ঢাকা ২৬ এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১৩ বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৪:২৬ অপরাহ্ণ, আগস্ট ১৪, ২০২৪
বামনা(বরগুনা)প্রতিনিধি:
বরগুনার বামনা উপজেলার মুজিব বর্ষ উপলক্ষে একক গৃহ নির্মানের জন্য ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে আশ্রয়ন-২ প্রকল্পের আওতায় তিনটি প্রকল্পের ভূমি উন্নয়নে মাটির কাজ বাস্তবায়নের জন্য বরাদ্দকৃত ১৪৯.২৩২মেট্রিকটন খা
বরগুনা জেলা প্রশাসকের কার্যালয় এস এ শাখার ৩১.১০.০৪০০.১১১.১৪.০২৩.
বামনা উপজেলা নির্বহী অফিসার মোঃ আল ইমরান উপ-বরাদ্দকৃত প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়নের জন্য প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি করেন বামনা উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান মোঃ আলতাফ হোসেন হাওলাদার, বামনা সদর ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান মোঃ আব্দুল জলিল খান এবং বুকাবুনিয়া ইউনিয়ন পরিষদের ৯ নং ওয়ার্ড সদস্য মোঃ স্বপন হাওলাদারকে।
এই প্রকল্পের সভাপতিরা বামনা উপজেলা পিআইও অফিস, বামনা উপজেলা খাদ্য অফিস এবং বরগুনা সদর খাদ্য গুদামে গম ডেলিভারির জন্য শুধু ডিওতে স্বাক্ষর করেন। কাজ বাস্তবায়ন এবং গম বিক্রি সংক্রান্ত কোনো কিছুই তারা জানেন না। তাদেরকে বামনা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ আল ইমরান স্বাক্ষর দিতে বলেছেন তারা স্বাক্ষর করেছেন। ২৭ মার্চ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বামনা উপজেলা সদরের ব্যবসায়ীদের কাছে ৪৪ লক্ষ টাকা গম বিক্রি করে সমুদয় টাকা তিনি নিয়েছেন। এমনকি প্রকল্পের সভাপতিরা জানেন না যে তাদের নামে বরাদ্দকৃত গম কত টাকায় বিক্রি করেছেন এবং কি কাজ করেছেন। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন প্রকল্পের সভাপতিবৃন্দ।
বামনা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ আল ইমরান এক্সেভেটর দিয়ে আবাসন প্রকল্পের পাশের হলতা নদীর বক্সচর কেটে নামমাত্র মাটি ভরাট করেই আধিকাংশ অর্থ আত্মসাৎ করেছেন বলে জানান আশ্রয়ণ প্রকল্প এলাকার বাসিন্দারা।
আশ্রয়ণ প্রকল্প এলাকার বাসিন্দারা আরো জানান, গত রমজানের আগে আমাদের আবাসনের নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। ঈদের পরে ঘর হস্তান্তর করার কথা থাকলেও এখনো পর্যন্ত কোন কাজ করেনি। শুধু দেয়ালগুলো গেথে ওভাবেই ফেলে রেখেছে। ঘরের দেয়ালের নিচে কোন বেইজ দেয়া হয়নি, মাটির উপরে ইট গেথে দেয়াল করা হয়েছে। জোয়ারের পানি ওঠায় কয়েকটি ঘরের দেয়াল ভেঙ্গে পড়ে যায়। পরে আবার সে ভাঙ্গা দেয়াল ঠিক করে দেয়া হয়। মাটি ভরাট না করায় সামান্য জোয়ারেই আমাদের ঘরের মেঝে পানিতে তলিয়ে যায়। ঈদের পর থেকে কাজ বন্ধ করে ফেলে রাখায় আমরা আমাদের বাচ্চাকাচ্চা নিয়ে খুব কষ্টে আছি। আমরা ইউএনও স্যারের কাছে মাটি ভরাটের কথা বললে তিনি বলছেন যার যার জায়গায় তার তার নিজেদেরকে মাটি ভরাট করে নিতে বলেন। তিনি এখানে মাটি ভরাট করে দিতে পারবেন না। ইউএনও স্যার ঠিকমতো এখানে আসেনও না দেখতে। মাঝখানে একবার এসেছিলেন তাও মোটরসাইকেলে যাওয়ার সময় চলন্ত অবস্থায় দেখেছেন, এখানে নামেননি তিনি। তিনি আমাদের মহিলাদেরকে তার সামনে যাওয়া এবং তার সাথে কথা বলতেও নিষেধ করেছেন। আমরা দ্রুত মাটি ভরাট করে আমাদেরকে জোয়ারের পানি থেকে রক্ষা এবং আমাদের ঘরের কাজ শেষ করার দাবি জানাই।
বামনা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আল ইমরানের বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ রয়েছে যে, তিনি ঠিকমতো অফিস না করে প্রায় সময়ই তাবলীগে থাকেন। তিনি অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কে জোর করে তাবলীগে পাঠান। কেউ তাবলীগে যেতে না চাইলে তার বেতন বন্ধ করার হুমকি দেন। তাবলীগপন্থী না হলে তার কাছে গিয়ে কেউ সহযোগীতা পায় না। তিনি বামনায় তাবলীগপন্থী একাংশ কে নিয়ে একটি সিন্ডিকেট তৈরি করেছেন।
