ঢাকা ৫ অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২০ আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৬:২৭ অপরাহ্ণ, জুন ২৯, ২০২০
মোঃ ফিরোজ হোসাইন
আত্রাই নওগাঁ প্রতিনিধি :
বাংলাদেশ কৃষি প্রধান দেশ যার সার্বিক উন্নয়ন কৃষির ওপরই নির্ভরশীল। করোনা ভাইরাস পরিস্থিতিতে আরো স্থবির হয়ে পড়েছে পুরো দেশ।সাথে প্রকৃতির দুর্যোগ তো আছেই।
বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে আমাদের দেশের আবহাওয়া অনবরত বদলে যাচ্ছে ফলে কৃষিক্ষেত্রে নানা রকম ফসলের সময়মতো উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। আবহাওয়া পরিবর্তনের সাথে সাথে বাংলাদেশের কৃষির গতি ও প্রকৃতি বদলে যাচ্ছে মারাত্মকভাবে। ভৌগলিক অবস্থানের কারণেই বাংলাদেশের কৃষি প্রতিনিয়ত প্রকৃতির বৈরী পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে এগিয়ে চলছে। অসময়ে খরা, বন্যার কারণে একদিকে কৃষক হারিয়ে ফেলছে অতি মূল্যবান ফসলসহ নানা জাতের বীজ অন্যদিকে মাটি হারাচ্ছে ফসল উৎপাদনশীলতা। বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি তথা জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাবে প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রকোপ বৃদ্ধির ফলে বাংলাদেশের কৃষি নির্ভরশীল ক্ষুদ্র খামারভিত্তিক জনগোষ্ঠী সবচেয়ে বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে।
বাংলদেশের কৃষি ও কৃষকের উন্নয়ন করতে হলে কৃষির এসব সমস্যা নিরূপণ করে, খাদ্য উৎপাদন ও নিরাপত্তার লক্ষ্যে একটি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করা আমাদের জন্য খুব জরুরি। এছাড়াও কৃষিক্ষেত্রে উন্নয়নের লক্ষ্যে টেকসই কৃষি প্রযুক্তির সম্প্রসারণ ও বৈরী আবহাওয়ার সাথে খাপ খাইয়ে পরিবেশবান্ধব কৃষি ব্যবস্থার প্রচলন প্রয়োজন। কৃষি প্রযুক্তির উন্নয়ন ও উদ্ভাবনে আমরা কিছুটা সফল হলেও প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা করার আধুনিক প্রযুক্তির মারাত্মক অভাব এখনও রয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত যেমন- লবণাক্ততা, উচ্চ তাপমাত্রা, খরা কিংবা বন্যাসহিষ্ণু প্রযুক্তির অভাব লক্ষণীয় যা টেকসই কৃষি উৎপাদনের পূর্বশর্ত।
চলতি মওসুমে দেশজুরে বন্যায় ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্থের স্বীকার বন্যাকবলিত অঞ্চলের মানুষ। বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে মানুষের বাড়ি-ঘর, ফসলের ক্ষেত। এই বন্যার ফলে সারাদেশের বন্যাকবলিত অঞ্চলের মানুষ ব্যাপক ক্ষতি গ্রস্থের সম্মুখীন হয়েছেন। বন্যার পানিতে ভেসে গেছে কৃষকের বীজতলা,। হাঁটুপানিতে নেমে অসহায়ের মতো বীজতলা হতড়ানো,ও ফসল উঠানো,বর্তমানে হতাশা ছাড়া কিছুই জোটেনি কৃষকের কপালে। বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে বেশির ভাগ কৃষকের ফসল, শেষ সম্বলটুকু হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন,বন্যাকবলিত অঞ্চলের কৃষক। মাঠের পর মাঠ এখনো পানির নিচে তলিয়ে আছে। অনেক জায়গায় মাঠে শুধু এখন পানিতে টইটম্বুর।
