যে হাটে মানুষ বিক্রি হয় হাটে নিজের মূল্য নির্ধারণ করে মানুষ

প্রকাশিত: ৪:১০ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ৩০, ২০১৯

যে হাটে মানুষ বিক্রি হয় হাটে নিজের মূল্য নির্ধারণ করে মানুষ

মোঃ হাইরাজ বরগুনা প্রতিনিধি ঃ কি অবাক হলেন নাকি? অবাক হওয়ার কিছু নেই, অর্ধ শত বছরের ও বেশি সময় ধরে বরগুনার তালতলী উপজেলা ভূমি অফিসের সামনের মাঠে চলে আসছে মানুষ বিক্রির এ হাট। বছরের শ্রাবণ ও ভাদ্র মাসে এবং অগ্রহায়ণ ও মাঘ মাসে দুই মৌসুমে বসে এ শ্রম বাজার। শ্রমবাজারটি প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে শুরু করে চলে সন্ধ্যা পর্যন্ত, এখানে মানুষ নিজেই নিজের শ্রমের মূল্য হাঁকেন। প্রতিদিন সকালে থেকে ভীড় করেন কাস্তে ও ব্যাগ হাতে এই শ্রম বিক্রয় করা এই মানুষেরা। যারা বিভিন্ন জেলা ও উপজেলার প্রান্তিক অঞ্চল থেকে কাজের সন্ধান এখানে আসে।এখন আমন ফসল কাটার উপযুক্ত সময়। এ সময় শ্রমজীবী মানুষের চাহিদা থাকে বেশি। তাই এখানে বসে শ্রম বিক্রির হাট। এখানে রবিবার সাপ্তাহিক বাজার হওয়ায় শ্রম বিক্রির হাট থাকে বেশি জমজমাট। সরেজমিনে দেখা যায়, সহস্রাধিক শ্রমজীবী মানুষ হাটে আসে শ্রম বিক্রি করতে। এবং উপজেলার বিভিন্ন এলাকার মানুষ কৃষিকাজের জন্য তাদের কিনে নিতে আসে। শ্রম বিক্রি করা মানুষদের সাথে চলতে থাকে অন্যান্য পণ্যের মতো দর কষাকষি। সকালের দিকে চাহিদা বেশি থাকে। শ্রমজীবীরা দামও বেশি পান। দুপুর গড়িয়ে বিকাল হলে চাহিদা কমে যায় এবং দামও কমে। তবে কোনো শ্রমজীবী মানুষই অবিক্রীত থাকেন না। স্থানীয়ভাবে শ্রমজীবীদের বলে বদলা, বা দিনমজুর । ৭৫ বছরের বৃদ্ধ থেকে শুরু করে বিভিন্ন বয়সের শ্রমজীবী মানুষ কাজের সন্ধানে দলে দলে ছুটে আসেন এ অঞ্চলে। এই মানুষগুলোর অধিকাংশই আশ্রয়হীন, হতদরিদ্র। ক্রেতাদের কাছে তারা কেউ কেউ এক সপ্তাহ, আবার কেউ কেউ ১৫ দিনের ফসল কাটার জন্য বিক্রি হন। কয়েকজন শ্রমজীবীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দৈনিক ৪৫০ থেকে ৬০০ টাকায় তারা শ্রম বিক্রি করেন। তবে শ্রম কেনা মালিকের পছন্দের ওপর নির্ভর করে মূল্য। বৃদ্ধের চেয়ে জোয়ানদের চাহিদা বেশি। অনেকে শ্রমজীবীর শারীরিক গঠন দেখেও শ্রম ক্রয় করে থাকেন। তালতলীর শ্রম বিক্রির হাট শ্রমজীবীদের অতি পরিচিত হওয়ায় বরগুনার ছোট গৌরিচন্না, ফুলঝুড়ি, শর্শিমুড়ি, আয়লা, চান্দখালী, বেতাগী, বকুলতলী, উত্তর বকুলতলী, ঝালকাঠির আমুয়া ও নলসিটি সহ বিভিন্ন জেলার শ্রমজীবীরা এখানে আসেন। এই মানুষগুলোর আবার অনেকে স্বভাবে রসিক ও বয়াতি প্রকৃতির। সারা দিন কাজ শেষে মহাজনের বাড়িতে স্বাচ্ছন্দে বসেন কিচ্ছা ও গানের আসর নিয়ে। মনের সুখে গান গেয়ে কিংবা কিচ্ছা (গল্প) বলে অন্যকে আনন্দ দেন এবং নিজেরাও আনন্দিত হন। আবার অনেক বয়স্ক মানুষ রয়েছেন যারা শেষ বয়সেও প্রিয় মানুষের অবহেলার শিকার মুখ খুলে কিছু বলেনা না। তেমনি একজন কাজের সন্ধানে আসা ৭৫ বছর বয়সী মালেক মিয়া, তিনি জানান পরিবারে কোন অভাব নেই, ছেলে সন্তান নিয়ে খুব সুখে আছেন তিনি। বসে থাকতে ভালো লাগেনা, তাই এখানে কাজের সন্ধানে এসেছেন , ঠিকানা জানতে চাওয়া তিনি কোন কথা আর বলেন নি প্রতিবেদককে এরিয়ে যান । এরপর কথা হয় পোটকা খালি গ্রামের মিজান, বাবুল, সেলিম,মিয়ার সাথে তারা বলেন, এ সময় গ্রামের বাড়িতে কোনো কাজকর্ম নেই। তাই এ অঞ্চলে কাজের সন্ধানে ছুটে এসেছি। এলাকায় এক দিন কাজ করলে দুদিন বসে খেতে হয়। এতে পরিবার-পরিজন নিয়ে খুব কষ্ট হয়। তারা আরও বলেন, এ অঞ্চলে কাজের চাপ বেশি হওয়ায় বদলার (শ্রমিকের) চাহিদা বেশি। দৈনিক জনপ্রতি ৫৫০ টাকা হিসেবে সাত দিনের কাজের জন্য এক মহাজনের কাছে চুক্তি হয়েছে। উপজেলার নিশান বাড়িয়া ইউনিয়নের রাজু মিয়া বলেন, এখন ক্ষেত থেকে ধান কাডার (কাটার) সময় এ সময় কৃষকের কামের (কাজের) শেষ নাই। সময়ের লগে (সাথে)পাল্লা দিয়ে ধান কাডা (কাটা) লাগে । তাই বদলাগো (শ্রমিকদের) চাহিদা বেশি । এ অঞ্চলে যে পরিমাণ কামের (কাজের) চাহিদা, হেই পরিমাণ কামের (কাজের) মানু নাই। তাই বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা বদলারা (শ্রমজীবীরা) হ্যাগো (নিজেদের) এইহানে বেচে (বিক্রয় করে) । উপজেলার লাউপাড়া গ্রামের মাহমুদুল হাসান বলেন , আমন ফসল কাটার জন্য দৈনিক জনপ্রতি ৫০০ টাকায় ৭জন বদলা ক্রয় করেছি। তাদের সঙ্গে চুক্তি ‘ আমার আমন ফসল সব কেটে তারপর যেতে হবে ।#### তারিখ ৩০-১২-২০১৯ মোঃ হাইরাজ বরগুনা ০১৭৩৬৩৬৫০৫৬


মুজিব বর্ষ

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

Pin It on Pinterest