ঢাকা ২ ডিসেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ | ১৭ অগ্রহায়ণ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৮:৩৬ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ১৯, ২০২৩
নিজস্ব প্রতিনিধিঃ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সামান্য কোনো ত্রুটিও সাধারণ মানুষ অনেক বড় করে দেখেন। কিন্তু মুদ্রার অপর পাশ দেখে না কেউ। এবার র্যাব সদস্যকে বিভিন্নভাবে হয়রানি, হুমকি ও মিথ্যা মামলা দিয়ে নাজেহালের ঘটনা ঘটেছে। নাটোর জেলার বড়াইগ্রাম উপজেলার বালিয়া গ্রামের মৃত আব্দুর রউফ মুন্সীর ছেলে মোঃ মিজানুর রহমান। মিজান অত্যন্ত সততা ও নিষ্ঠার সাথে দীর্ঘদিন ধরে পুলিশের এএসআই পদে দায়িত্ব পালন করছিলেন। বর্তমানে র্যাব হেডকোয়ার্টারে দায়িত্ব পালন করলেও মিজান একজন নিরহংকার ও সরল সোজা মানুষ। পেশাগত জীবনেই নয়, তার নিজ গ্রামেও মিজানের নামে নেই বিন্দুমাত্র অভিযোগ। অথচ এমন একজন সৎ ও নিষ্ঠাবান ব্যক্তিকে নানাভাবে হুমকি, মানহানি ও মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে।
শুনে অবাক হলেন ? অবাক হবারই কথা। র্যাব সদস্য মিজান চাকরির সুবাদে ঢাকায় থাকলেও তার পরিবার গ্রামেই থাকেন। দীর্ঘ চাকরি জীবনে কষ্টে অর্জিত অর্থ দিয়ে স্বপ্ন দেখেছিলেন একটি বাড়ি বানাবেন। কিন্তু সেই স্বপ্ন এখন দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে। কারন মিজানের জমির পার্শবর্তী কথিত অংশীদার বাদশা নামে একজন শুরু করেছেন বিভিন্ন ষড়যন্ত্র। কিছু অসাধু ব্যক্তির কুপরামর্শ ও বাদশার লালসা পূরণ করতে র্যাব সদস্য মিজানের নামে অবৈধভাবে জমি দখলের অভিযোগ তুলেছেন বাদশা ওরফে মামলা বাজ বাদশা। এমনকি জন্মগত প্রতিবন্ধী না হয়েও এলাকায় প্রতিবন্ধী বলে সহানুভূতি নিয়ে করে যাচ্ছেন নানা অসংগতি।
উল্লেখিত প্রকৃত জমির মালিক মিজানের বিরুদ্ধে মামলা, কুৎসা রটনা, বাড়িতে গিয়ে হত্যার হুমকি, মিজানের ছেলেকে আঘাত করাসহ সকল দুষ্কর্ম করছেন বাদশা। বাদশা কিছু ভাড়াটে বাহিনী ও কলেজ পড়ুয়া ছাত্রদের নিয়ে এসে করেছেন ভুয়া মানববন্ধনও। যারা জানতোও না কিজন্য মানববন্ধন হয়েছে!
পরবর্তীতে খোলস পাল্টে মিজানের বাড়িতে গিয়ে মিজানের পরিবারকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে তার ছেলেকে আহত করে মিজানের বাড়ির কাজ বন্ধ করে দেয় বাদশা। আইনের প্রতি সম্মান রেখে চললেও এখন বাদশার ভয়ে মিজান বাড়ির কাজ করতে পারছেন না। কারন বালিয়া এলাকার অনেকেই নাম পরিচয় গোপন রাখার শর্তে বলেন, বাদশা একজন সন্ত্রাস। সে প্রতিবন্ধীর ছদ্মবেশে অনেক যায়গায় সন্ত্রাসী কর্মকান্ড চালিয়েছে। তাই ভয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস পায় না। তাছাড়া সে যে কারো নামে মামলা দিতে ওস্তাদ তাই অনেকে বাদশাকে মামলা বাজ বাদশাও বলে। যেখানে একজন র্যাব সদস্যকে এভাবে হয়রানি করা হচ্ছে, সেখানে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা কোথায় !!
