কুড়িগ্রামের উলিপুরে ভিক্ষার টাকা নিয়েও ভাতা কার্ড দেয়নি মেম্বার

প্রকাশিত: ৫:৪৬ অপরাহ্ণ, জুলাই ২৫, ২০২১

কুড়িগ্রামের উলিপুরে ভিক্ষার টাকা নিয়েও ভাতা কার্ড দেয়নি মেম্বার

সাইফুর রহমান শামীম ,কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি :

শৈশব টা ভালই কাটছিল। বাবা-মার আদরের একটুও কমতি ছিল না রাবেয়ার। পরিবারের পছন্দ মত বিয়েও হয় তার। স্বামীর সংসার অভাব অনটন থাকলেও দাম্পত্য জীবন সুখের ছিল। এরই মধ্যে একটি পুত্র ও কন্যা সন্তানের মা হন তিনি। একসময় স্বামী সন্তান নিয়ে বাবার বাড়িতে বেড়াতে আসেন। এরপরই বিপত্তি ঘটে তার জীবনে। বাবার বাড়ি থেকে স্বামী সন্তান নিয়ে দিনাজপুর শ্বশুর বাড়ি যাওয়ার পথে স্বামী খোজি মোল্লা ৭ বছর বয়সী পুত্র সন্তান আলী হোসেনকে নিয়ে লাপাত্তা হন। অনেক খোজাখুজির পর আজও তাদের সন্ধান পাননি রাবেয়া বেগম। এখনও পথের পানে চেয়ে থাকেন নাড়ী ছেড়া ধন আলী হোসেনের জন্য।

রাবেয়া বেগম (৬৭) কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের ভেলুর খামারের আব্দুল্লাহর মেয়ে। কয়েক বছর আগে একমাত্র মেয়ে রাশেদা বেগম বিয়ে করে শ্বশুর বাড়ি চলে যায়। বাবা মা মারা যাওয়ার পর ভাইদের অভাবের সংসার ছাড়তে বাধ্য হন রাবেয়া। এরপর ঠাই হয় একই গ্রামের জনৈক আবুল কালামের বাঁশঝাড়। এলাকাবাসীর সহায়তায় কয়েকটি টিনের একটি ছোট ঘরে প্রায় ৮ বছর ধরে খেয়ে না খেয়ে দিন কাটছে তার। বয়সের ভারে ঠিকমত চলতেও পারেন না।

স্থানীয়দের অভিযোগ, সরকার উলিপুর উপজেলায় শতভাগ বয়স্ক ভাতা নিশ্চিত করলেও রাবেয়া বেগমকে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনির আওতায় আনতে চার হাজার টাকা দাবি করেন ৭ নং ওয়ার্ড ইউপি সদস্য রফিকুল ইসলাম। গত এক বছর পূর্বে ভিক্ষা করে দাবিকৃত টাকা পরিশোধ করলেও ভাতার কার্ড পাননি তিনি।

সাংবাদিকের সাথে কথা হয় রাবেয়া বেগমের । তিনি আবগাপ্লুত হয় বলেন, মোর ভাতা আর কখন হইবে। বাচি থাকতে যদি না হয়, তা হইলে মরার পর হইবে। মোর কাইও নাই বা। ২৫ বছর আগে মোর বাপক (সন্তান) নিয়ে মোর স্বামী পলাইছে। কত খুঁজিছং, তবুও মার বাপক (সÍান) পাং নাই। আল্লাহ্ যদি মোর ছাওয়াটাক ফিরি দিলে হয়। অশ্রুসজল চোখে তিনি আরো বলেন, আগে শরীলত (শরীর) বল (শক্তি) আছিল (ছিল) মানুষের বাড়িতে যায়া খুঁজি খাছনু (খাইছিলাম)। এখন হাটপরও পাংনা, খাবারও পাংনা। কাইও দয়া করি দিলে খাং, না দিলে অনাহারি(অভুক্ত) থাকং। মোর বাপ (সন্তান) থাকলে সে খাওয়াইল হয়। আজ তোমরা গুলো আসছেন, তোমরায় মোর বাপ হন। মুই দোয়া করং আল্লাহ্ তোমাক মেলা (দিন) বাঁচি থুউক। এভাবে বলতে বলতে অঝোড়ে কেঁদে ফেলেন রাবেয়া বেগম। এসময় সেখানে এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়।

ইউপি সদস্য রফিকুল ইসলামের সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি টাকা নেয়ার কথা অস্বীকার করে বলেন, তার ভাতা এখনো হয়নি।

উপজেলা সমাজসেবা অফিসার মশিউর রহমান বলেন, ভাতা কার্ড করতে কোন টাকা লাগে না। রাবেয়া বেগমের কাছ থেকে যদি কেউ টাকা নিয়ে থাকে, তাহলে সেটি নিতান্তই ঘৃণিত। এ বিষয় খোজখবর নিয়ে যত দ্রুত সম্ভব তাকে ভাতা কার্ডের আওতায় আনা হবে।


মুজিব বর্ষ

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

Pin It on Pinterest