এবার ব্যতিক্রমী ঈদ উদযাপন করতে যাচ্ছে রাজশাহীবাসী

প্রকাশিত: ৪:২৯ অপরাহ্ণ, মে ২৪, ২০২০

এবার ব্যতিক্রমী ঈদ উদযাপন করতে যাচ্ছে রাজশাহীবাসী
ওমর ফারুক, রাজশাহী ব্যুরো: সিয়াম সাধনা ও আত্মশুদ্ধির মাস পবিত্র মাহে রমজান শেষে আগামীকাল সোমবার শঙ্কা নিয়ে ও করোনা পরিস্থিতির মধ্যেই ব্যতিক্রমী ঈদ উদযাপন করবে রাজশাহীসহ পুরো দেশবাসী। এবার অন্য বছরের ঈদের মতো নেই আনন্দের উল্লাস ও কেনাকাটার ধুম। সবখানেই রয়েছে শঙ্কা ও অজানা আতঙ্ক। এরমধ্যে আসছে পবিত্র ঈদুল ফিতর। অন্যান্য বছর পবিত্র ঈদুল ফিতরের নামাজ মুসল্লিরা সবাই মিলে ঈদগাহে আদায় করে কোলাকুলি করে কিন্তু এবার সে সুযোগটিও থাকছে না বাঁচা-মরার লড়াইয়ে। এছাড়াও নিকটতম মসজিদে ঈদের নামাজ আদায়ের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সরকারিভাবে সেই নামাজও আদায়ের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে তিন ফুট দূরত্বে ও লাইন ফাঁকা রেখে। সব মিলিয়ে এবারের ঈদ শঙ্কা ও অজানা আতঙ্কের মধ্যেই উদযাপন করবে রাজশাহীবাসী। ইতিমধ্যেই রাজশাহী মহানগর ও আশপাশের উপজেলা এবং পৌর এলাকায় ঈদের নামাজের সময় নির্ধারণ করা হয়েছে। জানা গেছে, চলতি বছরের ৮ মার্চ বাংলাদেশে প্রথম ইতালি ফেরত প্রবাসী করোনা শনাক্ত হয়। এরপর আস্তে আস্তে আরো কয়েকজন করোনা পজেটিভ রোগী শনাক্ত হয়। করোনার প্রাদুর্ভাব কমাতে ১৭ ই মার্চ থেকে দেশের সকল সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়া হয়। সেই সাথে রাজশাহী থেকে দূরপাল্লার বাস, ট্রেন ও গণপরিবহন চলাচলও বন্ধ করে দেওয়া হয়। বন্ধ হয়ে যায় অভ্যন্তরীণ বিমান চলাচল। এর কয়েদিনের মধ্যেই রাজশাহী মহানগরীর সকল মার্কেট ও দোকান পাট বন্ধ করে দেওয়া হয় অনির্দিষ্টকালের জন্য। এ সময় শুধু নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য ফার্মেসী খোলা ছিল। এপ্রিল মাসের ১২ তারিখ রাজশাহীর পুঠিয়ায় নারায়ণগঞ্জ ফেরত একজন করোনা রোগী শনাক্ত হয়। প্রথম রোরোগী শনাক্তের পর রাজশাহী জেলাকে ১৪ এপ্রিল অনির্দিষ্টকালের জন্য লকডাউন ঘোষণা করে দেয়া হয়। এখনো পর্যন্ত লকডাউন অব্যাহত আছে। তবে পবিত্র ঈদ-উল-ফিতর ঘনিয়ে আসলে সরকারের পক্ষ থেকে সামাজিক দূরত্ব স্বাস্থ্যবিধি মেনে মার্কেট দোকানপাটও শপিংমল খুলে দেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়। রাজশাহী মহানগর ও জেলার বিভিন্ন উপজেলা ও পৌর এলাকার মার্কেট খুলে দেয়া হলে ক্রেতারা শপিং করা শুরু করে। রাজশাহী মহানগর এলাকায় আগের দিন ৯ মে মার্কেট বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। যৌথসভায় দুই দফায় এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হলেও ব্যাবসায়ীরা সেই সিদ্ধান্ত অমান্য করে ব্যবসা শুরু করে। এরপর জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কমিটির যৌথ সভায় মার্কেট বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তারপর থেকে নগরের কোন মার্কেট খুলতে দেয়া হয়নি এবং সেনাবাহিনী সহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মার্কেট বন্ধ রাখতে তৎপরতা শুরু করে। এতে মার্কেট নিয়ন্ত্রিত হয়। এদিকে, অন্যান্য বছর যেখানে পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে বিভিন্ন মার্কেট এবং দোকানের সামনে ক্রেতাদের সুবিধার্থে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন করা হয় এবার সেখানে মার্কেটিং করতে দেওয়ার সুযোগ তো দূরের কথা করোনা পরিস্থিতি ক্রেতাদের মার্কেটে না আসার জন্য সবাইকে অনুরোধ জানানো হয়। সরকারের নির্দেশনার পর প্রাইভেট গাড়িতে বিভিন্ন জেলা থেকে রাজশাহীতে মানুষ আসলেও এবার নেই অন্যান্য বছরের মত আনন্দ ও উল্লাস। রাজশাহী জেলার মধ্যে প্রবেশ করলেও। অসংখ্য মানুষ গাছের বাইরেই রয়ে গেছে। এসব পরিবারের মধ্যে তেমন নেই আনন্দ। এছাড়াও করোনা পরিস্থিতিতে আর্থিক সংকটে ভোগা মানুষজন কিছুটা এখনও সমস্যার মধ্যে রয়েছেন। ঈদুল ফিতরে নামাজ আদায়ের জন্য সরকারিভাবে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সেই নির্দেশনা মোতাবেক বাড়ির কাছে মসজিদে ঈদের নামাজ আদায় করতে হবে মুসল্লিদের। অন্যান্যবার ঈদে বিনোদন কেন্দ্র ও চিড়িয়াখানাতে প্রচুর লোক সমাগম হয়। কিন্তু এবার বিনোদন কেন্দ্র, চিড়িয়াখানা ও পার্কে বেড়ানোর কোন সুযোগ নেই। করা যাবেনা লোক জনসমাগম। এছাড়াও বাইরের কোনো হোটেল রেস্টুরেন্ট বা দোকান খোলা থাকবে না। সার্বিকভাবে এবার ব্যতিক্রমী পালন করতে যাচ্ছে রাজশাহী মহানগরবাসী। রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের পক্ষ থেকেও পটকা না ফোটানোসহ বিভিন্ন নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। রাজশাহীর প্রবীণ মানুষরা বলছেন, তাদের দেখা মতে এরকম শঙ্কা এবং ভয়ের মধ্যে কখনোই তারা ঈদ পালন করেননি। প্রথমবারের মতো এভাবে তাদের ঈদ উদযাপন করতে হচ্ছে। শীঘ্রই মহামারী করোনাভাইরাস থেকে আল্লাহ তাআলা মানুষকে মুক্ত করে দিয়ে স্বাভাবিক জীবন-যাপন করার সুযোগ দিবেন এমন দোয়া আল্লাহতালার দরবারে তারা করেছেন।

alokito tv

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

Pin It on Pinterest