গেছে, প্রথমদিকে টেকনাফ-মিয়ানমার আন্তঃসীমান্তে মানব পাচারকারী চক্র সক্রিয় থাকলেও পরে কক্সবাজার জেলা পেরিয়ে চট্টগ্রাম ও ঢাকার শহরতলি হয়ে দেশের পূর্ব ও পশ্চিম সীমান্ত পর্যন্ত তাদের নেটওয়ার্ক বিস্তৃত করেছে। এই নেটওয়ার্কের নেতৃত্ব দেয় মিয়ানমার থেকে অবৈধভাবে এসে বসতিগড়া রোহিঙ্গারা। পরে স্থানীয় প্রভাবশালীসহ বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ মানব পাচারে জড়িয়ে পড়ে। এমনকি এই নেটওয়ার্কটি বাংলাদেশের সীমানা পেরিয়ে মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও অস্ট্রেলিয়া পর্যন্ত বিস্তৃত হয়। এই নেটওয়ার্কের সদস্যরা অপহরণের পর বিদেশে পাচার করে মুক্তিপণ আদায়, থাইল্যান্ডে দাস শ্রমিক হিসেবে বিক্রি, এমনকি খুনও করে থাকে। এই চক্রের খপ্পরে পড়ে শত শত যুবক নিখোঁজ হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা শিবিরের এক মাঝি (নেতা) জানান, যাদের আত্মীয়-স্বজন মালয়েশিয়ায় বসবাস করছে, তারাই মালয়েশিয়া যাওয়ার ব্যাপারে বেশি আগ্রহী। তারা হুন্ডির মাধ্যমে দালালদের কাছে টাকা পাঠায়। আবার যাদের আত্মীয়-স্বজন সেখানে নেই তারাও উন্নত জীবনের আশায়, অবিবাহিত নারীরা বিয়ের প্রলোভনে মালয়েশিয়া চলে যেতে চায়। এক্ষেত্রে তারা ত্রাণসামগ্রী বিক্রি করে টাকা জমিয়ে দালালদের হাতে তুলে দিচ্ছে।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মো. ইকবাল হোসেন বলেন, এখন যেহেতু উপযুক্ত সময় তাই মানবপাচারের ঘটনা বাড়তে পারে। তবে আমাদের চেষ্টা থাকবে এইটা যেন বন্ধ করা হয়। পুলিশ সেই লক্ষ্যে কাজ করছে বলে জানান তিনি।
© স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০২০ Developed By Agragami HOST