সুনামগঞ্জ শহরে অনিয়ন্ত্রিত ট্রাক ও ট্রাক্টর সড়ক নিরাপত্তা হুমকির মুখে

প্রকাশিত: ১:১২ পূর্বাহ্ণ, ডিসেম্বর ১১, ২০১৯

সুনামগঞ্জ শহরে অনিয়ন্ত্রিত ট্রাক ও ট্রাক্টর সড়ক নিরাপত্তা হুমকির মুখে
শামসুল কাদির মিছবাহ:: সুনামগঞ্জ পৌর শহরে ট্রাক ও ট্রাক্টরের অবাধ চলাচল ও বেপরোয়া গতিতে অতিষ্ট পথচারীসহ সাধারণ মানুষ। কৃষিকাজে ব্যবহারের জন্য তৈরি ট্রাক্টর বিভিন্ন মালামাল পরিবহন করে প্রায়ই ঢুকে পড়ে শহরের বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায়। আর শহরের মূল সড়কে ট্রাক চলাচলে নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দেয়া হলেও তা মানছেন না ট্রাক চালকরা। এতে করে সড়ক নিরাপত্তা রয়েছে হুমকির মুখে। বাড়ছে পথচারী নারী, শিশু ও বৃদ্ধদের দুর্ঘটনার ঝুঁকি। পৌর শহরে এসব মালবাহী পরিবহন সকাল ৮ টা থেকে রাত ৮ টা পর্যন্ত চলাচলে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও তা আমলে নিচ্ছেন না ট্রাক চালকরা। দিনরাত অবাধে চলাচল করছে শহরের প্রতিটি পাড়া-মহল্লার সরু রাস্তা পর্যন্ত। এসব অবৈধ যানবাহন শহরের ভেতরে অবাধে চলাচল করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন পথচারীসহ সাধারণ পৌর নাগরিকবৃন্দ। এব্যাপারে কথা হয় জাতীয় শ্রমিক লীগ সুনামগঞ্জ জেলা শাখার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রাসেল চৌধুরীর সাথে। তিনি ক্ষোভের সাথে জানান, আমি বিগত ৩ বছর যাবৎ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি আন্দোলন বা প্রতিবাদস্বরূপ এই ট্রাক্টরের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে যাচ্ছি। এবং আমি বিভিন্ন সময়ে পৌর মেয়র মহোদয়ের সমন্বয়ে বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা মিটিংয়ে বক্তব্য দেওয়ার পরও পুলিশ প্রশাসনের চোখের সামনে একটি জেলা শহরে কিভাবে অবাধে লাইসেন্স বিহীন ট্রাক্টর চলছে তা বোধগম্য নয়। রাসেল চৌধুরী আরো বলেন, এসব দ্রুতগতির ট্রাক ও ট্রাক্টর চলার কারণে শহরের কোমলমতি শিক্ষার্থীরা স্কুলে যেতে ভয় পায়। আমরা অভিভাবকরাও বাচ্চাদের সড়ক নিরাপত্ত্বাহীনতায় উদ্বিগ্ন থাকি। কথা হয় পৌর শহরের বাঁধনপাড়া এলাকার সমাজকর্মী নাজমুল হকের সঙ্গে। তিনি বলেন, আমাদের পাড়ায় প্রতিনিয়তই ট্রাক্টর চলাচল করে। যদিও এসব ক্ষেতখামারে চলার কথা। এতে করে আমাদের সড়কের নিরাপত্তা ঝুঁকি বেড়ে যায় জানিয়ে নাজমুল হক বলেন, সেদিন সকালে সাতটার দিকে আমার সাত মাস বয়সী বাচ্চাকে নিয়ে বাসার সামনের রাস্তায় বসে রোদ পোহাচ্ছিলাম। হটাৎ আমার বাচ্চাটি ভয়ে চিৎকার করে আমাকে জড়িয়ে ধরে। চেয়ে দেখি একটি ট্রাক্টর বিকট শব্দে রাস্তা দিয়ে দ্রুত গতিতে চলে যাচ্ছে। জেলা জাসদের সাধারণ সম্পাদক সালেহীন চৌধুরী শুভ বলেন, ট্রাক চলাচলে শহরের রাস্তাঘাট দুর্বল হয় এবং খানাখন্দ তৈরি হয়। শহরে ট্রাক ও ট্রাক্টর চলার কারণে পথচারী নারী, শিশু এবং বৃদ্ধ লোকদের দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ে। অনুমোদনহীন এসব যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করা জরুরী বলে আমি মনে করি। আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল হাই জায়গীরদার রাজ বলেন, টাউন সেন্টারে এমনিতেই মানুষের ভিড় বেশি থাকে। ট্রাক ও ট্রাক্টর চলাচলের কারণে যানজটে বাড়তি চাপ সৃষ্টি করে। এতে করে শহরের বিপণি বিতাণগুলোতে আসা ক্রেতাদের দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ে। তাছাড়া স্কুল, কলেজগামী শিক্ষার্থীসহ অফিস আদালতগামী কর্মব্যস্ত মানুষের চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়। ট্রাফিক ইন্সপেক্টর (টি আই এডমিন) মো. শামসুল আলম বলেন, ট্রাক ও ট্রাক্টর শহরের ভেতরে চলে না, এগুলো শহরের বাইরে চলে। শহরে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজের জন্য এগুলো মাঝেমধ্যে আসে। শহরের বিভিন্ন পাড়া-মহল্লার সরু রাস্তায় প্রতিনিয়তই এসব যান চলালের অভিযোগ পাওয়া গেছে, এমন প্রশ্নের জবাবে ট্রাফিক ইন্সপেক্টর (টি আই এডমিন) মো. শামসুল আলম বলেন, পাড়া-মহল্লায় এসব চলার প্রশ্নই আসে না। আমাদের নজরে আসলে তাৎক্ষণিক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করি। সুনামগঞ্জ সদর থানার ওসি মো. শহিদুর রহমান বলেন, শহরে যারা অবৈধভাবে ট্রাক চালায়, আমরা তাদেরকে ডেকে এনে নিষেধ করে দিবো, যাতে এসব যান শহরের ভেতরে না চালায়। নিষেধ না মানলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যাবস্থা গ্রহণ করা হবে। পৌর মেয়র নাদের বখত বলেন, শহরে ট্রাক ও ট্রাক্টর চলাচলের অনুমোদন পৌরসভা দেয় না। তবে ভুক্তভোগী জনগণের সাথে একাত্মতা পোষণ করে আমিও চাই এসব অনুমোদনহী মালবাহী যানবাহন শহরে নির্দিষ্ট একটা সময়ে চলুক। ট্রাক মূল সড়কে রাত ৮টা থেকে ভোর পর্যন্ত চলতে পারে। তাছাড়া ট্রাক্টর শহরের ভেতরে চলার কোনো সুযোগই নেই। শহরে মালামাল বহনের জন্য ট্রাক্টর তৈরি হয়নি। ট্রাক্টর মূলত তৈরি হয়েছে কৃষি কাজের জন্য। শহরের যানজট নিরসনসহ নিরাপদ সড়কের লক্ষে পুলিশ প্রশাসন তৎপরতা বাড়ালে এই সমস্যার একটা প্রতিকার হবে বলে আমি মনে করি।

মুজিব বর্ষ

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

Pin It on Pinterest