ঢাকা ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৩১ ভাদ্র, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৩:৪২ অপরাহ্ণ, আগস্ট ৩, ২০২২
ঢাকা থেকে ভোলাগামী গ্রীনলাইন -৩ লঞ্চে জাকির হোসেন @ বাচ্চূ (৩৮) নামের এক যুবককে হত্যার দায়ে মোছাঃ আরজু আক্তার (২৩) কে গ্রেফতার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) ঢাকা জেলা পুলিশ। ০২ আগস্ট (মঙ্গলবার) ভোর রাত অনুমান ০৩.০০ ঘটিকার সময় সাভারের নবীনগর এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃত আসামী মোছাঃ আরজু আক্তার (২৩) বোরহানউদ্দিন থানার চরটিকটা গ্রামের মৃত হাফিজ উদ্দিনের মেয়ে। ডিসিষ্ট জাকির হোসেন @ বাচ্চূ (৩৮) একই থানার পূর্ব মহিষখালি গ্রামের ফরাজি বাড়ির মোঃ সিদ্দিক ফরাজির ছেলে।
উক্ত ঘটনায় ভকিটমিরে ১ম স্ত্রী সুরমা আক্তার বাদী হয়ে দক্ষণি করোনীগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়রে করনে। মামলা নং- ৯৪, তারখি- ৩১/০৭/২০২২ ইং, ধারা- ৩০২/২০১/৩৪ দঃ বঃি। মামলার এজাহারে বাদী উল্লখে করনে, বাদনিীর স্বামী ২০২০ সালের এপ্রিল মাসের দিকে তার ২য় স্ত্রী আরজু বেগম বিয়ে করেন। ২য় বিবাহের পর বাদনিীর স্বামী কিছুদিন তার ২য় স্ত্রী আরজু এর সহিত বসবাস করে এবং একপার্যায়ে বাদনিীর স্বামী ২০২২ সালের এপ্রিল মাসের দিকে তার ২য় স্ত্রী আরজু বেগমকে ডিভোর্স দেয় । কাজের সুবাধে বাদনিীর স্বামী তার বড় ভাসুরের স্ত্রী মিনারা (৩০) এর বাসায় থাকিত। গত ২৯/০৭/২০২২ ইং তারিখ সকাল অনুমান ০৭.০০ ঘটিকার দিকে বাদনিীর স্বামী লঞ্চে করে বাড়ীতে আসবে বলে জানায় । পরে ঐদিন বাদনিীর স্বামীকে একাধিক ফোন দিলেও তার নাম্বার বন্ধ পাওয়া যায়। যথাসময়ে বাড়ীতে না আসায় বিষয়টি বাদনিীর সন্দহে হয় এবং আত্মীয় স্বজনদরে জানায়। বাদনিী ও তার আত্মীয় স্বজন তাকে বিভিন্ন স্থানে খোঁজা-খুঁজি করিতে থাক।ে একর্পযায়ে সদরঘাট নৌ থানার মাধ্যমে সংবাদ পায় যে, গত ইং ২৯/০৭/২০২২ তারিখ রাত অনুমান ০৮.১০ ঘটিকার সময় সদরঘাটে থাকা এমভি গ্রীন লাইন-৩ লঞ্চের ৩য় তলার মাষ্টার ব্রীজের সাথে মাষ্টার কেবিনের ভিতরে খাটের নিচে বাদনিীর স্বামীর লাশ পাওয়া গিয়াছে। এছাড়াও উক্ত লঞ্চের কতিপয় স্টাফদের মাধ্যমে বাদনিী জানতে পারে যে, উক্ত লঞ্চের কেবিনে বাদনিরি স্বামীর সহিত কফি কালারের বোরকা পরিহিত মুখ ঢাকাবস্থায় একটি মেয়ে ছিল। বাদনিীর স্বামীর মৃত্যুর পর তাকে আর কোথাও দেখা যায় নাই।
