লালপুরে পুকুর মালিকদের দখলে বসন্তপুর বিলে খাল, পানি নিষ্কাশনে পাকা সড়ক কেটেছে পানি বন্দীরা

প্রকাশিত: ১০:২৭ অপরাহ্ণ, জুলাই ২৩, ২০২০

লালপুরে পুকুর মালিকদের দখলে বসন্তপুর বিলে খাল, পানি নিষ্কাশনে পাকা সড়ক কেটেছে পানি বন্দীরা

এস ইসলাম, লালপুর (নাটোর) প্রতিনিধিঃ

বন্যার পানিতে নয়, উপর্যুপরি বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় পানি বন্দী হয়ে পড়েছে নাটোরের লালপুর উপজেলার দুড়দুড়িয়া ইউনিয়নের ৯টি গ্রামের প্রায় ৩ হাজার পরিবার। সেই সাথে প্রায় ৫ শত হেক্টর জমি হয়েছে অনাবাদি।

নাটোরের লালপুর উপজেলার দুড়দুড়িয়া ইউনিয়নের বসন্তপুর বিলের সৃষ্ট জলাবদ্ধতার কারনে আট্টিকা, বেরিলাবাড়ী, গন্ডবিল, মনিহারপুর, জেতগৌরী, বসন্তপুর, ওমরপুর, মির্জাপুর, ও রাধাকৃষ্টপুর গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ পানি বন্দি হয়ে চরম দুর্ভোগে জীবনযাপন করছেন। বৃষ্টির জলাবদ্ধতা নিষ্কাশন ও কৃষকদের সুবিধার লক্ষ্যে বিলের মধ্য দিয়ে সরকারি বরাদ্দ হতে কর্তনকৃত খালটি কতিপয় লোভী পুকুর মালিকরা বন্ধ করে দেওয়ায় এ ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে বলে জানিয়েছে এলাকাবাসী।

সাময়িক পানি বন্দি দশা থেকে বাঁচতে স্থানীয় লোকজন আট্টিকা-গন্ডবিল পাকা রাস্তা কেটে পানি বের করে দেওয়ার ব্যবস্থা করলেও, এতে পানি বন্দী মানুষদের দুর্দশা লাঘবে কোন কাজে আসছে না। এতে খালটি পুনঃ খনন ছাড়া এ ভোগান্তি থেকে রক্ষা পাওয়ার বিকল্প কোন পথ নেই।

সরেজমিন ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ১৯৯৪-৯৫ সালের দিকে দুড়দুড়িয়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আজিজুল আলম মক্কেল খালটি খননের উদ্যোগ নেন। পরবর্তীতে তারই নের্তৃত্বে খাল বন্ধ করে শুরু হয় পুকুর খনন। অন্যান্যরাও পুকুর খননে উৎসাহিত হয়ে পর্যায়ক্রমে পুরো খালটি পুকুর মালিকদের দ্বারা বন্ধ হয়ে যায়। আর এর ফলে পানি নিষ্কাশন না হওয়ায় শত শত হেক্টর জমি অনাবাদি হওয়ার পাশাপাশি জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়।

স্থানীয় ভুক্তভোগী মানুষের অভিযোগের প্রেক্ষিতে লালপুর ও বাঘা উপজেলার উপজেলা চেয়ারম্যান, ইউএনও এবং দুড়দুড়িয়া ইউনিয়ন ও বাজুবাঘা ইউনিয়ন চেয়ারম্যানের উপস্থিতিতে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশের সিদ্ধান্তনুযায়ী একটি কমিটির অধীনে সার্ভেয়ারের মাধ্যমে খালটি পুনঃ খননের উদ্যোগ নেয়া হয়। গত (১১ মার্চ ) সার্ভেয়ারসহ উক্ত কমিটি সভার আয়োজন করলে পুকুর মালিকরা সভা স্থলে হাঙ্গামার সৃষ্টি করে খাল খনন বন্ধ করে দেয়।

সস্প্রতি পানি বন্দী মানুষদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে বুধবার (২২ জুলাই) বিকেলে লালপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার উম্মুল বানীন দ্যুতি সরেজমিন পানি বন্দী —এলাকা সমূহ পরিদর্শন করেন। এ সময় পানি বন্দী মানুষরা তাদের দুর্দশার কারন থেকে মুক্তি পেতে আবারও খালটি পুনঃ খননের আবেদন করেন।

এ বিষয়ে বসন্তপুর বিলের জলাবদ্ধতা নিরসন কমিটির সাধারন সম্পাদক হীরেন্দ্রনাথ মন্ডল জানান, চেয়ারম্যান থাকা অবস্থায় খাল খনন করেন আজিজুল আলম মক্বেল। অথচ পরবর্তীতে নিজে ও ছেলেদের দিয়ে পুকুর কেটে খাল বন্ধ করে দেন। এতে হাজার-হাজার মানুষ দুর্ভোগে পড়ে। এখন খাল পুনঃ খননে সহযোগিতা না করে তিনিই বাধা সৃষ্টি করছেন। যার ফলে আমরা পানি বন্দী হয়ে পড়েছি। প্রশাসনকে বার বার অবহিত করেছি, এখনো কোন সুরাহা মেলেনি।

এব্যাপারে দুড়দুড়িয়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আজিজুল আলম মক্বেল জানান আমার পুকুরের কারণে যদি মানুষ পানি বন্দী হয়ে যায় তাহলে পানি বের করার ব্যাপারে আমার সার্বিক সহযোগিতা থাকবে।

লালপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার উম্মুল বানীন দ্যুতি জানান, পানি নিষ্কাশনের জন্য পাকা রাস্তা কাটা ঠিক হয়নি। খাল খনন ছাড়া এ দুর্ভোগ লাঘব সম্ভব নয়। খাল দখলকৃত পুকুর মালিকদের তালিকা দেখে, জনদুর্ভোগ লাঘবে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


মুজিব বর্ষ

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

Pin It on Pinterest