ঢাকা ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৯ ভাদ্র, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৯:৪৬ অপরাহ্ণ, জুলাই ২৫, ২০২২
সাগর হোসাইন , বদলগাঁছী, নওগাঁ, প্রতিনিধিঃ
নওগাঁর বদলগাছীতে ছেলের চুরি ও ছিনতাই মামলা ধাঁমাচাপা দিতে লাকি আক্তার (৩৭) নামের এক নারীর বিরুদ্ধে মিথ্যা ধর্ষণ চেষ্টা মামলা সাজানোর অভিযোগ উঠেছে। লাকি আক্তার উপজেলার মহেশপুর গ্রামের মামনুর রশিদের স্ত্রী। চুরি ও ছিনতাই মামলার আসামী ছেলে শুভ হোসেন(২৫) ও ভাতিজা আশিক হোসেন(২৪)।
জানা যায়, উপজেলার মহেশপুর গ্রামের মোজাম্মেল হোসেনের ছেলে সেনা সদস্য মাসুদ রানা চাকুরির পাশাপাশি বিলাশবাড়ী ইউনিয়নে ক্যাবল টেলিভিশন নেটওর্য়াক ( ডিস) ও ইন্টারনেট ব্যাবসা করে আসছেন। তার ব্যাবসার দেখভাল করেন প্রতিবেশী ভাগিনা শুভ হোসেন। গত মে মাসের শুরুর দিকে শুভ হোসেন ওই ডিস লাইন দেখভালে অপারগতা স্বীকার করে কাজের সন্ধানে ঢাকায় চলে যায়। এর পর কালবৈশাখী ঝড়ে সমস্ত ডিস সংযোগ লন্ডভন্ড হয়ে যায়। এসময় ডিস লাইন দেখভালের জন্য লোক খুজতে থাকেন মাসুদ রানা। কাউকে না পেয়ে কোলা গ্রামের আব্দুল জলিলের ছেলে মিঠু হোসেন (২৭) কে ডিস লাইন পরিচালনার জন্য বলেন।
মিঠু প্রথমে লাইনের দ্বায়িত্ব নিতে রাজি না হলেও বারবার অনুরোধে মাসিক ১৩ হাজার টাকা মাসুদকে দেওয়ার শর্তে দুই বছরের চুক্তিতে দ্বায়িত্ব নেয়। পরে বিচ্ছিন্ন ডিস লাইন প্রায় ৭০ হাজার টাকা খরচ করে পূনরাই নির্মান করেন। এক মাস অতিবাহিত হবার পর ১৩ হাজার টাকা মাসুদ রানাকে পরিশোধ করেন। পরে জুন মাসের শেষের দিকে শুভ হোসেন আবারও গ্রামে ফিরে আসেন এবং মিঠুকে ডিস লাইন ছেড়ে দেবার জন্য চাপ ও বিভিন্ন রকমের হুমকি প্রদান করেন। পরিশেষে ১৯ জুলাই ডিস লাইনটি মিঠুর নিকট হতে জোড় পূর্বক শুভ কেড়ে নেয়। মিঠু তার খরচের ৭০ হাজার টাকা দাবী করলে প্রান নাশের হুমকি দেয় শুভ। এরপর ঈদের দ্বিতীয় দিন গত ১১ জুলাই মিঠু বাড়ি হতে পারসোমবাড়ি বাজারে আসার পথে শুভ হোসেন, তার ফুফাতো ভাই মিথ্যা ধর্ষণ চেষ্টা মামলার সাক্ষি আব্দুল খালেকের ছেলে আসিক হোসেন ও সেনা সদস্য মাসুদ রানার পিতা মোজাম্মেল হোসেন মিঠুর উপর অর্তকিত হামলা চালিয়ে মারধর করে বাম হাত ও কনুই আঙ্গুল ভেঙ্গে ফেলে এবং তার কাছে থাকা ১ লক্ষ ৪৫ হাজার টাকা ছিনতাই করে নেয়। এ ঘটনায় মিঠু বাদী হয়ে বদলগাছী থানাতে গত ১৫ জুলাই একটি মামলা দায়ের করে। অপরদিকে শুভ হোসেন বাড়ি আসার পর হতে একই এলাকার লক্ষিপুর, মহেশপুর, ভগবানপুর ও তাজপুর গ্রাম হতে নিয়মিত ডিস ও ইন্টারনেটের তার- মেশিন চুরি হতে থাকে। যা আশিক ও কাজল নামে স্থানীয় দুই ছেলেকে নিয়ে শুভ চুরি করতো। নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি নিয়ে ঝামেলা হলে কাজল হোসেন সব ঘটনা ওই এলাকার ডিস ও ইন্টারনেট ব্যাবসায়ী আশরাফুল ইসলাম, রাসেল হোসেন ও রিপন হোসেনকে বলে দেয়। পরে এ বিষয়ে রাসেল ও রিপন তার চুরির অভিযুক্ত শুভকে হুমকি-ধামকি ও ভয়ভীতি দেখায় এবং আশরাফুল ৫ জুলাই বদলগাছী থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করে।
