পঞ্চগড়ে একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার ৪ বছর ধরে ভাতা বন্ধ : দুর্বিষহ জীবনযাপন

প্রকাশিত: ৯:৪৬ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ২২, ২০২০

পঞ্চগড়ে একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার ৪ বছর ধরে ভাতা বন্ধ : দুর্বিষহ জীবনযাপন

 মামুনুর রশীদ, পঞ্চগড় প্রতিনিধি: ভাঙ্গা বেড়া ও টিনসেট ঘরে বসবাস মুক্তিযোদ্ধা আফতাব উদ্দীনের। রাতে ঘুমানোর সময় বেড়ার ফাঁকা দিয়ে বাতাস ঢুকলে তিনি ঠাঁন্ডায় কেঁপে ওঠেন। গায়ে দেয়ার মত তেমন ভালো কম্বল নেই। বাড়ির ঘর গুলোও তেমন ভালো না। ভাতা নেই তাই ঠিক করতে পারছেন না বাড়ি-ঘর। গত চার বছর ধরে মুক্তিযোদ্ধা ভাতা বন্ধ হয়ে আছে পঞ্চগড় সদর উপজেলার সাতমেড়া ইউনিয়নের হরেয়া পাড়া গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা আফতাব উদ্দীনের । ফলে ছেলে মেয়ে নিয়ে দুর্বিষহ জীবন যাপন করছেন তিনি । একদিকে সংসারে অভাব-অনটনে দিনাতিপাত করছেন অন্যদিকে উচ্চ রক্তচাপ, শারিরিক দূর্বলতা সহ নানা অসুখে ভূগছেন তিনি। টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারছেন না। বয়সের ভারে ঠিকমত চলাফেরা করতে সমস্যা হচ্ছে তার। ভাতা বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে মানসিক ভাবে ভেঙ্গে পড়েছেন তিনি। ভাতার জন্য এই বয়সে নানা জায়গায় দৌড়ঝাঁপ করেছেন কিন্তু কার কাছে গেলে এ সমস্যার সমাধান হবে তা তিনি জানেন না। তার বড় ছেলে জাহিদুল ইসলাম ( ৩৫ ) জানান আমার বাবা একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা। ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধুর ডাকে দেশ স্বাধীন করার জন্য ছাপিয়ে পড়েছিলেন যুদ্ধে। মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সকল দলিল-প্রমাণাদি তার আছে। কিন্তু হঠাৎ করে কেন আমার বাবার মুক্তিযোদ্ধা ভাতা বন্ধ হয়ে গেছে বুঝতে পারছি না । বাড়িভিটা ছাড়া আমাদের কোন জমি নেই। আমি দিনমজুর হিসেবে কাজ করি অন্যের বাড়িতে। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আমার আকুল আবেদন তিনি যেন আমার বাবার মুক্তিযোদ্ধা ভাতা আবার চালু করে দেন। মুক্তিযোদ্ধা আফতাব উদ্দীন জানান ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধুর ডাকে আমরা মহান মুক্তিযুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়েছি। আমি ৬ নম্বর সেক্টরে যুদ্ধ করেছি। আমি প্রথমে দেবনগর থেকে যুদ্ধ শুরু করে জেলার বিভিন্ন এলাকায় যুদ্ধ করেছি। আমার মুক্তিযোদ্ধা সার্টিফিকেট সহ সকল দলিল-প্রমাণাদি থাকার পরেও আজ আমি ৪ বছর ধরে ভাতা পাইনা। দেশরত্ন শেখ হাসিনা ১৯৯৬ সাল থেকে ভাতা দেওয়া শুরু করেন। আমি গত ১৩/১৪ বছর ধরে ভাতা পাচ্ছিলাম। সর্বশেষ ১০/১২/২০১৫ সালে এক সাথে তিনমাসের ভাতা আট হাজার টাকা করে মোট ২৪ হাজার টাকা তুলি। এরপরে কি কারণে আমার ভাতা বন্ধ হয়ে গেছে আমি জানিনা। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমার আকুল আবেদন তিনি যেন আমার ভাতা আবার চালু করে দেন। এটাই আমার শেষ বয়সের চাওয়া। সদর উপজেলার সাতমেরা ইউনিয়নে হরেয়া পাড়া গ্রামের বাসিন্দা হবিবর রহমান ( ৭৪) জানান, আফতাব উদ্দীন একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা। তার ২ ছেলে ২ মেয়ে । আমি তাকে মুক্তিযুদ্ধ করতে দেখেছি। যদিও আমি মুক্তিযোদ্ধা না তারপরও আমি তাদের যুদ্ধকালীন সময়ে দেখতে যেতাম ও খোঁজ খবর নিতাম। তার মুক্তিযোদ্ধা ভাতা বন্ধ হয়ে আছে। সরকার যেন তার ভাতা পুনরায় পাবার ব্যবস্থা করে দেন। এদিকে পঞ্চগড় সদর উপজেলার মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ইসমাইল হোসেন বলেন, মুক্তিযোদ্ধা আফতাব উদ্দীনের নাম উপজেলা যাচাই-বাছাই কমিটির “ক” তালিকায় নাম আছে। তবে তার ভাতা বন্ধ হওয়ার বিষয়টি নতুন গেজেট প্রকাশের পর পরিস্কার হবে সে পুনরায় ভাতা পাবে কি না। এটি সরকারের ব্যাপার আমাদের করার কিছুই নেই।


মুজিব বর্ষ

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

Pin It on Pinterest