তাবলীগপন্থী না হওয়ায় অনেক মাদ্রাসার মাহফিল বন্ধ করে দেয়ার অভিযোগও আছে তার বিরুদ্ধে। তেমনি একজন ভুক্তভোগী বামনা সদর ইউনিয়নের পূর্ব সফিপুর গ্রামের নেসারিয়া জামালিয়া হাফিজিয়া মাদ্রাসার পরিচালক মোহাম্মদ জামাল মুসল্লী। তিনি জানান, তাবলীগপন্থী মুফতি হাবিবুল্লাহর পরামর্শ মত আমি আমার মাদ্রাসা পরিচালনা না করায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আল ইমরান আমার মাদ্রাসার মাহফিল বন্ধ করে দেন। লক্ষাধিক টাকা ব্যয়ে মাহফিলের জন্য তৈরিকৃত গেইট তিনি ভেঙে দেন। আমাকে তার অফিসে ডেকে নিয়ে অপমান করেন এবং হাবিবুল্লাহর কথা মতো মাদ্রাসা না চালালে তিনি আমার মাদ্রাসা বন্ধ করে দেয়ার এবং আমাকে গ্রেফতারের হুমকি দেন।
এছাড়াও বামনা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আল ইমরান সরকারি বিভিন্ন প্রকল্পের টাকা থেকে উপজেলার বামনা সদর ইউনিয়নের সোনাখালি গ্রামে মুফতি হাবিবুল্লাহর নির্মানাধীন পাঁচতলা ভবন নির্মাণে প্রথমতলার নির্মাণের সমুদয় টাকা দিয়েছেন। এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত হাবিবুল্লাহর নির্মানাধীন ভবনের যে কাজ হয়েছে তার নির্মাণ ব্যয় হয়েছে প্রায় এক কোটি টাকার অধিক।
অপরদিকে বামনা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আল ইমরান বহুল আলোচিত আবেদ আলী চাচা ৩৪ তম বিসিএস ক্যাডার।
ইউএনও মোঃ আল ইমরান বামনা উপজেলা সদরের পুরাতন বামনা বেরিবাধের পাশের ভূমিহীনদের ভালো ঘর কোন রকম নোটিশ ছাড়াই ভেঙে ফেলেছেন এবং তাদের নিজেদেরকেই সেই ঘর ভেঙে নিতে বাধ্য করেন। এব্যাপারে বরগুনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের এক কর্মচারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে বাধা দিলে সেই কর্মচারীকে তিনি সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার জন্য গ্রেফতারেরও হুমকি দেন। এ ব্যাপারে ভুক্তভোগী পুরাতন বামনা আবাসনের বাসিন্দা সুমন দাস বলেন, পুরাতন বামনা বেরিবাধে আমরা নতুন করে ঘর তুলে ছিলাম। এবং আরো কয়েকটা পরিবার সেখানে নতুন করে ঘর তুলেছিলো। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আল ইমরান আমাদের কে জোরপূর্বক সেই ঘর ভেঙে ফেলতে বাধ্য করেন।
আরো অভিযোগ রয়েছে যে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার স্ত্রী ডাঃ ফাতিমা বেগম বামনা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মেডিকেল অফিসার হিসেবে কর্মরত আছেন। তিনি ইউএনওর প্রভাব বিস্তার করে বামনা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যোগদান করার পর থেকে জরুরী বিভাগের রোস্টারে তার নাম থাকলেও এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত কোনদিনই জরুরি বিভাগে ডিউটি করেননি।
এব্যাপারে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়নকারী কর্মকর্তা মোঃ তরিকুল ইসলাম জানান, এ ব্যাপারে আমি কিছু বলতে পারবোনা এটা সম্পূর্ণ উপজেলা নির্বাহী অফিসার জানেন।
এই প্রকল্পের সভাপতি বামনা উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান মোঃ আলতাফ হোসেন হাওলাদার, বামনা সদর ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান মোঃ আব্দুল জলিল খান এবং বুকাবুনিয়া ইউনিয়ন পরিষদের ৯ নং ওয়ার্ড সদস্য মোঃ স্বপন হাওলাদার জানান, আমরা বামনা উপজেলা পিআইও অফিস, বামনা উপজেলা খাদ্য অফিস এবং বরগুনা সদর খাদ্য গুদামে গম ডেলিভারির জন্য শুধু ডিওতে স্বাক্ষর করি। কাজ বাস্তবায়ন এবং গম বিক্রি সংক্রান্ত কোনো কিছুই আমরা জানিনা। আমাদেরকে বামনা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ আল ইমরান স্বাক্ষর দিতে বলেছেন আমরা স্বাক্ষর করেছি।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ আল ইমরান বলেন, সবগুলো ঘরের কাজই আমি ঠিকঠাক মতো করতেছি এবং যেই ঘরের কাজগুলো থেমে আছে সেগুলো খুব দ্রুত কাজ শুরু হবে। অন্যান্য অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি
© স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০২০ Developed By Agragami HOST