ঢাকা ২৯ মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ২:০২ অপরাহ্ণ, মে ১৫, ২০২২
মুরাদ খান, মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি, ১৫ মে
চিকিৎসা শাস্ত্রের কোন ডিগ্রি না থাকলেও সাধারণ রোগীদের সাথে প্রতারণা করে সর্ব রোগের চিকিৎসক বনে গেছেন ভূয়া ডাক্তার মো: জহিরুল ইসলাম। ডাক্তার না হয়েও চেম্বার খুলে দিনের পর দির ভুয়া চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছেন তিনি। ম্যাজিক মেশিনের মাধ্যমে মানবদেহের মস্তিষ্ক থেকে শুরু করে হার্ট, কিডনি, ফুসফুসসহ শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গের রোগ নির্ণয় করে চিকিৎসার নামে প্রতারণা করে চলেছেন প্রকাশ্যেই।
জানা গেছে, ভূয়া চিকিৎসক জহিরুল ইসলাম মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার শিমুলিয়া ইউনিয়নের পাঁচধারা গ্রামের আরজু মিয়ার ছেলে। সে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এক বছর মেয়াদী সার্টিফিকেট-ইন-ফিজিওথেরাপী টেকনোলজি কোর্সে অধ্যয়নরত অবস্থায় শিবালয় উপজেলার একই ইউনিয়নের ঢাকাইজোড়া এলাকায় একটি বসতবাড়ির ঘর ভাড়া নিয়ে চিকিৎসার নামে চালিয়ে যাচ্ছেন রমরমা প্রতারণা বাণিজ্য।
স্থানীয়রা জানান, ভূয়া ডাক্তার জহিরুল দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসার নামে সাধারণ মানুষের সাথে প্রতারণা করে আসছে। আগে ইন্তাজগঞ্জ বাজারে বসে এমন অপকর্ম করায় তাকে বাজার থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। এখন সে একটি বাড়িতে ঘরভাড়া নিয়ে অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে। মিডিয়া ও প্রশাসনের বিভিন্ন লোকজন তার কাছে এসে টাকা পয়সা নিয়ে চলে যায়। অনেকেই জানে জহিরুল চিকিৎসার নামে প্রতারণা করছে, তবুও তার বিরুদ্ধে কেউ ব্যবস্থা নেয়না। তবে ভূয়া চিকিৎসক জহিরুলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে প্রশাসনের কাছে জোর দাবি জানান স্থানীয়রা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ভূয়া চিকিৎসক জহিরুলের কাছে চিকিৎসাসেবা নিতে আসা অধিকাংশ রোগীই লেখাপাড়া না জানা ও দূর-দূরান্ত থেকে এসেছেন। জহিরুল শিবালয়ের ঢাকাইজোড়া এলাকায় একটি বসতবাড়ির ঘরের বারান্দার রুমে বসে একটি চায়না মেশিনের মাধ্যমে বিভিন্ন মানুষের রোগ নির্ণয় করছেন। বসতবাড়ির ঘরের বারান্দার রুমে বসে অপচিকিৎসা দিলেও বিভিন্ন রোগের মেডিকেল পরিক্ষা-নীরিক্ষার জন্য রোগীদের পাঠাচ্ছেন মুন্নু মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। তবে বিভিন্ন পরিক্ষা-নীরিক্ষার আগেই হাজার হাজার টাকার ওষুধ প্রেসক্রিপশন করে দিচ্ছেন তিনি।
পাশের জেলা টাঙ্গাইলের নাগরপুর থেকে আসা লিটন মিয়া বলেন, বিভিন্ন লোকজনের কাছে এই ডাক্তারের কথা শুনে মেরুদন্ডের ব্যথা নিয়ে এখানে এসেছি। ডাক্তারসাব ৫০০ টাকা ভিজিট নিয়ে অনেগুলো ওষুধ লিখে দিয়েছেন।
নাগরপুর থেকে আসা আরেক রোগী মনোয়ারা বেগম বলেন, শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ব্যথা নিয়ে এখানে চিকিৎসা করাতে এসেছিলাম। আমার কাছ থেকেও ৫০০ টাকা ভিজিট নিয়ে কয়েক হাজার টাকার ওষুধ দিয়েছে। হরমুজ আলী নামের আরেক রোগী বলেন, এখানে এসে জানতে পারলাম তিনি ভূয়া ডাক্তার। চিকিৎসার নামে এমন প্রতারণাকারীদের শাস্তি হওয়া উচিৎ।
শিবালয়ের তাড়াইল গ্রামের মো: ফুলচান বলেন, হার্ডের সমস্যা ও এলার্জির সমস্যা নিয়ে এখানে ডাক্তার দেখাতে এসেছি। আমরা গরিব মানুষ। আমরা কি আর ভালো-মন্দ বুঝি?
চিকিৎসক না হয়েও কিভাবে সব রোগের চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন জানতে চাইলে মো: জহিরুল ইসলাম বলেন, আমি ফিজিওথেরাপী টেকনোলজি কোর্সে লেখাপড়া করছি। রোগী আসলে বিভিন্ন ডাক্তারের সাথে ফোনে কথা বলে রোগীদের ওষুধ লিখে দেই।
এ বিষয়ে মানিকগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা: মো: মোয়াজ্জেম আলী খান বলেন, সে কোনভাবেই পার পাবেনা। তার বিরুদ্ধে শীঘ্রই আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
© স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০২০ Developed By Agragami HOST