ঋণের আবেদনে সুপারিশ না করায় প্রধান শিক্ষককে লাঞ্চিত ও নিরাপত্তা কর্মিকে মারপিটের অভিযোগ

প্রকাশিত: ৬:২৪ অপরাহ্ণ, মে ১২, ২০২২

ঋণের আবেদনে সুপারিশ না করায় প্রধান শিক্ষককে লাঞ্চিত ও নিরাপত্তা কর্মিকে মারপিটের অভিযোগ

আবু রায়হান, জয়পুরহাটঃ
ঋণের আবেদনে সুপারিশ না করায় জয়পুরহাট কাশিয়াবাড়ী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ গোলাম মোস্তফাকে লাঞ্চিত করে অবরুদ্ধ ও নিরাপত্তা কর্মি জাকির হোসেন কে মারপিট করে বিদ্যালয় থেকে বের করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।

ভুক্তভোগী প্রধান শিক্ষক গোলাম মোস্তফা জানান, বিদ্যালয় চলাকালীন গত ৯ মে (সোমবার) সকাল সাড়ে ১০ টার দিকে তিনি পেশাগত দায়িত্ব পালনে তার অফিস রুমে অবস্থান করাকালীন অত্র বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মোছাঃ শান্তনা ইয়াছমিন, মোছাঃ জীবন নেছা, মোঃ মাসুদ রানা ও অফিস সহকারী আশরাফুল ইসলাম একসাথে তার অফিস রুমে প্রবেশ করে তাদের তিন জনের ঋণের আবেদনে সুপারিশের জন্য স্বাক্ষর চাইলে তিনি অস্বীকৃতি জানান। কারণ ইতিপূর্বে জীবন নেছার বিরুদ্ধে ঋণ খেলাপীর নোটিশ রয়েছে এবং মাসুদ রানা সাময়িক বরখাস্তবস্থায় আছেন।

ঋণের আবেদনে সুপারিশ করতে অস্বীকৃতি জানানোর সাথে সাথে তারা প্রধান শিক্ষক গোলাম মোস্তফার উপর ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে গালিগালাজসহ ভয়ভীতি প্রদর্শন করেন। এ সময় তিনি তার মোবাইল ফোন বের করলে তার হাত থেকে মোবাইল ফোনটি সহকারী শিক্ষক শান্তনা ইয়াছমিন কেড়ে নেয়ে হেনস্তার করে এবং ক্লাস বর্জন করে বিদ্যালয়ের বন্ধ করার হুমকি দেয়। এ সময়ে নিরাপত্তা কর্মি জাকির হোসেন এগিয়ে আসলে সহকারী শিক্ষক মোফাজ্জল হোসেন ও অফিস সহকারী আশরাফুল ইসলাম জাকিরকে টেনে অফিসের বাহিরে নিয়ে গেলে আশরাফুল জাকিরকে মারপিট করে বিদ্যালয় থেকে বের করে দেয় এবং বলতে থাকে তুই থাকলে আমরা হেড মাষ্টারকে হেনস্তা করতে পারবনা। তুই আর কোনদিন এই স্কুলে আসবিনা।

নিরাপত্তা কর্মী জাকির হোসেন বলেন, আমি বিদ্যালয় চলাকালীন সময় প্রধান শিক্ষকের অফিস রুমের সামনে দাঁড়িয়ে ডিউটি পালন করছিলাম এমন সময় তারা প্রধান শিক্ষকের রুমে প্রবেশ করে। কিছুক্ষণ পরে রুমের ভিতর হট্রগোলের আওয়াজে আমি ভিতরে প্রবেশ করে দেখি প্রধান শিক্ষককে শাসিয়ে অবরুদ্ধ করা হচ্ছে। আমি এর প্রতিবাদ জানালে আমাকে ঘাড়ধাক্কা দিয়ে, টেনে বাহিরে এনে মারপিট করে বিভিন্ন হুমকি প্রদান করে বিদ্যালয় থেকে বের করে দেয়।

দীর্ঘক্ষণ অবরুদ্ধ করে রাখার এক পর্যায়ে নিরুপায় হয়ে প্রধান শিক্ষক গোলাম মোস্তফা বিষয়টি সভাপতি কে জানালে তিনি থানায় খবর দিলে তাৎক্ষণিক পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে।

প্রধান শিক্ষক গোলাম মোস্তফা আরও জানান, তারা তাদের অন্যের প্ররোচনায় ব্যক্তিসার্থে বিভিন্ন সময়ে তাকে ইতিপূর্বেও কয়েকবার হয়রানি, মানাহানি ও অবরুদ্ধ করা হয়েছে। বিষয় গুলো যথাযথ কর্তৃপক্ষকে জানানোর পরও এর কোন প্রতিকার পাননি বলেই তাদের সাহস বৃদ্ধি হয়েছে এবং আবারও তাকে হেনস্থা করা হলো। প্রধান শিক্ষক হিসেবে তিনি ৩৪ বছর যাবৎ নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। আর মাত্র ২ বছর পর তিনি চাকুরী জীবন থেকে অবসরে যাবেন। এই শেষ সময়ে তিনি এমন প্রবিবন্ধকতার শিকার হচ্ছেন। বর্তমানে তিনি চরম নিরাপত্তা হিনতার মধ্যে বিদ্যালয়ে তার দায়িত্ব পালন করছেন। যেকোনো সময় তার প্রাণহানি ঘটতে পারে। ফলে তিনি নিরাপত্তার সার্থে জয়পুরহাট থানায় এসংক্রান্ত বিষয়ে একটি জিডি করেছেন এবং এ রকম পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণ পেতে যথাযথ কর্তৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

