খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ৪০জনের চাল আত্মসাতের অভিযাগ, কুড়িগ্রামে মেম্বারের বিরুদ্ধে

প্রকাশিত: ৯:৩৫ পূর্বাহ্ণ, অক্টোবর ৮, ২০২০

খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ৪০জনের চাল আত্মসাতের অভিযাগ, কুড়িগ্রামে মেম্বারের বিরুদ্ধে

সাইফুর রহমান শামীম,কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি :
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের মেম্বার ছামছুল হকের বিরুদ্ধে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় রেশন কার্ডের চাল হরিলুটের বিস্তর অভিযোগ উঠেছে। ২০১৬ সাল থেকে ৪০জন কার্ডধারীর ৩০ কেজি করে ১৭দফা চাল আত্মসাৎ করে ৭লক্ষ ৩৪ হাজার টাকা লোপাট করার অভিযাগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে। এছাড়াও দুজন মৃতের নামও চাল উত্তালন কর আসছেন তিনি। শুধু তাই নয় তার কার্ডধারীর মধ্যে রয়েছে তার স্ত্রী, দুই ছেলে, নিজের ভাই, চাচা, চাচী ও চাচাতো ভাইসহ আপন পরিবারের ২০জন সদস্য।
জেলা প্রশাসক ও উপজলা নির্বাহী কর্মকর্তা সহ একাধিক দপ্তরে অভিযাগ সূত্র জানা যায়, যাত্রাপুর ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডর মেম্বার ছামছুল হকের নাম ওই ওয়ার্ডের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় ১৮৮জনের নামে রেশন কার্ডের বরাদ্দ আসে। এর মধ্যে অনেকের কার্ড সুকৌশল আত্মসাৎ করেন ওই মম্বার। গ্রামর সাধারণ মানুষ মেম্বারর এই অপকৌশল এতদিন ধরে জানতেই পারেননি। তিনি ২০১৬ সালের ২১ অক্টোবর থেকে ২০২০ সালের ৫ অক্টোবর পর্যন্ত ৪০ জনের নামে বরাদ্দকৃত কার্ড গোপন করে তাদের নামে আসা চাল অন্যদের মাধ্যমে আত্মসাৎ করে আসছিলেন। সরকার অনলাইনে কার্ড প্রেরণের পদ্ধতি চালু করায় বেড়িয়ে আসতে শুরু করে অনিয়মের পাহাড়।

তথ্যমতে, প্রতিজন ৩০ কেজি হিসাবে ৪০টি কার্ড একদফা চাল ওঠে ১হাজার ২শ’ কজি। এই হিসাবে ১৭ দফায় চাল উত্তালন করা হয় ২০ হাজার ৪শ’ কজি। সরকারি দর প্রতি কেজি ৩৬ টাকা হিসাবে মূল্য দাঁড়ায় ৭ লক্ষ ৩৪ হাজার ৪শ’ টাকা।
ওই ওয়ার্ডর ১৩২ নং কার্ডধারী মৃত: জাবেদ আলীর মৃত: স্ত্রী আলেয়া ও ফারাজিপাড়ার মৃত: আসম উল্যাহর মৃত: পূত্র শাহাবুদ্দিনের নামে কার্ড বরাদ্দ করা সই জাল করে চাল ২০১৬ সাল থেকে আত্মসাৎ করে আসছেন।
এছাড়াও তার পরিবারের ২০জন সদস্যর নামে তিনি কার্ড ইস্যু করেছেন। তালিকায় ৯৩ নং কার্ডধারী তার স্ত্রী সাহেরা, ১১৮নং পূত্র সাহাদুল, ১৩১ নং পূত্র সাইদুল, ৪৭নং কার্ডধারী আপন ভাই কাজি মন্ডল, ১১৮ ও ৬৮ নং কার্ডধারী কাজি মন্ডলর দু’পূত্র মাইদুল ও দুলাল মিয়া, ১২৯, ৭২ ও ১৫৩ নং কার্ডধারী চাচাতা ভাই মজিবর, সেকেনদার ও মজিদ, ৭৩ নং কার্ডধারী তাদের মা ছকিনা। ১৫২ ও ১৩৪ কার্ডধারী তার চাচা গনি মন্ডল ও চাচী আম্বিয়া। এভাবে ২০জন পারিবারিক সদস্যদের নামে কার্ড ইস্যু করেছেন তিনি।
অভিযাগকারী মজিবর রহমান জানান, অনলাইন সিস্টাম না হলে আমরা জানতেই পারতাম না আমাদর নামে কার্ড ইস্যু হয়েছে এবং সে কার্ড মেম্বার তার লোক দিয়ে উত্তালন করে আত্নসাত করছেন। আমরা এর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।

