জুলহাস উদ্দীন তেঁতুলিয়া উপজেলা প্রতিনিধি: তেঁতুলিয়ায় পাল্টাপাল্টি অভিযোগে মডেল থানায় মারধর, শ্লীলতাহানি, চুরির অভিযোগ টেনে মামলা করেছে দুই পক্ষ। একপক্ষের দাবি রাতের অন্ধকারে জমাজমির বিরোধের জের ধরে অতর্কিত হামলা চালিয়ে অমানবিক নির্যাতন চালানো হয়েছে। এ অভিযোগের প্রেক্ষিতে মডেল থানায় মামলা করেছে এক অসহায় ভুক্তভোগী পরিবার। ঘটনাটি উপজেলার শালবাহান ইউনিয়নের প্রামাণিক পাড়া গ্রামের। ঈদের দ্বিতীয় দিন প্রতিবেশির সাথে সামান্য কথা কাটাকাটিতে বাক বিতÐতার সৃষ্টি হয়। এর সূত্র ধরে রাতের অন্ধকারে হামলা চালিয়ে অমানবিক নির্যাতন চালানো হয়। এ ঘটনায় মারাত্মকভাবে জখমসহ আহত হোন পরিবারটির ১০ সদস্য। এ সংঘটিত হামলায় গত ৩০ জুন শফিকুল ইসলাম (৫৫) বাদী হয়ে প্রতিবেশী শালবাহান ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য জাহাঙ্গীর আলম (৪০) কে প্রধান আসামী করে ১৬জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। এ মামলার অন্যান্য আসামীরা হলেন, কামরুজ্জামান কামু (৪৮), আবু জাফর (৪৫), রাশেদুল ইসলাম (৪৫), দেলোয়ার হোসেন (৩০), এনায়েত হোসেন তুহিন (২৮), সাহাব উদ্দিন (২৮), আবু সাঈদ (২৪), সাইদুল হক (৩২), সামছুল হক (৫২), সুরুজ্জামান (৫০), খাইরুল হক (৩০), খাদেমুল হক (২৬), আক্তার হোসেন (২৪), আব্দুল ওয়াদুদ (৩৫), ওলিয়র রহমান (৪২)সহ অজ্ঞাতনামা আসামী করা হয়েছে আরো ১৫/১৬ জনকে। এ ঘটনায় মডেল থানা পুলিশ জাহাঙ্গীর আলমকে গ্রেফতার করে জেল হাজতে প্রেরণ করলে বুধবার বিকেলে তিনি জামিনে ছাড়া পেয়েছেন বলে জানা যায়। এ মামলা সূত্রে জানা যায়, ২৭ জুন বুধবার রাতে প্রতিবেশী খতেজা বেগমের সাথে চলে আসা শত্রæটা থাকায় সামান্য কথাকাটাকাটি নিয়ে বাক বিতÐতা সৃষ্টি হয়। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাত সাড়ে ৮টার দিকে ওই প্রতিবেশীর আত্মীয়রা (আসামী) অনাধিকারভাবে প্রবেশ করে হামলা করে বসে। এতে করে পরিবারটির ১০ জন প্রচন্ডভাবে আহত হন। এদের মধ্যে আকলিমা আক্তার (৪৫) ও মাজহারুল (৩৫) আশঙ্কাজনক অবস্থায় রংপুরে রেফার্ড করা হয়। আর বাকি ৮ জন তেঁতুলিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নেন। ওই হামলায় বাদী সফিকুল ইসলামের অভিযোগ, পূর্বশত্রæটার জের ধরে আমাদেরকে প্রাণে মেরে ফেলার উদ্দেশ্যে হামলা করা হয়েছিল। ঘরের আসবাবপত্র (দরজা, ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা, আলনা, সুকেস, টিভি ভাংচুর করে ৭৫ হাজার ক্ষতি করা হয়েছে। আর আলমারিতে রাখা মরিচ বিক্রির নগদ অর্থ ৫৫ হাজার টাকা লুট করা হয়েছে। আর অতর্কিত হামলায় আসামীরা দেশী ধারালো অস্ত্র ব্যবহার করেছে বলে জানান তিনি। ঘটনাটির সত্যতা জানতে সরেজমিনে ভুক্তভোগীর বাড়ি ঘুরে দেখা যায়, আলমারী, চেয়ার, টিভি, দরজা ছুটানো, বেড়া ভাঙ্গা চিত্র দেখা যায়। পরিবারের নারী সদস্যদের সাথে কথা বললে, তারা সেদিনের হামলায় অমানবিক মারধর করে নির্যাতন ও শ্লীলতহানি করা হয়েছে বলে জানান। এমনকি অবুঝ শিশুকেও চরথাপ্পর মেরে উঠোনে ছুঁড়ে দেয়া ও পায়ে ধরে ক্ষমা চাওয়া চেয়েছেন বলে পরিবারটির সফিকুল ইসলামের স্ত্রী