এ ব্যাপারে জয়পুরহাট থানার অফিসার ইনচার্জ ওসি একেএম আলমগীর জাহান এর যোগাযোগ করলে তিনি জানান, প্রধান শিক্ষক থানায় এ সংক্রান্ত একটি জিডি দায়ের করেছেন। তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

প্রধান শিক্ষকের অভিযোগের প্রেক্ষিতে সহকারী শিক্ষক মোছাঃ জীবন নেছা এর সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, সোনালী ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার জন্য আমি যে প্রতিষ্ঠানে চাকুরী করি তার একটা প্রত্যয়ন লাগবে এজন্য প্রধান শিক্ষকের সই নিতে গেলে তিনি মোবাইল ফোন বের ভিডিও করা শুরু করে এবং ওনি প্রায়ই এ ধরনের কাজ করে। আমাদের যেকোনো দরকারি কাগজে স্বাক্ষর করতে চাননা। বলেন তোমাদের কি করার আছে করো। ওনি আমাদের মিথ্যা বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ তুলেছেন। আসলে তিনি একজন মিথ্যাবাদি সেটা প্রমানিত। ঘটনার দিন শিক্ষা অফিস থেকে লোক এসে সবকিছু দেখে ওনাকে মিথ্যাবাদি বলে গেছেন।

সহকারী শিক্ষক মোঃ মাসুদ রানা বলেন, আমরা সই নিতে গিয়ে বলি স্যার আপনি আমাদের অভিভাবক, আপনি ছাড়া আমাদের কোন উপায় নেই। আমরা অনেক সমস্যার মধ্যে আছি। ওনি তাতেও সম্মতি দেননি। এমনকি ওনি নিয়ম বর্হিভূতভাবে আমাকে বরখাস্ত করে রেখেছেন। ওনার অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা। ওনি বিদ্যালয়টিকে ধংশ করে দিচ্ছেন। ওনি প্রতিনিয়ত বিভিন্ন অনিয়ম করে চলেছেন।

অফিস সহকারী আশরাফুল ইসলাম বলেন, তিনজন শিক্ষক ঋণ নিবে এজন্য প্রধান শিক্ষকের স্বাক্ষর প্রয়োজন হলে তারা প্রধান শিক্ষকের নিকট গেলে তিনি আজ দিব কাল দিব বলে বিভিন্নভাবে হয়রানি করে তিনি সহঃ প্রধান শিক্ষককে স্বাক্ষর করতে বলেন। ঈদের পূর্বে সহঃ প্রধান শিক্ষক স্বাক্ষর করে দিলে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ তাদের জানান, প্রধান শিক্ষকের স্বাক্ষরই লাগবে তাই সেদিন তারা প্রধান শিক্ষকের স্বাক্ষর নিতে গেলে তিনি কোন ভাবেই সম্মতি দেয়না। আর প্রধান শিক্ষক বরাবরই মিথ্যা অভিযোগ তোলে এবং মিথ্যা কথা বলে। জাকির কে মারপিট ও হুমকির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তাকে মারপিট করলে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ অন্যান্য লোকজনের চোখে অবশ্যই পড়তো। জাকিরকে শুধু বলা হয়েছে তোমার কাজ হচ্ছে স্কুলে যেন বহিরাগতরা প্রবেশ করে কোন সমস্যা না করতে পারে তার নিরাপত্তা দেওয়া। তুমি সেটা নাকরে অফিসের মধ্যে ঘুরঘুর করো কেন। আর সেদিন প্রধান শিক্ষকের সাথে কোন অপ্রতিকর আচরণ করা হয়নি। বিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম ও উন্নয়নের দিকে প্রধান শিক্ষকের কোন দৃষ্টি নেই। তার কারণে বিদ্যালয়টি অধপতনের দিকে যাচ্ছে।

সহকারী শিক্ষক মোফাজ্জল হোসেন বলেন, সেদিন কোন অপ্রিতিকর ঘটনা ঘটেনি। তিনজন শিক্ষক তাদের ঋণের আবেদনে স্বাক্ষর নিতে গেলে তর্কবিতর্ক হলে প্রধান শিক্ষক মোবাইল ফোন বের করে ভিডিও করা শুরু করলে সহকারী শিক্ষক মোছাঃ শান্তনা ইয়াছমিন মোবাইল টি কেড়ে নেয় এবং বলেন স্যার আপনি এভাবে আমাদের ভিডিও করতে পারেননা। পরে আবার মোবাইল ফোনটি দিয়ে দেন। এসময় নিরাপত্তা কর্মী জাকির স্যারদের মধ্যে এসে কথা বললে তখন তাকে শুধুমাত্র বলা হয় তুমি শিক্ষকদের মাঝে এসোনা বলে তাকে বাহিরে নিয়ে যাই। পরে অফিস সহকারী আশরাফুলের সাথে কি হয়েছে আমি তা দেখিনি।

সহকারী শিক্ষক মোছাঃ শান্তনা ইয়াছমিনের বিরুদ্ধে অভিযোগের ব্যাপারে জানতে তার মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি এবং ফোন বন্ধ করে রাখেন।

উপরোক্ত বিষয়ে জয়পুরহাট জেলা শিক্ষা অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) মোঃ শাহাদুজ্জামান এর সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, প্রধান শিক্ষক গোলাম মোস্তফা বিষয়গুলোর ব্যাপারে সরাসরি ডিসি স্যার বরাবর অভিযোগ করেছেন এবং আমাকে সিসি কপি দিয়ে অবহিত করেন । বিষয়টি নিরসনের লক্ষ্যে ডিসি স্যার ইতিমধ্যে ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের নিয়ে কথা বলেছেন। গত ৯ মে সোমবারের ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত কেউ আমাকে জানায়নি।


মুজিব বর্ষ

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

Pin It on Pinterest