১৭৬নং কার্ডধারী মমিনা বেগম ও ৫১ নং কার্ডধারী আমিন উদ্দিন জানান, আমরা করোনাকালিন আর বন্যার সময় অনেক কসেট ছিলাম। অথচ সরকার আমাদের নামে কার্ড বরাদ্দ দিলেও ছামছুল হক মেম্বার সেসব কার্ড গোপন করে ২০১৬ সাল থেকে চাল আত্মসাৎ করে খেয়েছেন। আমরা আমাদের নামে বরাদ্দকৃত চাল ফেরৎ চাই। সেই সাথে মেম্বারর উপযুক্ত বিচার চাই।
এ ব্যাপার কার্ডধারীরা তাদের নামে বরাদ্দকৃত চাল বিতরণের একটি মাস্টাররোল কুড়িগ্রাম প্রেসক্লাবে জমা দিয়েছেন। সেখান ১৫ জনের নামে স্বাক্ষর দিয়ে চাল উত্তালন দেখানো হলেও সেই ১৫জন সাংবাদিকদের কাছে এসে জানান তারা একবারও চাল পাননি। ছামছুল মেম্বার তাদের নামে আসা চাল ২০১৬ সাল থেকে আত্মসাৎ করে আসছেন।

বিষয়টি নিয় ডিলার সাইফুর রহমান জানান, এই ওয়ার্ডের অনেক কার্ডধারী নিজে চাল নিতে আসেন না। তারা ছেলে মেয়ে বা আত্মীয়র নাম বলে কার্ড নিয় আসে। আমি চাল দিতে গড়িমশি করলে, মেম্বার শামছুল হক তাদরকে চাল দিতে সুপারিশ করে। কার্ডে ছবি না থাকায় নিয়মের বাহিরে হয় বলে তিনি স্বীকার করেন। অনলাইন সিস্টাম চালু হওয়ায় সেপ্টম্বর মাস থেকে এখনও ২৩টি কার্ডের চাল এখনো কেউ গ্রহন করতে আসনি।

এ ব্যাপার ছামছুল হক মেম্বার তার বিরুদ্ধে আণিত অভিযাগ অস্বীকার করে বলেন, কার্ড ইস্যু করার বিষয়টি চেয়ারম্যানর এখতিয়ার। কার নাম কার্ড হয়েছে। কারা চাল তুলে খাচ্ছে সব কিছু আমার জানা নেই। আমার বিরুদ্ধে বিপক্ষ দল আমাকে হেয় করার জন্য মিথ্যা অভিযাগ করেছে। আমার ছেলেরা কার্ডের উপযুক্ত জন্য কার্ড দিয়েছি। তবে স্ত্রী’র নামে কার্ড করাটা ভুল হয়েছে। মৃত: শাহাবুদ্দিনের কার্ডের চাল তার পূত্র শাহাদতকে দেয়া হচ্ছে। আর মৃত: আলেয়ার কার্ডের চাল দেয়া হচ্ছে প্রতিবশী ছালহা বেগমকে। আর এসব কিছুই করা হচ্ছে চেয়ারম্যানর সম্মতিতে।

এ ব্যাপার যাত্রাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আইয়ুব আলী সরকার জানান, অভিযোগের বিষয়টি শুনেছি। তার বিরুদ্ধ তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার আবদেন করেছে ভুক্তভোগীরা। তদন্ত হলে সত্যতা বেরিয়ে আসবে। তবে তিনি নিজের সম্পৃক্ততার কথা অস্বীকার করেন।
কুড়িগ্রাম সদর উপজলা নির্বাহী অফিসার নিলুফা ইয়াছমিন অভিযোগ বিষয় জানান, আমি কেবলমাত্র অভিযাগটি হাতে পেয়েছি। একটু খোজখবর নেই, যাচাই করি তারপর সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।


alokito tv

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

Pin It on Pinterest