বরিশালে আখেরী মোনাজাতের মাধ্যমে চরমোনাই’র ঐতিহাসিক মাহফিল সম্পন্ন

প্রকাশিত: ৩:৪৬ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০২২

বরিশালে আখেরী মোনাজাতের মাধ্যমে  চরমোনাই’র  ঐতিহাসিক মাহফিল সম্পন্ন

পারভেজ, বরিশাল প্রতিনিধিঃ

পাপের কাজ পরিহার করে বেশী বেশী নেক আমলের আহবানসহ দেশ ও জাতির কল্যাণ কামনা করে মুফতী সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম পীর ছাহেব চরমোনাই’র আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে ফাল্গুনের বার্ষিক মাহফিল সমাপ্ত হয়েছে।

সোমবার ২৮ ফেব্রুয়ারি সকাল সাড়ে ৮টায় পীর ছাহেব সমাপনী বয়ান শেষে লক্ষ লক্ষ মুরিদান সহ মুসুল্লীয়ানদের নিয়ে মহান আল্লাহ রাব্বুল আল আমীনের দরবারে হাত তোলেন।
মোনাজাত শুরু হওয়ার পূর্ব ঘোষণা থাকায় ভোর থেকেই চরমেনাইমুখী মানুষের ঢল নামে। আখেরি মোনাজাতে অংশ নিতে দূরদূরান্ত ও নগরীর এবং আশপাশের জেলা থেকে আসা মানুষের স্রোত যেতে থাকে মাহফিল মাঠের দিকে। সকাল সাড়ে ৮টার আগে চরমোনাই দরবার শরীফসহ আশপাশের এলাকা জনসমুদ্রে পরিণত হয়।

১৫ মিনিট স্থায়ী মোনাজাতে লাখ লাখ মুসল্লির কান্না আর আমিন আমিন ধ্বনিতে মাহফিল এলাকায় এক অভূতপূর্ব দৃশ্যের অবতারণা হয়। মাহফিলের মাঠ উপচে আশপাশের বাড়ির বাগান, আঙিনা, নদীর পাড়সহ বিস্তৃর্ণ এলাকা জুড়ে লাখ লাখ মুসল্লি মোনাজাতে অংশ নেন।
গত শুক্রবার বাদ জুমা পীর ছাহেব চরমোনাই’র উদ্বোধনী বয়ানের মাধ্যমে ৩দিন ব্যাপী ফাল্গুন মাসের বার্ষিক মাহফিল শুরু হয়।
আখেরি মোনাজাতে পীর ছাহেব ভারত, কাশ্মীর, মিয়ানমার, ফিলিস্তিন ও সিরিয়াসহ বিশ্বের নির্যাতিত মুসলমানদের নিরাপত্তা এবং সমগ্র মুসলিম উম্মাহর শান্তি কামনা করে মহান আল্লাহ রাব্বুল আল্লাহ রাব্বুল আল আমীনের দয়া ও রহমত কামনা করেন।

বাদ ফজরের বিদায়ী বয়ানে পীর ছাহেব চরমোনাই বলেন, আল্লাহর ওলীরা আখেরাতের চিন্তায় ব্যস্ত থাকেন। আর কিছু মানুষ দুনিয়া, দুনিয়াবি সম্পদ ও খাবার নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। তিনি বলেন, একশ্রেণীর মানুষ আল্লাহর জিকির না করলে তাদের ভালো লাগে না। আর এক শ্রেণীর মানুষ আছে যাদের নাকি জিকির ও মাহফিল সহ্য হয় না, এরা বড়ই অদ্ভুত। পীর ছাহেব বলেন, সরকারী দলের কোনো কোনো নেতার নাকি মাহফিলের আওয়াজ ভালো লাগেনা। তিনি বলেন, এমন লোকদেরকে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন হেদায়েত দান করুন এই দোয়াই করি।
পীর সাহেব প্রত্যেক মুসলমানের ক্বলব পরিস্কার করার তাগিদ দিয়ে এ লক্ষ্যে হক্কানী ওলামায়ে কিরাম ও পীর মাশায়েখদের স্বরণাপন্ন হবার তাগিদ দেন। ক্বলব পরিস্কার না করলে আখিরাতের জগত বড় কষ্টের হতে পারে বলেও সতর্ক করেন পীর ছাহেব।
পীর ছাহেব চরমোনাই বলেন, যার ভেতরে তাকাব্বুরী থাকবে, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কথা অনুযায়ী তারা বেহেস্ত তো দূরের কথা বেহেস্তের ঘ্রাণও পাবেন না। তাই আমাদের সকলকে তাকাব্বুরী মুক্ত হতে হবে।
পীর ছাহেব আখেরি মোনাজাতে অংশ নেয়া প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক ব্যক্তি সহ সম্মানিত ওলামায়ে কিরাম এবং গণমাধ্যম কর্মীদেরকে মোবারকবাদ জানান।

মোনাজাতে অংশ নেন প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, রাজনৈতিক ও গণ্যমান্য ব্যক্তিরা। জীবনের সকল গুনাহর জন্য মহান আল্লাহর কাছে ক্ষমা চেয়ে মুসল্লিরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। তাদের আমিন-আমিন ধ্বনিতে এক আধ্যাত্মিক পরিবেশের সৃষ্টি হয়।

মাহফিল পরিচালনা কমিটির নির্বাহী পরিচালক মুফতি এছাহাক মো. আবুল খায়ের বলেন, প্রায় কোটি মুসল্লিদের আধ্যাত্মিক এ মিলনমেলা আখেরি মোনাজাতের মাধ্যমে সমাপ্ত হয়েছে।

এবার চরমোনাই মাহফিলে আগত মুসল্লিদের মধ্যে ১৪ জন মুসল্লি ইন্তেকাল করেন। এরমধ্যে সিরাজগঞ্জ থেকে মাহফিলে আসা একটি ট্রলার দুর্ঘটনায় ৪ জন সহ মোট ১০ জন ষাটোর্ধ মুসল্লী হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। জানাজা শেষে তাদের প্রত্যেকের মৃতদেহ দরবার শরিফের উদ্যোগে নিজ নিজ এলাকায় পাঠানো হয়েছে।


alokito tv

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

Pin It on Pinterest