আইন না মেনে তামাক কোম্পানির কৌশলী বিজ্ঞাপন

প্রকাশিত: ৪:১৬ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ১২, ২০২০

আইন না মেনে তামাক কোম্পানির কৌশলী বিজ্ঞাপন

শাপলা রহমান

দেশে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনে যে কোন প্রকার ধূমপানের দৃশ্য প্রচার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তা স্বত্ত্বেও বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের তোয়াক্কা না করে তামাক কোম্পানিগুলো তাদের প্রচার প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে। অন লাইন ও অফ লাইন উভয় পদ্ধতিকে তারা কাজে লাগিয়ে ফায়দা লুটছে। তামাক কোম্পানিগুলো তাদের পন্যের বিজ্ঞাপন দিতে বেশ কিছু কৌশল অবলম্বন করে সারাদেশে তাদের বিজ্ঞাপন চালিয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে বিক্রির জায়গায় বা সেল পয়েন্টগুলোতে তারা এমন কিছু কৌশল অবলম্বন করছে যাতে সিগারেটের বিজ্ঞাপন বাড়ছে বই কমছে না।তার মধ্যে অন্যতম হলো অনেকগুলো সিগারেট এর প্যাকেট একত্র করে দৃষ্টিনন্দন বক্স তৈরি করা এবং এই বক্স বিক্রিরস্থানে সাজিয়ে রাখা। যাতে দূর থেকে সিগারেটের প্যাকেট মানুষের দৃষ্টিতে আসে। নয়া এ কৌশলে সিগারেট কোম্পানি সারাদেশে তাদের পন্যের বিজ্ঞাপন চালিয়ে যাচ্ছে। বিভিন্ন ফেরিওয়ালাদের কাছে ও মিলছে বিভিন্ন ব্রান্ডের সিগারেট। আবার বিভিন্ন অনলাইন শপ গুলোতে ও ইলেকট্রিক সিগারেটের বিজ্ঞাপন দেয়া হচ্ছে। তামাক কোম্পানি তাদের পন্যের প্যাকেটের সাথে তাদের লোগো আকৃতির বোর্ড বানাচ্ছে। যা তারা বিনা মূল্যে খুচরা সিগারেট বিক্রেতারদের কাছে বিনামূল্যে সরবরাহ করছে। বিনা মূল্যে প্রাপ্ত এসব বোর্ডের মাধ্যমে খুচরা বিক্রেতারা রাস্তার আসেপাশে সহজেই সিগারেটের ভাসমান দোকান দিতে পারছে। যার ফলে সারাদেশে বিশেষ করে জনবহুল জায়গাগুলোতে এসব বোর্ড নির্মিত ভাসমান সিগারেটের দোকান বৃদ্ধি পাচ্ছে। সিগারেটের দোকান যেখানে সেখানে সহজলভ্য হওয়ায় ধূমপায়ীর সংখ্যাও বাড়ছে। তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনে তামাকজাত দ্রব্যের বিজ্ঞাপন সম্পর্কে স্পষ্ট বলা আছে, সকল প্রকার তামাকজাত পন্যের বিজ্ঞাপন নিষিদ্ধ। পৃষ্ঠপোষকতা নিয়ন্ত্রণ সম্পর্কিত বিধানে বলা হয়েছে, কোন ব্যক্তি প্রিন্ট বা ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় বাংলাদেশে প্রকাশিত কোন বই, লিফলেট, হ্যান্ডবিল, পোস্টার, ছাপানো কাগজ, বিলবোর্ড, সাইনবোর্ড বা অন্য কোনভাবে তামাকজাত দ্রব্যের বিজ্ঞাপন প্রচার করা যাবেনা। এ আইন লঙ্ঘন করলে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে ৩ মাস বিনাশ্রম করাদ- বা অনধিক এক লক্ষ টাকা জরিমানা করা হবে। ওই ব্যক্তি যদি দ্বিতীয়বার একই ধরনের অপরাধ করেন তবে তিনি পর্যায়ক্রমে ওই টাকার দিগুণ দ- দিতে হবে। তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন অনুয়ায়ী ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে এ ধরনের বিজ্ঞাপনের বিরুদ্ধে শাস্তি প্রদান করা হলেও এ হার কমছে না। কারণ হিসেবে বলা যায়, ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে এ ধরনের বিজ্ঞাপনের জরিমানার টাকা তামাক কোম্পানি পরবর্তীতে ক্ষতিগ্রস্ত দোকানীদের দিয়ে দিচ্ছে। ফলে ব্যক্তিগতভাবে দোকানীরা ক্ষতিগ্রস্থ না হওয়ায় তামাক কোম্পানির দেয়া বিজ্ঞাপন অপসারন করেছে না। গ্লোবাল এডাল্ট টোব্যাকে সার্ভে (গ্যাটস) ২০০৯ সালের গবেষণায় দেখা যায়, বাংলাদেশে তামাকজাত দ্রব্যের বিজ্ঞাপন নিষিদ্ধ হওয়ার পরও তামাক কোম্পানির অবৈধ বিজ্ঞাপনের কারণে প্রায় শতকরা ৩৮ দশমিক ৪ ভাগ প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি তামাক পন্যের বিক্রয়স্থলে বিজ্ঞাপন দেখছে এবং তাদের তামাক পন্যের প্রতি আকর্ষণ বাড়ছে। ধূমপান ও তামাকজাত পণ্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইনের ৫ ধারা অনুযায়ী, প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কোনো তামাকজাত পণ্য বা তামাকের ব্যবহার প্রদর্শনের উদ্দেশ্যে যে কোনো ধরনের বাণিজ্যিক কার্যক্রম পরিচালনা নিষিদ্ধ এবং দ-নীয় অপরাধ। কোনো ব্যক্তি কিংবা প্রতিষ্ঠান আইনের এ বিধান লঙ্ঘন করলে অনূর্ধ্ব তিন মাস বিনাশ্রম কারাদ- বা অনধিক এক লাখ টাকা অর্থদ- বা উভয় দ-ে দ-িত হওয়ার বিধান রয়েছে। তবে বিদ্যমান আইনি বিধিনিষেধ এড়িয়ে আগ্রাসী প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে। এসব প্রচারণা বন্ধে জনজনকে সচেতন করতে সরকারের আইন প্রয়োগকারী সংস্থাসহ বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থাগুলোকেও একযোগে কাজ করতে হবে। তামাক কোম্পানীগুলোর উপর সরকারের উচ্চ করারোপ করতে হবে।

লেখক: সাংবাদিক ও উন্নয়নকর্মী।


মুজিব বর্ষ

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

Pin It on Pinterest