ঢাকা ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৩০ ভাদ্র, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৮:২৭ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ১৫, ২০২১
রাবি প্রতিনিধি:
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ স্টাডিজ (আইবিএস)-এ প্রথম বঙ্গবন্ধু অধ্যাপক সনৎকুমার সাহা বুধবার সকালে যোগদান করেছেন।
শুভেচ্ছা বক্তব্যে উপাচার্য বলেন, প্রফেসর সনৎ কুমার সাহার মতো একজন কৃতবিদ্য শিক্ষক ও বিশিষ্ট চিন্তককে বঙ্গবন্ধু অধ্যাপক হিসেবে নিয়োগ দিতে পেরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় গর্বিত। তাঁর প্রতিভাদীপ্ত শিক্ষা ও গবেষণামূলক কর্মকান্ডে মাধ্যমে তিনি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের বুদ্ধিবৃত্তিক পরিমন্ডলকে সমৃদ্ধ করবেন বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
যোগদানের পর প্রফেসর সনৎ কুমার সাহা বলেন, কর্মজীবনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত আমি এই বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া অন্য কোথাও স্থায়ীভাবে কাজ করিনি। আশা করি জীবনের শেষ সময়েও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে আমার এ যোগটা অক্ষুণ্ন থাকবে। তিনি তাঁকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বঙ্গবন্ধু অধ্যাপক হিসেবে নিয়োগ দেয়ায় উপাচার্যসহ মনোনয়ন কমিটির সদস্যদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।
প্রসঙ্গত, প্রফেসর সনৎ কুমার সাহা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বঙ্গবন্ধু অধ্যাপক। একটি নির্বাচনী বোর্ডের মাধ্যমে মনোনয়নের পর গত ৯ ডিসেম্বর তারিখে অনুষ্ঠিত আইবিএস বোর্ড অব গভর্নরসের সভার সুপারিশক্রমে ১১ ডিসেম্বর ২০২১ তারিখে অনুষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটের ৫০৯তম সভায় তাঁর নিয়োগ অনুমোদন করা হয়।
অধ্যাপক সনৎকুমার সাহার জন্ম ১৯৪১ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি। রাজশাহী কলেজের অর্থনীতি বিভাগ থেকে তিনি ১৯৫৯ সালে বিএ সম্মান ডিগ্রি অর্জন করেন। মাস্টার্স ডিগ্রি লাভ করেন রাবি অর্থনীতি বিভাগ থেকে ১৯৬১ সালে।
পড়াশোনা শেষে ১৯৬২-র ১৪ নভেম্বর তিনি রাবি অর্থনীতি বিভাগে প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন। এর মাঝে পিএইচডি ডিগ্রি নেবার উদ্দেশ্যে রওনা দেন যুক্তরাজ্যের লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিক্সে, পিএইচডি গবেষক হিসেবে কাজ করার পূর্বশর্ত হিসেবে সেখানকার ইকোনমিক্স অ্যান্ড ইকোনমেট্রিক্স ব্রাঞ্চ থেকে এমএসসি ডিগ্রিও গ্রহণ করেন। পিতার অকস্মাৎ মৃত্যুর কারণে পিএইচডি সম্পন্ন না করেই দেশে ফিরে আসেন। পঁচিশে মার্চের গণহত্যার পর জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রাবির আরো কয়েকজন শিক্ষকের সাথে তিনি কলকাতায় আশ্রয় নেন। মুক্তিযুদ্ধকে সংগঠিত করা ও যুদ্ধ-পরবর্তী পরিস্থিতিতে স্বাধীন দেশের পুনর্গঠনের প্রয়াসে প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের প্ল্যানিং সেলে তিনি অর্থনীতিবিদ হিসেবে যুক্ত ছিলেন।
১৯৭২ সালে পুনরায় রাবিতে যোগদান করেন। ওই সময় তিনি বিভাগীয় প্রধান হিসেবেও নিয়োগ লাভ করেন।
দেশ-বিদেশের বহু নামকরা একাডেমিক জার্নালে তাঁর ইংরেজি ভাষায় লিখিত কুড়িটির বেশি একাডেমিক প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। নব সেচব্যবস্থা কী করে বাংলাদেশের কৃষি ও ভূমিবিন্যাসকে বদলে দিয়েছে এই নিয়ে সনৎকুমার সাহার গবেষণা আজও পথিকৃতের দাবীদার।
১৯৯৯ সালে সনৎকুমার সাহা বাংলা একাডেমি প্রদত্ত সাদত আলী আখন্দ সাহিত্য পুরস্কার লাভ করেছিলেন। এরপর ২০০৭ সালে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি স্বর্ণপদকে ভূষিত হন। ২০১১ সালে তাঁর বই কবিতা-অকবিতা রবীন্দ্রনাথ মননশীল শাখায় প্রথম আলো বর্ষসেরা বই পুরস্কার লাভ করে। ২০১২ সালে প্রবন্ধসাহিত্যে বিশেষ অবদানের জন্য তিনি বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কারে সম্মানিত হন। ২০১৫ সালে শিক্ষাক্ষেত্রে অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার তাঁকে রাষ্ট্রীয় সম্মাননা একুশে পদকে ভূষিত করে।
সনৎকুমার সাহার প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা উনিশ। বইগুলো হলো: সমাজ সংসার কলরব(২০০০), আকাশ পৃথিবী রবীন্দ্রনাথ (২০০১), ভাবনা অর্থনীতির : বিশ্বায়ন, উন্নয়ন ও অন্যান্য (২০০৩), কথায় ও কথার পিঠে (২০০৮), এই বাঙলায় (২০১০), কবিতা-অকবিতা রবীন্দ্রনাথ (২০১১), ফিরে দেখা : রবীন্দ্রনাথ (২০১২), এলেমেলো হাওয়া (২০১৩), দেখা-অদেখা (২০১৪), বাংলাদেশ : ভাবনা দুর্ভাবনা (২০১৬), পুরানো জানিয়া (২০১৬), পৌরাণিক-সাম্প্রতিক (২০১৬)। একটু-আধটু পড়া (২০১৮), বিনি সুতোয় গাথা (২০১৮), আমার আঙিনায় (২০১৯), বঙ্গবন্ধু-বাংলাদেশ (২০২০), ইতিহাসের প্রেক্ষাপটে: রেনেসাঁ থেকে সমাজতন্ত্র (২০২০), অমর্ত্য সেনের মর্ত্য-ভাবনা (২০২১), চেনা-শোনা (২০২১)।
পদে যোগদানকালে উপাচার্য প্রফেসর গোলাম সাব্বির সাত্তার, উপ-উপাচার্য প্রফেসর চৌধুরী মো. জাকারিয়া, উপ-উপাচার্য প্রফেসর মো. সুলতান-উল-ইসলাম, ইনস্টিটিউটের পরিচালক প্রফেসর মোহাম্মদ নাজিমুল হক, রেজিস্ট্রার প্রফেসর মো. আবদুস সালাম, ইনস্টিটিউটের শিক্ষক, অনুষদ অধিকর্তা, বিভাগীয় সভাপতি, ইনস্টিটিউট পরিচালকবৃন্দসহ সংশ্লিষ্ট অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।
© স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০২০ Developed By Agragami HOST