বেশির ভাগ কৃষকের ফসল নষ্ট হয়ে যাওয়ায় তাঁদের একমাত্র সম্বল এখন চাপা দীর্ঘশ্বাস। বন্যার ক্ষয়ক্ষতি সম্পর্কে বর্ণনা করতে গিয়ে ডুকরে কেঁদে উঠছে অসহায় কৃষক।
নওগাঁর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, এবারের বন্যায় ১ হাজার ৮৬০ হেক্টর জমির রোপা আমনের বীজতলা, ৩ হাজার ৩০ হেক্টর জমির আউশ, ৫ হাজার ৯১২ হেক্টর জমির পাট, ২হাজার ৬৩১ হেক্টর জমির শাক-সবজি, ১৮০ হেক্টর জমির বাদাম,৮০ হেক্টর জমিতে ভুট্টা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
নওগাঁ জেলার তিনটি উপজেলার ২২ টি ইউনিয়নের বেশ কিছু এলাকা বন্যাকবলিত হয়েছে।
এরমধ্যে রোপা আমন বীজতলা, সবজি, আউশ আবাদ, পাট ও বাদাম নষ্ট হয়ে প্রায় ১০০০ হাজার কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। জেলায় ১ হাজার ৯২ টি মৎস্য খামার, পুকুর ডুবে ও পাড় ভেঙে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, ৪০৬ জন চাষী। মাছ ও পোনা ভেসে গিয়ে ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৫কোটি ২ লাখ টাকা।জেলায় অনেক প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের পাঁচটি মাদ্রাসা ও একটি কলেজসহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বন্যার ও করোনা পরিস্থিতির কারণে
বন্ধু পাঠদান বন্ধ রয়েছে।
অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে নওগাঁয় সাম্প্রতিক বন্যার পানিতে নিমজ্জিত হয়ে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হওয়ায় আর্থিকভাবে নিঃস্ব কৃষকরা। বন্যাপরবর্তী ক্ষতি পুষিয়ে নেয়ার জন্য নতুন করে জমিতে রোপণের জন্য আমন ধানের বীজ সংকট তীব্র আকার ধারণ করবে বলে ধারনা করছেন কৃষবিদরা। কৃষকদের মাঝে এক ধরনের হাহাকার বিরাজ করছে। আত্রাই ও ছোট যমুনা নদীর পানি হু হু করে বেড়ে চলেছে।আত্রাই ও রাণীনগর উপজেলার বেশ কিছু ইউনিয়নের বন্যাকবলিত হয়েছে। এটা রোপা আউশের মৌসুম ও আমনের বীজতলা তৈরির সময়। বন্যার পানিতে নিমজ্জিত থাকায় জেলার ১৩১ হেক্টর জমির রোপা আউশ ধান ও ৬৫ হেক্টর আমন ধানের চারা পচে কালো হয়ে যাবার সম্ভবনা রয়েছে । সরকারি হিসাব অনুযায়ী
এসব জমিতে রয়েছে ধান,বাদাম শাকসবজিসহ বিভিন্ন ধরনের ফসল। এই নিয়ে হাজারো কৃষক চরম বিপাকে পড়েছে। বন্যার পানি দ্রুত অপসারণ না হলে পরবর্তী ফসল ঘরে তোলা নিয়ে রয়েছে শঙ্কা।
কৃষকরা জানিয়েছে,অতি বৃষ্টিতে অসময়ে এই বন্যা আমাদের ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হবে বন্যায় পানি ফসলের জমিতে উঠায় শ্রমিক সংকট,আর অধিক টাকা গুনতে হচ্ছে কৃষকদের। ফসল ঘরে তুলতে যে পরিমান খরচ তাতে কৃষকেরা হতাশায় নিমগ্ন।
সরকারি হিসাব অনুযায়ী ক্ষয়ক্ষতির যে পরিমাণ এ পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়েছে তা সঠিক নয়। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরো বেশি।
© স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০২০ Developed By Agragami HOST