মামলাটি পিবিআই’র সিডিউলভুক্ত হওয়ায় পিবিআই ঢাকা জেলা স্ব-উদ্দোগে মামলাটির তদন্ত অধিগ্রহণ করে। অ্যাডিশনাল আইজিপি, পিবিআই জনাব বনজ কুমার মজুমদার, বিপিএম(বার),পিপিএম এর সঠিক তত্বাবধান ও দিক নির্দেশনায় পিবিআই ঢাকা জেলা ইউনিট ইনচার্জ পুলিশ সুপার জনাব মোহাম্মদ খোরশেদ আলম পিপিএম-সেবা এর সার্বিক সহযোগিতায় মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই (নিরস্ত্র) মোঃ আনোয়ার হোসেন মামলাটি তদন্ত করে রহস্য উদঘাটন করনে।
গ্রেফতারকৃত আসামী জানায়, মৃত জাকির হোসেন বাচ্চু অনুমান ০২ (দুই) বছর পূর্বে জীনের বাদশা পরিচয়ে আরজু আক্তার কে ফোন দেয়। তার পর থেকে আরজু আক্তারের সাথে পরিচয়, প্রেম ও পরবর্তীতে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়। আরজু জাকির হোসেন বাচ্চুর ২য় স্ত্রী। ডিসিষ্ট জাকির হোসেন বাচ্চু আসামী আরজু আক্তারকে জীনের বাদশা প্রতারনার কাজে ব্যবহার করে এবং তাকেও এই কাজে পারদর্শী করে। আরজুর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ থাকার পরও জাকির হোসেন বাচ্চু একাধিক নারীর সাথে পরকীয়া প্রেমে জড়িয়ে পড়ে। জ্বীনের বাদশার পরিচয়ে প্রতারনার মাধ্যমে ডিসিষ্ট জাকির হোসেন বাচ্চু যে অর্থ উপার্জন করত তা অনৈতিক কাজে খরচ করত। এসব বিষয় নিয়ে আরজু আক্তারের সাথে জাকির হোসেন বাচ্চুর ব্যাপক মনোমালিন্য সৃষ্টি হলে গত প্রায় ৫ মাস আগে দ্বিতীয় স্ত্রী আরজু আক্তারকে তালাক দেয়। দ্বিতীয় স্ত্রী আরজু আক্তারকে তালাক দেওয়ার পরও জাকির হোসেন তার সাথে শারীরিক সম্পর্ক বজায় রাখে। তালাক দেওয়ার পরও দ্বিতীয় স্ত্রী আরজু আক্তার এর সাথে শারীরিক সম্পর্ক থাকাকালে জাকির হোসেন বাচ্চু পুনরায় একাধিক নারীর সাথে পরকীয়া সম্পর্কের বিষয়টি আরজুর কাছে ধরা পরে। এতে আরজু আক্তার আরো বেশী ক্ষিপ্ত হয় এবং জাকির হোসেন বাচ্চুকে উপযুক্ত শিক্ষা দেওয়ার সুযোগ খোজতে থাকে।
মামলার ঘটনার আগের দিন রাতে জাকির হোসেন বাচ্চু তার এক পরকীয়া প্রেমিকার সাথে রাত্রি যাপন করে। বিষয়টি আরজু আক্তার বুঝতে পারে । ডিসিষ্ট জাকির হোসেন ঘটনার দিন গত ২৯/০৭/২০২২ ইং তারিখ রোজ শুক্রবার ঢাকা থেকে লঞ্চে গ্রামের বাড়ি ভোলা যাওয়ার বিষয়টি আসামী আরজু আক্তার জানতে পারে। আসামী আরজু ডিসিষ্ট জাকির হোসেন বাচ্চুকে লঞ্চের একটি কেবিন ভাড়া করে তাকেও বাড়ি নিয়ে যেতে বলে। ডিসিষ্ট জাকির ও আসামী আরজু আক্তারের বাড়ি একই এলাকায় পাশাপাশি গ্রামে হওয়ায় ডিসিষ্ট জাকির হোসেন বাচ্চু ঢাকা থেকে ভোলাগামী এমভি গ্রীন লাইন- ৩ লঞ্চের একটি স্টাফ কেবিন ভাড়া করে। ভাড়া নেওয়ার সময় তারা স্বামী স্ত্রী পরিচয় দিয়ে লঞ্চে উঠে। কেবিন ভাড়া নেওয়ার সময় লঞ্চ কর্তৃপক্ষ তাদের নিকট থেকে কোন তথ্য রাখেনি। লঞ্চে উঠা থেকে নামা পর্যন্ত আসামী আরজু আক্তার বোরকা পরিহিত মুখ ঢাকা ছিল।
