শরীরে অক্সিজেন সিলিন্ডার বেঁধে মাকে নিয়ে হসপিটালে সন্তান ll

প্রকাশিত: ১২:৫৩ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ১৮, ২০২১

শরীরে অক্সিজেন সিলিন্ডার বেঁধে মাকে নিয়ে হসপিটালে সন্তান ll

নিজস্ব প্রতিবেদক: গতকাল শনিবার বরিশাল-পটুয়াখালী মহাসড়কের একটি ছবি ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। একই সঙ্গে সেখানে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্য ভাসছেন প্রশংসায়।

ওই ছবিতে দেখা গেছে, একজন মোটরসাইকেল চালক একটি অক্সিজেন সিলিন্ডার নিজের শরীরের সঙ্গে বেঁধে বয়স্ক এক নারী আরোহীর মুখে অক্সিজেন মাস্ক লাগিয়ে দ্রুত গতিতে ছুটছেন হাসপাতালের দিকে। সঙ্গে আরেকটি মোটরসাইকেলে ছিলেন আরও দুজন আরোহী।

বিকেল ৩টার দিকে বরিশাল-পটুয়াখালী মহাসড়কের বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় লাগোয়া হিরন পয়েন্ট নামক স্থানে এই দৃশ্য ধরা পড়ে। সেখানে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্য সার্জেন্ট তৌহিদ টুটুল জানান, রোগী নিজেই বসে ছিলেন অক্সিজেন সিলিন্ডার বহনকারী মোটরসাইকেল আরোহীকে ধরে। যিনি মোটরসাইকেল চালাচ্ছিলেন তিনি হেলমেট পরা ছিলেন। তাঁর চেহারা আমরা দেখতে পারিনি বা দেখার চেষ্টাও করিনি। তাদের থামিয়ে হয়তো পরিচয় শনাক্ত করতে পারতাম, কিন্তু সেটি হতো অমানবিকতা।

পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, অক্সিজেন মাস্ক পরা যে নারী ছিলেন তাঁর বয়স দেখে মনে হয়েছে মোটরসাইকেল আরোহীর মা হতে পারেন। আমরা নিয়মিত দায়িত্ব পালন করছিলাম। তখন পটুয়াখালী-বরিশাল মহাসড়কের বাকেরগঞ্জ উপজেলার দিক থেকে মোটরসাইকেলটি আসছিল। প্রথমে মোটরসাইকেলটিকে থামানোর সিগন্যাল দেই, কিন্তু যখনই দেখি মোটরসাইকেলে অক্সিজেন সিলিন্ডার ও অক্সিজেন মাস্ক পরে রোগী যাচ্ছেন তখন এক সেকেন্ডের জন্যও মোটরসাইকেলটি থামাইনি। বরং দ্রুত যেন চলে যায় সে ব্যবস্থা করে দেই।

তৌহিদ টুটুল বলেন, রোগীবাহী মোটরসাইকেলটির পাশে আরেকটি মোটরসাইকেল ছিল, সেটিও তাদের স্বজনদের। মূলত রোগী যেন পড়ে না যান সেজন্য তারা পাশাপাশি চালিয়ে আসছিলেন। আমরা চেকপোস্ট অতিক্রম করিয়ে দিলে মোটরসাইকেল দুটো দ্রুত বরিশাল শহরের দিকে চলে যায়।

এই ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ায় অনেকেই চেকপোস্টে দায়িত্বপালনকারী সার্জেন্ট টুটুলের প্রশংসা করেন।

ওদিকে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রোগীর নাম রেহানা পারভীন (৫০), তিনি ঝালকাঠির নলছিটি বন্দর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। তাঁর স্বামীর নাম বীর মুক্তিযোদ্ধা মরহুম আবদুল হাকিম মোল্লা। গ্রামের বাড়ি নলছিঠির সূর্যপাশা গ্রামে। মোটরসাইকেল চালাচ্ছিলেন তাঁর ছেলে জিয়াউল হাসান টিটু।

গত বুধবার রেহানা পারভীনের করোনা পজিটিভ রিপোর্ট আসে। এরপর বাড়িতেই চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। শনিবার সকাল থেকে শ্বাসকষ্ট বেড়ে গেলে দুপুর আড়াইটায় তাঁর মেজ ছেলে জিয়াউল হাসান টিটু মাকে মোটরসাইকেলে বসিয়ে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন।

টিটু ঝালকাঠি সদরের কৃষি ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার। তাঁর বড় ভাই মেহেদী হাসান মিঠু পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই)। তিনি বর্তমানে করোনা ওয়ার্ডে চিকিৎসা নিচ্ছেন।


মুজিব বর্ষ

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

Pin It on Pinterest