নীলফামারীতে অতি দরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচীর প্রকল্প কাজ অনিয়মেই নিয়ম

প্রকাশিত: ২:০৩ পূর্বাহ্ণ, নভেম্বর ২৯, ২০১৯

খাদেমুল মোরসালিন শাকীর, রংপুর ব্যুরোঃ নীলফামারী কিশোরগঞ্জ উপজেলায় অতি দরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচীর প্রকল্পের কাজে অনিয়মেই নিয়মে পরিণত হয়েছে। এ উপজেলায় অতিদরিদ্র কর্মসংস্থান কর্মসূচী যেন লুটপাটের মহোৎসবে পরিণত হয়েছে।
উপজেলায় ৯টি ইউনিয়নে ৮১টি প্রকল্পের কাজ চলছে। প্রকল্পের নামে শ্রমিকদের দিয়ে বাড়ীর উঠানের মাটি তোলার কাজ, প্রতিটি প্রকল্পে ৫ থেকে ৬ জন শ্রমিক অনুপস্থিত, চেয়ারম্যানের পোষ্য মেয়ে কাজে না গিয়েও হয়েছে শ্রমিক, নিয়মিত কাজ না করা, খাতায় হাজিরা থাকলেও থাকছে অনুপস্থিতসহ উঠেছে বিভিন্ন অভিযোগ। এছাড়া কাগজে কলমে প্রকল্প নেয়া হলেও বাস্তবে কারো কারো বাড়িতে মাটি তোলা হচ্ছে বলে জানা গেছে। অন্যদিকে যেসব প্রকল্পে মাটি কাটার কথা সেসব প্রকল্পে কাজ না করে অন্য জায়গায় কাজ করা হচ্ছে।
সরেজমিনে গত ২৬ নভেম্বর বড়ভিটা ইউনিয়নের ২টি প্রকল্প ঘুরে দেখা যায় যে, ৫নং ওয়ার্ডের রংপুর ডালিয়া রোড় থেকে শুরু করে পাইকারটারী মাথা পর্যন্ত ইউপি রাস্তা সংস্কারের কথা থাকলেও এ প্রকল্পের শ্রমিকদের দিয়ে গত ২৪ ও ২৫ নভেম্বর পাইকারটারী গ্রামের লতিফের বাড়ির উঠানে মাটি উত্তোলন করা হয়। এছাড়া একই গ্রামের জাহাহাঙ্গীরের বাড়ীতেও মাটি উত্তোলন করা হয়। এ প্রকল্পে কাগজে কলমে ৩১ জন উপকারভোগী থাকলেও বাস্তবে দেখা যায় ২৬ জন উপস্থিত ছিল। অনুপস্থিত ছিল ৫ জন। অনুপস্থিত শ্রমিকরা হল আছিমন, জামেনুর, আজগর আলী, মহসেন, নূরবানু। অন্যদিকে উপস্থিত ২৬ জনের মধ্যে অনেক উপকারভোগী রয়েছে বদলী। অথচ হাজিরা খাতায় দেখা গেছে সকল শ্রমিকের স্বাক্ষর রয়েছে। এ প্রকল্পের সরদার আবু নাঈম জানান, এ প্রকল্পে ৩৩ জন উপকারভোগী কাজ করার কথা। তবে কাজ করছে ৩১ জন। অন্য ২ জন পার্শ্ববর্তী প্রকল্পে কাজ করছে। তিনি আরো জানান- অনুপস্থিত ৫ জন উপকারভোগী অসুস্থ্যজনিত কারণে আজকে আসেনি। আবার তিনিই এক পর্যায় বলেন-গতকাল এসব উপকারভোগী এসেছিল আজ আসেনি। উপকারভোগী নুরবানু-২ এর বদলী উপকারভোগী তোফাল জানান- অনুপস্থিত এসব উপকারভোগী কাজ শুরু থেকে কোনদিন আসেনি। ৪নং ওয়ার্ড দক্ষিন বড়ভিটা ফুটবল মাঠ হতে বাবুর ডাঙ্গা পর্যন্ত ইউপি রাস্তা সংস্কার এবং আলহাজ্ব সোলামান আলীর দিঘির পাড়ের রাস্তা সংস্কার প্রকল্পে চলছে হযবরল। এ প্রকল্পের উপকারভোগীদের দিয়ে মাটি কাটা হয়েছে বাবুর ডাঙ্গা গ্রামের বাহারুলের উঠানের। এ প্রকল্প ঘুরে দেখা যায় বেলা ৩ টায় নেই কোন উপকারভোগী। অথচ প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস জানান- শ্রমিকরা বেলা ৪ টা পর্যন্ত কাজ করার কথা। এ ব্যাপারে প্রকল্প সভাপতি আলিয়ার রহমান জানান- সকল উপকাভোগীদের নিয়ে পাশের বাড়ীতে পিকনিক খেয়েছি। পিকনিক খেয়ে পৌনে ৩ টায় সকল উপকারভোগী চলে গেছে। এলাকাবাসী মতিলাল জানায়- প্রতিদিন ২টার সময় উপকারভোগীরা চলে যায়।
