ছাঁদ খোলা বাসে প্রধানমন্ত্রীর ছবি আপনার কাছে কেমন লাগছে?

প্রকাশিত: ১২:৩৫ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ২৫, ২০২২

ছাঁদ খোলা বাসে প্রধানমন্ত্রীর ছবি আপনার কাছে কেমন লাগছে?

আলোকিত সময়ঃ দেশে মেয়েদের পোশাক নিয়ে আলোচনা – সমালোচনা যখন তুঙ্গে ঠিক তখনই দেশের এক ঝাঁক মেয়ে শর্ট প্যান্ট পড়ে সবুজ মাঠের বুকে লাল রঙের জার্সি পড়ে দৌড়ে বেড়িয়েছে বেশ দাপটের সাথে। বলা যায় বিদেশের মাটিতে নব্বই মিনিট সময় লক্ষ কোটি মানুষের নাভিশ্বাস তুলেছিল বাংলার সহজ সরল মনা এক ঝাঁক মেয়ে। এই নব্বই মিনিট সময়ের রেশ আমাদের এখনোও কাটে নি। এটা থাকবে আরো বেশ কিছুদিন।

বিষয়টি আমাদের জন্য গৌরব আর অহংকারের। গর্ব করার মতো ঘটনা তারা ঘটিয়েছে অর্থাৎ সাফ গেমে চ্যাম্পিয়ন হয়ে শিরোপা নিয়ে নিজ দেশে ফিরেছে লাল সবুজের পতাকা হাতে নিয়ে। আমি তাদের অভিনন্দন জানাই।

আগামীতে ওরা এর ধারাবাহিকতা বজায় রাখুক সেই প্রত্যাশা করি। কিন্তু বিশ্ব জয় করা ক্রিকেট টিমের পুরুষ সদস্যদের যদি বাংলার বাঘ বলা হয় আমি ওদের বাঘিনী বলবো না, বলবো চিতা বাঘ। বাঘ যদি শক্তি ও সম্মাণের প্রতীক হয় তাহলে চিতাবাঘও তা-ই হবে। এটাকে ছোট করে দেখার অবকাশ নেই।

এরই মধ্যে শিরোপা নিয়ে এই চিতা বাঘের দল দেশে এসেছে। বিমানবন্দরে তাদের রঙিন মোড়কে ব্যতিক্রমী অভ্যর্থনা জানানো হয়েছে। বিমানবন্দর থেকে তাদের বাসের ছাঁদ কেটে ছাঁদ খোলা বাসে করে মধ্য ঢাকা পর্যন্ত আনা হয়েছে।

বাসে চড়ে শিরোপা জয়ের মধ্যমনিরা বিমানবন্দর থেকে আসার সময় পথে বিলবোর্ডে আঘাত লেগে মাথা ফাটিয়েছ। এবার বুঝতেই পারেন কতোটা অপরিকল্পিত ছিল তাদের আয়োজন।

যার গ্রামের বাড়ির গরিবী হালের ঘরের ছবি ভাইরাল হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ সাইটে। তাদের বেতন বৈষম্য নিয়ে কথা উঠছে তীব্র নিন্দার সাথে। এমনকি শিরোপা জয়ের মূলদের পিছনে রেখে পুরুষ শাসিত সমাজের নায়করা সামনে বসে মিডিয়ার সামনে কথা বলেছে। সবই বিতর্কিত। কোনো আয়োজনেই আমি সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার ছাপ দেখতে পাইনি। এমনকি বিমানবন্দর থেকে তাদের লাগেজ থেকে অর্থ এবং আরো কিছু খোয়া যাবার কথা মিডিয়ার বদৌলতে জানা গেলো।

কোনো কিছুতে তাদের সুন্দর কিছুর আলাপনের আভাস পেলাম না। উল্টো নিজেদের জাহির করার জন্য তেলবাজি করে দেশবাসীর নজর কারতে গিয়ে জাতির পিতা এবং প্রধানমন্ত্রীকে ছোটই করেছে মনে হয় সংশ্লিষ্টরা।

উপরে উল্লেখ করা কোন বিষয় নিয়ে বিতর্কে আমি যাচ্ছি না। আমার আজকের লেখা ভিন্ন প্রসংগ। আমি নিজে একসময় ফুটবল খেলতাম। যে কারণে দেখতে এবং খেলতে পছন্দ করতাম বরাবর। যেকারণে জাপান এসেও নিয়মিত খেলা দেখতাম। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন দলের খেলোয়াড়দের চিত্র তাদের যানবাহনে আঁকতে দেখেছি। আবার আন্তর্জাতিক খেলায় অংশ নিতে আসা কোনো দল বা দেশের বিমানের বেলাতেও একই চিত্র দেখেছি। কখনো খেলোয়াড়দের আনা নেওয়া করতে ব্যবহার করা যানবাহনে সেই দেশের রাষ্ট্রপ্রধানদের কারো ছবি আঁকতে দেখিনি যা দেখলাম আমাদের দেশের মেয়ে খেলোয়াড়দের সাফ গেমে চ্যাম্পিয়ন হয়ে শিরোপা নিয়ে আসার পর তাদের জন্য ব্যবস্থা করা বাসের গায়।

বাসের একপাশে আঁকা ছিল জাতির পিতা এবং অন্য পাশে ছিল প্রধানমন্ত্রীর ছবি। আর ছবি এমনভাবে আঁকা হয়েছে যাতে বাসের উপর দাঁড়িয়ে – বসে থাকাদের ছবি তুললে পর মনে হয় তাদের মাথার উপরেই যেন শিরোপা জয়ীরা নাচছে। ছবি গুলো খুবই দৃষ্টিকটু মনে হয়েছে।

আমার প্রশ্ন, এই বাসে কি জাতির পিতা এবং প্রধানমন্ত্রীর ছবি থাকাটা খুব জরুরি ছিল? কর্তৃপক্ষ তেল দিতে গিয়ে এমন তেলই দিয়েছে যাতে মনে হয় কোথায় কোন তেল দিতে হবে সেটাও যেন তারা ভুলে গেছে। যে কারণে জাতির পিতা এবং প্রধানমন্ত্রীর মাথার উপর তুলে দিল তারা খেলোয়াড়দের। বিষয়টি মোটেও ঠিক হয়নি। পরবর্তী সময় যেন তেল দাতারা তেল দিলেও বুঝে শুনে তেল দেয়। না হলে যে সেই তেলের ফল হবে ভালোর চেয়ে খারাপই। যা মোটেই প্রত্যাশার নয়।

 

লেখকঃ পি আর প্ল্যাসিড, জাপান। সাংবাদিক, লেখক, কলামিস্ট ও সম্পাদক, বিবেক বার্তা

 


মুজিব বর্ষ

Pin It on Pinterest