এরপর ২০ জুলাই শুভ হোসেন আদালত হতে জমিন নেয় এবং একই দিনে তার মা লাকি আক্তার ছেলের মামলাকে ধাঁমাচাপা দেওয়ার উদ্দেশ্যে নওগাঁ জেলা জজ কোর্টের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনালে রাসেল, মিঠু, রিপন ও আশরাফুলকে জরিয়ে একটি মিথ্যা ধর্ষণ চেষ্টা মামলা দায়েরের আবেদন করেন। বিজ্ঞ আদালত মামলাটিকে আমলে নিয়ে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের নিকট তদন্তের জন্য নির্দেশ দেয়। বাদী লাকি আক্তার মামলার আরজিতে উল্লেখ করেন যে, গত ৯ জুলাই(ঈদুল আজহার আগের দিন) দুপুর ১ টা ৩০ মিনিটে পারসোমবাড়ি বাজারের মধ্যে মাদ্রাসার সামনে ৪ জন মিলে তাকে বিবস্ত্র করে ধর্ষনের চেষ্টা করেন। প্রকাশ্য দিবালোকে বাজারের মধ্যে এতবড় একটি ঘটনা অথচ বাজারের কেউই তা জানেন না। এমন কি ওই মামলার ৩ নম্বর সাক্ষি নিজেই অবগত নয় ঘটনার বিষয়ে। এ মামলার ২নং সাক্ষি তার আপন ভাই ও আর ১নং সাক্ষি সেনা সদস্য মাসুদ রানার মামা। মিথ্যা মামলা দিয়ে নিরেহ মানুষকে ফাঁসানোর চেষ্টার এ ঘটনার তীব্র নিন্দা সহ এর সঙ্গে জরিতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী জানিয়েছেন সচেতন মহল।
ধষর্ণ চেষ্টা মামলার বাদী লাকি আক্তার বলেন, আমার ছেলেকে মারধরের খবর পেয়ে সেখানে গেলে ওরা আমাকে ধর্ষণ চেষ্টা করে। তবে সেখানে বাজারের মধ্যে দিনের বেলা সাক্ষী ব্যতিত আর লোকজন ছিল কিনা প্রশ্ন করলে এর কোন স্বদউত্তর দিতে পারেনি।
ধর্ষণ চেষ্টা মামলার ৩নং সাক্ষী বাদীর আপন দেবর দুধকুড়ি গ্রামের জেকের আলী(জাকির গোয়াল) বলেন, এ বিষয়ে আমি কোন কিছুই জানি না । মামলা করার পর লাকি আমার বাড়ি এসে বলেছে একটি মামলায় নাকি আমাকে সাক্ষী করা হয়েছে। তবে সেটা কি মামলা সেটাও আমি জানিনা।
এ মামলার বিবাদী রাসেল হোসেন ও রিপন বলেন, এলাকার সকলেই জানে লাকি একজন দেহ ব্যবসায়ী নারী। তিনি মামলায় উল্লেখ্য করেছেন যে এক রাতের জন্য নাকি আমরা তাকে ২০ হাজার টাকা দিতে চেয়েছি। এলাকার লোকমুখে আছে যে এক প্যাকেট বিস্কুট দিতে চাইলেই নাকি সে শুয়ে পরে। আর তাকে এক রাতের জন্য ২০ হাজার টাকা। বিষয়টি হাস্যকর। মামলাটি সম্পর্ন মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। মানহানিকর এই মিথ্যা মামলাকারীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।
ঘটনাস্থলের স্থানীয় চাঁ দোকানী জুয়েল হোসেন, কাপর ব্যাবসায়ী রুহেলসহ একাধিক ব্যবসায়ী বলেন, ধর্ষণ চেষ্টা তো দূরের কথা ঔই দিন লাকি আক্তারকে আমরা কেউ এখানে আসতে দেখিনি। তবে তার ছেলে শুভ এসেছিল। শুভর সঙ্গে রাসেল, মিঠু ও রিপনের ডিস লাইন নিয়ে সামান্য কথা কাটাকাটি দেখেছি। পরে ঐদিন সন্ধ্যায় তা মিমাংসাও হয়েছে শুনেছি।
পারসোমবাড়ি বাজার বনিক সমিতির সাধারন সম্পাদক মশিউর রহমান ও সহ সভাপতি সাবলু হোসেন বলেন, বাজারের মধ্যে দিনে দুপুরে প্রকাশ্য দিবালোকে এতবড় একটি ঘটনা অখচ এতদিন হয়ে গেল আমরা কেউই জানিনা সেটা কেমনে হয়। এমন ঘটনা বাজারে মোটেও ঘটেনি। মনে হয় ছেলের বিরুদ্ধে মামলার কাউন্টার হিসেবে এই মামলা করা হয়েছে।
বদলগাছী থানার অফিসার ইনর্চাজ আতিয়ার রহমান বলেন, লাকি আক্তার নামে কোন নারী এমন অভিযোগ নিয়ে থানায় আসেনি। এরকম গুরুত্বর অভিযোগ নিয়ে কেউ থানায় এলে মামলা নেওয়া হোক বা না হোক অভিযোগ নিয়ে অবশ্যই তা তদন্ত করে দেখা হয়।
© স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০২০ Developed By Agragami HOST