দেওয়ানগঞ্জে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া ঘর বিতরণে নয় ছয় l

প্রকাশিত: ৮:৫৪ অপরাহ্ণ, আগস্ট ৪, ২০২১

দেওয়ানগঞ্জে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া ঘর বিতরণে নয় ছয় l

দেওয়ানগঞ্জ (জামালপুর) প্রতিনিধিঃ জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার ডাংধরা ইউনিয়নের বাঘারচরে মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে ভুমিহীন ও গৃহহীনদের মাঝে প্রধানমন্ত্রীর উপহার ঘর বিতরণ করা হয় । ঘর মালিকদের দলিল অনুযায়ী চাবি ও ঘর হস্তান্তর করার কথা থাকলেও করতৃত্বের সুযোগ পুঁজি করে রুজির ধান্দা চালিয়েছেন একটি কুচক্রী মহল। গত ৩ আগস্ট উপকার ভোগী সোহরাব ও তার স্ত্রী দলিল এবং ঘরের চাবি চাহিলে অস্বীকার করেন ডাংধরা ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা মোঃ মমিনুল ইসলাম। ঐ দিন বিকালে ডাংধরা ইউনিয়নের মহিলা সদস্য সাহারা খাতুনকে সঙ্গে নিয়ে ঘর দেখতে গেলে দেখা যায় ৫৩ নম্বর ঘরে বাঘারচর ব্যাপারি পাড়ার কদম আলীর স্ত্রী ফুলেরা বেগম ও তার মেয়ে সুলতানা বেগম অবস্থান করছেন এবং সোহরাব জামেলা দম্পতির দলিল ফুলেরার কাছে রয়েছে।

এসময় ইউপি সদস্য সাহারা খাতুনের সামনেই কদম আলীর স্ত্রী ফুলেরা বেগম ও মেয়ে সুলতানা বেগম সোহরাবের স্ত্রী জামেলা বেগমকে পিটিয়ে আহত করে দলিল নিয়ে পালিয়ে যায়। খবর লেখা পর্যন্ত কদম আলীর স্ত্রী ও কন্যা পলাতক রয়েছে। প্রত্যক্ষদোর্শীরা জানান, ডাংধরা ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডে মেম্বার মোঃ রাহিত হাসান রোমান ও নায়েব মোমিনুল ইসলামের যোগ সাজেসে এলাকার একটি কুচক্রী মহল টাকার বিনিময়ে অন্য লোকদের ঘরে উঠিয়েছে এবং বেশ ক,টি দলিল তাদের হাতে গোপন রেখেছে। জন প্রতিনিধি সাহারা খাতুন জানান- আমি বার বার নায়েবকে দলিলের কথা জিজ্ঞেস করলে বলেছেন সোহরাবের দলিল বাতিল হয়েছে, অথচ আমি নিজে এসে দলিল কদম আলীর স্ত্রী ফুলেরা বেগমের কাছে পেলাম এবং সেই ৫৩ নম্বর ঘরে তাদের অবস্থান করতে দেখা যায়। এগুলো স্থানীয় ইউপি সদস্য রোমান মেম্বার দিয়েছে। ১৬ নম্বর ঘরের মালিক হালিমা ও সায়মা জানান- আমরা দেখতে পাই সোহরাবের স্ত্রী কে মারপিট করে দলিল ছিনিয়ে নেয় কদম আলীর স্ত্রী ও মেয়ে। ৫নং ওয়ার্ডের মেম্বার মোঃ আয়নাল হক বলেন- খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে আসি, এসে শুনলাম মুল মালিককে অবৈধ ভাবে মারপিট করেছে কদম আলীর স্ত্রী ও মেয়ে, আমরা আহত ব্যক্তিকে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাচ্ছি। আর রোমান মেম্বার যে কাজটি করেছে এটা কখনো কাম্য নয়, দলিল বিতরণ ও দখল দেবে নায়েব সাহেব, রোমান মেম্বার কেন?

ঘটনাস্থলে বাঘারচর টেংরা মারীর মৃত আজিমুদ্দিনের স্ত্রী নসি খাতুন নামে বৃদ্ধা বলেন- রোমান মেম্বার ঘর দেওয়ার কথা কয়ে আমার কাছে থেকে ৮ হাজার টাকা ও আমার মেয়ে আমেনার কাছ থেকে ৪ হাজার টাকা নিছে কিন্তু আমারে ঘর দেয় নাই।

এদিকে ৬২ নম্বর ঘরের দলিল নিয়ে ঘুরতে দেখা যায় মৃত আয়নাল হকের স্ত্রী ওমেছা নামে বৃদ্ধা কে, তিনি এখন পর্যন্ত ঘর পাননি। তার ৬২ নম্বর ঘর দখল করে আছে নবাই সেখের ছেলে মোস্তফা ও তার স্ত্রী, তাদের দলিলে লেখা আছে ৬৪ নম্বর ঘর। আবার ৬৪ নম্বর ঘরে দখল নিয়েছে হযরত আলীর পুত্র কলম মিয়া, সেখানে ঘরে তালা ঝোলানো দেখা গেছে। মোস্তফার স্ত্রী জানান রোমান মেম্বার আমাদের এই ঘরে উঠিয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক লোক জানান- বাঘারচর ব্যাপারি পাড়ার আনু মিয়ার ছেলে শামসুল, আফসার, ও মেয়ে আন্না খাতুন সহ একই পরিবারের ৫ জন কে টাকার বিনিময়ে দখল দিয়েছে রোমান মেম্বার ও নায়েব মমিন গং। তারা জনপ্রতি ১০হাজার থেকে ১৫হাজার করে টাকা নিয়ে প্রায় ৩০থেকে ৩৫ জনকে এভাবে দলিল বদলিয়ে অন্যদের দেওয়া হয়েছে। একে অন্যের উপর দায় চাপিয়ে গা ঢাকা দেওয়ার চেষ্টা করেন নায়েব মমিনুল ইসলাম ও রোমান মেম্বার। দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা একেএম আব্দুল্লাহ বিন রশিদ মুঠোফোনে জানান- এক জনের দলিলের ঘর অন্য জনের দখলের কোন সুযোগ নেই, যদি কেউ এমন করে, তবে সেটা অন্যায় করেছে। অন্যায় করলে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সঠিক তদন্তের মাধ্যমে অপরাধীদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার জোর দাবী জানান সাধারণ জনগণ।


মুজিব বর্ষ

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

Pin It on Pinterest