জিজ্ঞাসাবাদে আসামী আরজু আক্তার জানায়, সকাল অনুমান ০৮.০০ ঘটিকায় তারা সদরঘাট থেকে ভোলার ইলিশা যাওয়ার জন্য লঞ্চে উঠে। পরিকল্পনা অনুযায়ী আসামী আরজু আক্তার দুধের সাথে ৫ টি ঘুমের ট্যাবলেট মিশিয়ে লঞ্চে উঠে। ডিসিষ্ট জাকির হোসেন এক বাটি রসমালাই ক্রয় করে। লঞ্চের কেবিনে উঠার পর তারা শারীরিক মেলামেশা করে। অনুমান ঘন্টা খানেক পর আসামী আরজু আক্তার ঘুমের ওষুধ মিশ্রিত দুধ ডিসিষ্ট জাকির হোসেনকে খাইয়ে দেয়। দুধ খাওয়ার কিছুক্ষনের মধ্যে জাকির হোসেন অচেতন হয়ে গেলে উড়না দিয়ে জাকির হোসেনের হাত এবং পা বেধে ফেলে। পরে অন্য একটি উড়না দিয়ে জাকির হোসেনকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে।
হত্যার পর জাকির হোসেনের লাশ কেবিনের স্টিলের খাটের নিচে লুকিয়ে রাখে । লঞ্চটি ভোলার ইলিশা ঘাটে পৌছালে আরজু আক্তার নেমে যায়। ঐ দিন দুপুর ০২.৩০ ঘটিকায় লঞ্চটি ইলিশা হতে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। লঞ্চের স্টাফরা উক্ত কেবিনটি তিন জন বাচ্চা সহ দুই জন মহিলাকে ভাড়া দেয়। লঞ্চটি ঘাট ছেড়ে আসার প্রায় দুই ঘন্টা পর মহিলাদের সাথে থাকা একটি বাচ্চা খাটের নিচে প্রবেশ করলে একজন মহিলা খাটের নিচ থেকে বাচ্চাটিকে আনতে গেলে লাশ দেখে চিৎকার শুরু করলে বিষয়টি লঞ্চের স্টাফদের নজরে আসে।
লঞ্চ কর্তৃপক্ষ সদরঘাট এসে বিষয়টি ঢাকা সদরঘাট নৌ থানা পুলিশকে অবহিত করলে সদরঘাট নৌ থানা পুলিশ অজ্ঞাত ব্যক্তির পরিচয় সনাক্তের জন্য পিবিআইকে অবহিত করে। পিবিআই ঢাকা মেট্রো উত্তর এর ক্রাইমসিন টীম নিহত জাকির হোসেন বাচ্চুর পরিচয় সনাক্তের পর বিষয়টি পিবিআই ঢাকা জেলা পুলিশকে অবহিত করে।
পিবিআই ঢাকা জেলা পুলিশ এর চৌকস একটি দল ঘটনাস্থল পরিদর্শনসহ বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করে। পরে গত ৩১/০৭/২০২২ ইং তারিখ ডিসিষ্টের ১ম স্ত্রী সুরমা আক্তার বাদী হয়ে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করে। মামলা নং- ৯৪, তারিখ- ৩১/০৭/২০২২ ইং, ধারা- ৩০২/২০১/৩৪ দঃ বিঃ। মামলাটি পিবিআই’র শিডিউলভুক্ত হওয়ায় গত ০১/০৮/২০২২ ইং তারিখ মামলাটি অধিগ্রহণ করার ৪৮ ঘন্টার পূর্বেই আসামী গ্রেফতার করে পিবিআই ঢাকা জেলা।
গ্রেফতারকৃত আসামী আরজু আক্তার গত ০২/০৮/২০২২ ইং তারিখ হত্যাকান্ডের বর্ণনা দিয়ে বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত মিশকাত শুকরানা’র নিকট ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী প্রদান করেন।
© স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০২০ Developed By Agragami HOST