মসলিমা বেগম, মেয়ে শিউলি, ভাতিজি জেসমিন আক্তার, আকলিমা আক্তারসহ নির্যাতনের শিকার অন্যান্য সদস্যরা। এ ঘটনার আইনী ব্যবস্থা নিতে সফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে ‘পূর্ব পরিকল্পিত ভাবে বে-আইনী জনতায় দলবদ্ধ হয়ে বাড়িতে অনাধিকার প্রবেশ করে খুনের উদ্দেশ্যে মারধর, গুরুতর জখম, চুরি, ক্ষতি, শ্লীলতাহানি, ভয়ভীতি ও হুকুম দেয়ার অপরাধ’-এ মামলাটি করেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এলাকাবাসীর বেশ কয়েকজন জানান, এরা প্রভাবশালী হওয়ায় পরিবারটি ক্ষতিগ্রস্ত হলো। মামলার প্রধান আসামী জাহাঙ্গীর আলম একজন ইউপি সদস্য। সে কিভাবে এ হামলার নেতৃত্ব দিতে পারেন বলে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। এ বিষয়ে মামলার আসামী জাহাঙ্গীর আলম ও কামরুজ্জামান কামুর সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তারা জানান, মামলাটি মিথ্যা। আমরা এসবের মধ্যে জড়াতে যাব কেন। বরঞ্চ ওরাই প্রথমে আমাদের আত্মীয়র বাড়িতে মোবাইলে কথা বলাকে কেন্দ্র করে অশ্লীল গালিগালাজ করতে করতে মারধরে জড়িয়ে পড়ে। জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আমাদের সাথে জমাজমি সংক্রান্ত বিরোধ রয়েছে। তবে আমাকে হুকুমের আসামী করা হয়েছে। বিশেষ করে আমাদের মান সম্মান ক্ষুন্ন করতে এ মিথ্যাটি মামলাটি করা হয়েছে জানান। এদিকে একই ঘটনায় অভিযোগ টেনে তেঁতুলিয়ায় মডেল থানায় পাল্টাপাল্টি অভিযোগে আরেকটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। আগের মামলার ৫দিন পর বিবাদীদের পক্ষে রশিদা বেগম বাদী করে ১৪জনকে আসামী করে মামলাটি করা হয়েছে। মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, তারাই আগে মারধরের শিকার হয়েছেন। মামলায় বলা হয়েছে, ওই মামলার বাদী সফিকুলের মেয়ে শিউলি বেগমের সাথে আমার ভাতিজি আরফিনা বেগমের মোবাইল ফোনে কথা বলাকে কেন্দ্র করে উভয়ের মধ্যে তর্কাতর্কির সৃষ্টি হয়। তর্কে বিবাদী শিউলি বেগমের পরকীয়া প্রেমের ঘটনা ফাঁস করলে বিবাদীরা ক্ষীপ্ত হয়ে অশ্লীল গালিগালাজ করতে করতে বাড়িতে প্রবেশ করে এক পর্যায় মারধর শুরু করে। এতে করে আরফিনা মা খতেজা বেগম গুরুতর জখম হন। এছাড়াও সবাইকে মারধর করতে থাকলে আমিও চরম আহত হই। এসময় এ বাড়ি হতে ৫০ হাজার টাকার মালামাল লুটপাট ও গরু বিক্রির ৮০ হাজার টাকা চুরি করে নিয়ে যায় তারা। এ ঘটনায় আমরা গুরুতর আহত হলে হাসপাতালে চিকিৎসা নেই। আর ভিকটিমরা অসুস্থ্য থাকায় মামলার বিলম্ব হওয়ার কারণ উল্লেখ করা হয়। এ ব্যাপারে তেঁতুলিয়া মডেল থানার ওসি জহুরুল ইসলাম জানান, পাল্টাপাল্টি অভিযোগে থানায় দুটি মামলা করা হয়েছে। একজন সফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে ৩০ জুন ১৬জনসহ অজ্ঞাতনামায় আরো ১৫/১৬ জনকে আসামী করে মামলা দায়ের করেছেন। এ মামলায় প্রধান আসামী জাহাঙ্গীর আলমকে ৮ জুন গ্রেফতার করে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়। অপর পক্ষ ৫ জুন ১৪জনকে আসামী করে আরেকটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলা দুটি তদন্তাধীন বলে জানান তিনি।।