সানাই বাঁশির চর থেকেই আজকের সানন্দবাড়ী

প্রকাশিত: ৮:২৯ অপরাহ্ণ, আগস্ট ৭, ২০২১

সানাই বাঁশির চর থেকেই আজকের সানন্দবাড়ী

ফরিদুল ইসলাম ফরিদ, দেওয়ানগঞ্জ (জামালপুর) প্রতিনিধিঃ সে এক আদি কালের কথা, চার দিকে ধুধু বালুচর আর সাদা ধবধবে কাঁশফুল, মাঝে মাঝে সাদা মাছ রাঙ্গার হুটিটিটি ডাক। ঘন কাঁশবনে ফুড়ুৎ ফুড়ুৎ বুনো বাবুই পাখির অবাঁধ বিচরন। রাত হলেই শিয়ালের হুক্কাহুয়া ডাক। কাঁশ বনের বুক চিরে এঁকেবেকে সাপের মতো চলে গেছে ছোট নদী। রুপ কথার লোকাই ঝর্না হতে উৎপত্তি নদী। অবিভক্ত ভারতের কালার চর বা মাইনকার চরে বসতো এক বিশাল হাট, কালক্রমে ভারতের মানকার চর এখন মাহিন্দ্রগঞ্জ। এখানে পাওয়া যেত মুগল আমল হতে শুরু করে সে সময়ের বর্তমান পর্যন্ত সকল প্রয়োজনীয় সব জিনিসপত্র। তাই দেশের বৃহত্তর ময়মনসিংহের টাঙ্গাইল, ভুয়াপুর, নাগর পুর,চৌহালী, সিরাজগঞ্জ হতে কোষা নৌকায় দাড় বেয়ে, গুন টেনে ভারতের মানকার বা কালার চরে আসতো বনিকেরা। তারা সাপ্তাহ ধরে কাঁশ বনের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া নদীতে বিভিন্ন জায়গায় নোঙ্গর করে কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে পৌঁছাতে সময় লাগতো সাত হতে দশ দিন, নোঙ্গর করে রাত পোহাতো নানান চরে। টাঙ্গাইলের বিভিন্ন এলাকা হতে যাযাবর গরু মহিষের পাল নিয়ে চরে বেড়াতো এ চর হতে অন্য চরে। রাখালগণ কাঁশ বনের এ্যাংঙ্গা (ছাপড়া বা সেডঘর) তুলে রাত যাপন করতো নদীর বাঁকে। রাখালদের চর তেমনি একটি চর, যার দুরত্ব পাড়ি দিতে রাত হয়ে আসতো কালার চর হাট হতে সেখানে পৌছাতে ।

এখানে রাখালগণ বাস করতেন গরু মহিষ পালনের তাগিদে। কালার চর হাট হতে ফেরৎ আসা ব্যাবসায়ীদের রাত নেমে আসতো এই রাখালদের চরের কাছে। নির্জনতা এড়াতে রাখালদের কাছেই নৌকা নোঙ্গর করে রাত যাপন করতেন বনিকগন। সামান্য টেঙ্গু পাতার বিড়ির বা নাম মাত্র অর্থের বিনিময়ে সরলমনা রাখালদের কাছে মিলতো দুধ,খাঁটি ঘি, মাখন, দই। দুধ বা দুধজাত পন্যের সহজ প্রাপ্তি যেনো নেশা হয়ে দাঁড়ায় বনিকদের। যত কষ্টই হোক না কেনো বাজার শেষ করে তারা রাখালদের কাছে এসেই রাত যাপন করতেন। খোলা আকাশের নিচে মেঘাচ্ছন্ন বা পুর্নিমা ঝলমলে রাতে রাখালগণ মনের আনন্দে তাড়াই বাঁশের বাঁশি বাজিয়ে মাতিয়ে তুলতো নির্জন চরে রাত যাপনরত বনিকদের। নাম মাত্র মুল্যে পুষ্টিকর সুস্বাদু খাবার আর রাতে সানাই বাঁশির মন কাড়া সুর, ক্রমেই বনিকদের মনে জায়গা করে নেয়। চেনার সুবিধার্থে একেক চরের নাম একেক রকম হলেও বনিক সর্দার এই চরে নাম দিলেন সানাই বাঁশির চর।

কালক্রমে বনিকদের মাধ্যমে বাড়তে থাকে চরে রাখালদের সংখ্যা । গড়ে ওঠে শন খাগড়ার বাড়ী। বাড়তে থাকে জন বসতি। কালের বিবর্তনে সানাই বাঁশির চর হয়ে গেল সানার চর। কালের স্বাক্ষী হয়ে আজও দাড়িয়ে আছে সেই সময়ের নামানুসারে প্রতিষ্ঠা করা সানার চর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, যে প্রতিষ্ঠানটি সানন্দবাড়ী বাজারের ১কিলোমিটার উত্তর পশ্চিম পাশে অবস্থিত। এই বিদ্যালয় সেই গুণি প্রতিষ্ঠা মরহুম সাদেক আলী মাস্টার। তাঁর হাত ধরে কিছু লোক শিক্ষিত হয় ও কেটে যায় অনেক বছর এবং সানার চরকে (সু+আনন্দ) সানন্দবাড়ী নাম করন করা হয়। কালার চর হতে কিনে আনা বড় বড় আম, রাখালদের চরে বসে মজা করে বনিকদের আম ও দুধ খাওয়াকে স্মরণীয় করে রাখতে এই ইউনিয়নের নাম করণ করা হয় চরআমখাওয়া ইউনিয়ন, আর এই সানন্দবাড়ীকে আধুনিক সানন্দবাড়ী করতে যারা শীর্ষ ভুমিকা রেখেছেন তারা হলে মরহুম আব্দুর রাজ্জাক সরকার, মরহুম আব্দুল হাই আকন্দ, মরহুম ইউসুফ আলী মোল্লা, মরহুম আক্রম আলী মন্ডল, মরহুম আবু বক্কর সিদ্দিকী, মরহুম হাসেন আলী সরকার প্রমুখ।

তথ্যসুত্রঃ সে সময়ের প্রত্যক্ষদর্শী একাধিক বয়স্ক লোকজন।


মুজিব বর্ষ

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

Pin It on Pinterest