লাম্পি’ ভাইরাসে মারা গেল খামারীর প্রায় আড়াই লাখ টাকার দামের গাভী!

প্রকাশিত: ২:৩৩ অপরাহ্ণ, জুলাই ৭, ২০২০

লাম্পি’ ভাইরাসে মারা গেল খামারীর প্রায় আড়াই লাখ টাকার দামের গাভী!

জুলহাস উদ্দীন তেঁতুলিয়া উপজেলা প্রতিনিধিঃ

তেঁতুলিয়ায় গবাদীপশুর মধ্যে লাম্পি ভাইরাসে সংক্রমন যেন বেড়েই চলেছে। এ সংক্রমনে উপজেলার বেশ কিছু এলাকায় গরু আক্রান্ত হয়ে মারা যাবার খবর মিলেছে। গত সোমবার দুপুরে লাম্পি এ ভাইরাসে সংক্রমনে সাহেবজোত ডাঙ্গীবস্তি এলাকার তমিরুল হক নামের এক খামারীর মারা গেছে প্রায় আড়াই লাখ টাকার গাভী।তেঁতুলিয়া সাহেব জোত গ্রামের খামারী তমিরুল ইসলাম জানান, এই খামার দিয়ে চলে আমার সংসার। দুটি গরুর মধ্যে একটি মারা গেল। পনের দিন হলো বাচ্চা দিয়েছে। কয়েকদিন আগে গরুটি বিক্রয়ের কথা ভেবেছিলাম। গরুর দালালরা ২ লাখ ৩০ হাজার টাকা দাম করেছিল। দাম কম হওয়ায় বিক্রি না করলেও সেটাই মারা গেল বলেই হাউমাউ করে কাঁদতে থাকেন খামারী তমিরুল হক।

এছাড়া কয়েক জায়গায় লাম্পি ভাইরাসের সংক্রমনে গরু মারা যাওয়ার খবর শোনা গেছে। খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, গত এক সপ্তাহে উপজেলার সদর ইউনিয়নের সাহেবজোত, শালবাহান, দর্জিপাড়া, কানকাটা, শারিয়ালসহ বিভিন্ন গ্রামে সহস্রাধিক গরু ভাইরাসজনিত লাম্পি রোগে আক্রান্ত হয়েছে।

এতে করে গবাদিপশু নিয়ে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন স্থানীয় কৃষকরা। চিন্তিত হয়ে পড়েছেন এর চিকিৎসা নিয়ে। আগে এরকম রোগের পাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে এমনটি বলতে পারছেন না কৃষকরা। পরে আক্রান্ত গরু চিকিৎসারজন্য উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা রোগটি শনাক্ত করেন।

বেশ কয়েকজন কৃষকের সাথে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। কানকাটা গ্রামের কৃষক সিরাজুল ইসলাম দেওয়ান এ রোগের লক্ষণ বর্ণনা করে জানান, তার তিনটি গরু এ রোগে আক্রান্ত হয়েছে। প্রথমে গরু জ¦রে আক্রান্ত হয়।
জ্বরের সঙ্গে মুখ এবং নাক দিয়ে লালা আসে। শরীরের চামড়ায় গুটি বা পি- আকৃতির ক্ষত ধারণ করে। পুরো শরীরে
গুটিগুটি বসন্তের মতো দেখা যায়। আর ক্ষতগুলো ক্রমশ মুখ এবং পাসহ শরীরের নানা স্থানে ছড়িয়ে পড়ে। খেতেও পারছে না, হাটতেও পারছে না।

দর্জিপাড়া গ্রামের আলাউদ্দিন ও রইচ মিয়া জানান, তাদের নিজের তিনটি গরু এ রোগে আক্রান্ত হয়েছে।
পল্লী চিকিৎসক ডেকে এনে ভ্যাকসিন দিয়েছেন ও ওষুধ কিনে গরুকে খাইয়েছেন। এতে অনেকের দুই-তিন
হাজার টাকা পর্যন্ত খরচও হয়েছে।

শালবাহান ইউনিয়নের আরেক কৃষক নাজমুল হক জানান, এই রোগে আক্রান্ত হলে প্রথমে গরুর শরীরের বিভিন্ন
স্থান ফুলে গুটি হতে দেখতে পাই। এর সঙ্গে গরুর শরীরের তাপমাত্রা (জ্বর) বেড়ে যায়। দু-তিন দিনের মধ্যে গুটিগুলো ফেটে কষ (রস) ঝরে। আক্রান্ত গরু মুখে কোনো খাবার নিতে চায় না। এক পর্যায়ে গরুগুলো মারাত্মক দুর্বল হয়ে দাঁড়িয়ে থাকার শক্তি হারিয়ে ফেলে।

এদিকে এ রোগের পাদুর্ভাব দেখা দিলে বাজারে ঔষুধ পাওয়া যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন কৃষকরা। পেলেও সে
ঔষুধের দ্বিগুণ থেকে তিনগুণ দাম নেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন। এ বিষয়ে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা.কাজী মাহবুবুর রহমানের সাথে কথা হলে তিনি জানান, রোগটি লাম্পি স্কিন ডিজিজ (এলএসডি) ভাইরাস নামে পরিচিত। এটি চর্মরোগ। এ রোগে আক্রান্ত হয়ে তেমন একটা গরু মারা যায় না। তবে এন্টিবায়েটিক ঔষুধ নিয়ম না জেনে খাওয়ালে ক্ষতি করতে পারে। যদিও এ রোগের প্রতিষেধক এখনো তৈরি হয়নি।

তবে চিকিৎসকের নির্দেশনা মতো আক্রান্ত গরু চিকিৎসা নিলে দুই-তিন সপ্তাহের মধ্যে ভালো হয়ে যায়। আর লাম্পি রোগ নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। এজন্য আক্রান্ত গবাদিপশুর চিকিৎসার জন্য প্রাণিসম্পদ কার্যালয় হতে উপজেলায় দুই হাজারেরও বেশি ভ্যাক্সিন সরবরাহ করা হয়েছে। উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় আমরা ক্যাম্পেইন করছি, সচেতনতায় লিফলেট বিতরণ করছি।।


মুজিব বর্ষ

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

Pin It on Pinterest