সরেজমিনে গত ২৭ নভেম্বর বড়ভিটা ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ড হামিদের বাড়ী হতে আরাম্ভ করে মনে বর্মনের বাড়ী পর্যন্ত ইউপি রাস্তা সংস্কার প্রকল্পে বেলা ২টা ১৫ মিনিটে পাওয়া যায়নি কোন শ্রমিককে। এ প্রকল্পে দৃশ্যমান তেমন কাজ দেখা চোখে পড়েনি। এ প্রকল্পে উপকারভোগীরা প্রকল্পে এসে কাজ না করে অলস দিন কাটান বলে জানা গেছে। এছাড়া এ প্রকল্পে উপকারভোগীর সংখ্যা ২২ জন হলেও কাজ করছে ১০ থেকে ১২ জন এমনটি জানান এলাকাবাসী। এলাকার মোসলেমিনা জানান- এ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে ৫-৭ দিন থেকে। শ্রমিকরা ঠিকভাবে কাজ করে না বলেও তিনি জানান। তিনি আরও জানান- শ্রমিকরা উপস্থিত থাকে না বললেই চলে। এ প্রকল্পে চেয়ারম্যানের পোষ্য মেয়ে মিনা তালিকাভুক্ত শ্রমিকের নাম থাকলেও কোন দিন কাজ করতে আসেনি। এ প্রকল্পটি চেয়ারম্যানের বাড়ীর আশপাশ হওয়ায় কাজ চলছে ঢিলেঢালা । এ ব্যাপারে ইউপি সদস্য মোঃ মামুনুর রহমান জানান- কাজ তদারকি করতে গিয়ে অনুপস্থিত নিয়ে কথা বললে সরদার আমাকে রাগ দেখায় তাই আমি ৪-৫ দিন থেকে কাজ দেখা বন্ধ করেছি। চেয়ারম্যানের পোষ্য মেয়ে মিনা সর্ম্পকে কথা বললে তিনি বলেন, মিনা চেয়ারম্যানের ব্যেটি হয়। মাঝে-মধ্যে কাজে আসে ।’
এ ব্যাপারে বড়ভিটা ইউপি চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মোঃ ফজলার রহমান জানান, রাস্তার পার্শ্ববর্তী উঠান হওয়ায় মাটি ভরাট উঠানে কাছাকাছি পড়েছে। তার পোষ্য মেয়ে মিনার কাজ না করা প্রসঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন- মাঝে মাঝে যায়। ৩নং ওয়ার্ডে অনুপস্থিত সর্ম্পকে জানতে চাইলে তিনি জানান- একজন অনুপস্থিত না হয় আমার মেয়ে হল অন্যরা কারা বলে উল্টো তিনি সাংবাদিকদের প্রশ্ন করেন। তিনি আরও জানান- অনুপস্থিত না থাকলে তাদের খাতায় অনুপস্থিত লেখার বিষয়ে কথা বলেন। ৫নং ওয়ার্ডের প্রকল্পে ২ জন উপস্থিত ছিল না বলে তিনি নিজেই স্বীকার করেন। তিনি আরও জানান- এসব কাজে চেয়ারম্যানের কোন হাত নেই সব কিছু মেম্বার ও সর্দাররা দেখভাল করেন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় যে, বাহাগিলি ইউনিয়নের ৬নং প্রকল্পে কাজ না করে অন্য স্থানে কাজ করছে। ৬নং ওয়ার্ডের প্রকল্পে উপকারভোগী ৩১ জন থাকার কথা থাকলেও পাওয়া যায় ২৭ জনকে কিন্তু রেজিস্টারে ৩১জন উপস্থিত দেখানো হয়। এ বিষয়ে সরদারের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, অনুপস্থিত উপকারভোগীরা বাসায় খেতে গেছে। এছাড়া এ প্রকল্পে বদলী ৬-৭ লোক রয়েছে বলে জানা গেছে।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসার মোঃ আব্দুল হাই সরকার বলেন, আমরা পরিদর্শন করে যাকে অনুপস্থিত পাচ্ছি তাকে অনুপস্থিত দেখানো হচ্ছে। এখানে কার মেয়ে কার ছেলে আমরা তা দেখতে যাই না। তিনি আরও বলেন অনেক প্রকল্পে অনেক শ্রমিক কাজ না করে অলস সময় কাটায় তা শুনেছি। প্রতিদিন প্রকল্প পরিদর্শন করা সম্ভব হয়ে উঠে না। তিনি জানান- যে সকল শ্রমিক কোন দিন আসে না বা বদলী রয়েছে এরকম সুনির্দিষ্ট প্রমাণ পেলে তাদের আমরা স্থায়ী ভাবে বাতিল করে নতুন শ্রমিক নেয়ার ব্যবস্থা করবো।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবুল কালাম আজাদ জানান, অনুপস্থিত শ্রমিকদের হাজিরা খাতায় অনুপস্থিত দেখানোর কথা। আমি নিজেও প্রকল্প পরিদর্শন করে যাদের অনুপস্থিত পেয়েছি তাদের খাতায় অনুপস্থিত দেখানো হয়েছে।

u


মুজিব বর্ষ

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

Pin It on Pinterest