কথিত প্রতিবন্ধী বাদশা এলাকার গুটিকয়েক ভাড়াটে লোকজন এবং বাদশার কর্মস্থল কলেজের কিছু ছাত্রদের নিয়ে একটি নাটকীয় মানববন্ধন সাজিয়ে মিজানকে হয়রানি করে যাচ্ছে। তাই ঘটনার সত্যতা যাচাইয়ের জন্য সরেজমিনে অনুসন্ধান করা হয়। অনুসন্ধানে গিয়ে দেখা যায় ঘটনা সম্পূর্ণ উল্টো। বাদশা মিয়া তার জমি দখলের যে অভিযোগ করেন, তার কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি। মূলত বাদশার কোন জমি ই নেই এবং বাদশর নামে কোন প্রকার জমির কাগজপত্র খুঁজে পাওয়া যায়নি।
শিক্ষার্থীদের নিয়ে কেনো এমন মানববন্ধন করা হলো মর্মে জানতে চাইলে কলেজের অধ্যক্ষ মোঃ ইছাহাক আলী বলেন, ‘বাদশা আমার প্রতিষ্ঠানে চাকরি করে। তাই কিছু ছাত্রদের সাথে তার চেনা-জানা রয়েছে। সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে বাদশা ছাত্রদেরকে মানববন্ধনে নিয়ে গিয়েছে। তবে এ বিষয়ে আমি কিছু জানিনা। আমার কাছ থেকে কোনো অনুমতি নেয়নি এবং কলেজ ছাত্রদেরকে নিয়ে মানববন্ধন করে বাদশা অন্যায় করেছেন।
বাদশা প্রতিবন্ধী কি না জানতে চাইলে অধ্যক্ষ বলেন, আমার জানা মতে বাদশা প্রকৃত প্রতিবন্ধী না। সে গাছ থেকে পড়ে গিয়ে বা একটা দুর্ঘটনায় তার পায়ে সমস্যা হয়। তবে সে জন্মগত প্রতিবন্ধী না।
জমি সংক্রান্ত সমস্যার বিষয়ে অত্র এলাকার লোকজনের কাছে জানতে চাইলে তারা সাংবাদিকদের বলেন মিজান তার নিজের জমিতেই বাড়ি তুলছেন। কেউ কারো জমিতে হাত দেয়নি। মিজানের জমিতে মিজান আছে, বাদশার জমিতে বাদশা আছে। মিজানরা এই জমি প্রায় ৩০ বছর ধরে ভোগ করছে। কখনো কোনো কথা শুনিনি। এখন মিজান এই জমিতে বাড়ি করার কারণেই বাদশা এসব বলছে। তাছাড়া এখানে আশেপাশের জমি মিজানের। তাই তার পাশের জমিতেই সে বাড়ি তুলেছে। এখানেতো কোনো সমস্যা হওয়ার কথা না।
অসহায় প্রতিবন্ধী দাবি করা বাদশার মানববন্ধন ও জমি দখলের অভিযোগের ব্যাপারে স্থানীয় জনগণের কাছে আরো জানতে চাইলে এলাকাবাসী সাংবাদিকদের বলেন, বাদশা প্রতিবন্ধীর নামে ভন্ডামি করে বেড়ায়। সে কোনো প্রতিবন্ধী না। একটা সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়। এরপর থেকে সে প্রতিবন্ধী কার্ড বানিয়ে এসব করে বেড়ায়। আর এই জমির বিষয়ে অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা। কারণ মিজান অত্যন্ত ভালো মানুষ। মিজানের নিজের জমিতে সে বাড়ি তুলছে। এখানে বাদশার জমি আলাদা রয়েছে। উল্টো মিজানের জমির দাম বেশি হওয়াই, বাদশা এখন এসব পায়তারা করছে। অনেকে বলেন, বাদশা একজন মুখোশধারী লোক। ও একসময় সন্ত্রাসী করতো। ওর ভয়ে কেউ মুখ খুলতে চাই না। তাছাড়া বাদশা কথায় কথায় মামলার ভয় দেখায়। সে মাঝেমধ্যেই এমন মামলা কান্ড ঘটায়। তাই লোকজন তাকে মামলাবাজ বাদশাও বলে। যেকোনো বিষয়ে ঝামেলা পাকিয়ে মামলা দিয়ে হয়রানি করাই ওর কাজ।
বাদশার অভিযোগের বিষয়ে তার মায়ের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, মিজান আমাদের জমিতে বাড়ি তুলেছে। ওই জমি আমাদের। কিন্তু বাদশার মা-বাবা জমির কোনো যথোপযুক্ত কাগজপত্র দেখাতে পারেননি।
তাছাড়া বাদশার বাবা-মা বাদশাকে প্রতিবন্ধী বলে দাবি করেন। তারা বলেন, বাদশা জন্মগত প্রতিবন্ধী । কিন্তু স্থানীয় লোকজন, তার কলেজের অধ্যক্ষ, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, প্রতিবেশী এমনকি বাদশা নিজেও স্বীকার করেন যে, বাদশা প্রতিবন্ধী নন। একটা সড়ক দুর্ঘটনায় সে আহত হয়। কিন্তু সে জন্মগত প্রতিবন্ধী নয়। অর্থাৎ বাদশা তার পরিবারকে মিথ্যা শিখিয়ে রেখেছেন। দীর্ঘ অপেক্ষার পর দেখা মেলে কথিত প্রতিবন্ধী বাদশা অরফে মামলা বাজ বাদশা অরফে সন্ত্রাসী বাদশার। নাটকীয় মানববন্ধন, জমি দখলের অভিযোগ, মামলা দায়ের, মিজানের বাড়িতে গিয়ে গালিগালাজ ও হত্যার হুমকিসহ সকল বিষয়ে কথা হয়।বাদশার জমির দলিল সহ সকল কাগজপত্র যাচাই করা হয়।
© স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০২০ Developed By Agragami HOST