ঢাকা ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৯ ভাদ্র, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৮:৫৭ অপরাহ্ণ, আগস্ট ২৪, ২০২২
রাজশাহী ব্যুরো : রাজশাহীর পবা উপজেলার খড়খড়ি মোড়ে সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্দেশনা অমান্য করে মহাসড়কের পাশের খাল ভরাটের অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে গত মঙ্গলবার (২৩ আগষ্ট) দুপুরে রাজশাহীর জেলা প্রশাসক ও সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী ও গতকাল বুধবার পবা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহীর পবা উপজেলার খড়খড়ি বাইপাস মোড় সংলগ্ন মাংস পট্টির পূর্ব পাশের খাল ৭.০০ শতক (আনুমানিক) জায়গা গত ২৫ মে থেকে ভরাটের কাজ করছিল স্থানীয় রাবেয়া, তার স্বামী হারুন অর রশীদ, শামসুল, সোহেল ও আহসান আলী (নাইটগার্ড) সহ স্থানীয় কয়েকজন ব্যক্তি। দীর্ঘদিন ধরে এই খালে হাটের কিছু ময়লা ও সড়কের পানি এই খালে নামতো। এ কারণে কখনো জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়না। এ অভিযোগ সড়ক বিভাগ রাজশাহীর নির্বাহী প্রকৌশলী বরাবর লিখিত আকারে জানানোর পর সংশ্লিষ্ট কর্র্র্তৃপক্ষ ঘটনাস্থলে গিয়ে সরকারী খাল ভরাট বন্ধ করে দেয়। সড়ক বিভাগের এ নির্দেশনার পর কয়েকদিন উল্লেখিত ব্যক্তিরা খাল ভরাটের কাজ বন্ধ রাখে। কিন্ত কিছুদিন থেমে থাকার পর গত জুলাই মাসের ২৫ তারিখ গভীর রাত থেকে আবারো ট্রাকে করে মাটি নিয়ে এসে ভরাটের কাজ শুরু করে তারা। এমন অভিযোগ ২য় বার সড়ক বিভাগ রাজশাহীর নির্বাহী প্রকৌশলী বরাবর দেওয়ার পর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ খাল ভরাটকারী উপরে উল্লেখিত খাল ভরাটকারীদের ৬ জনকে সরকারী খাল ভরাট বন্ধ ও সে পর্যন্ত তারা খালের যে অংশটুকু ভরাট করেছিল তা নিজ খরচে বালি ও মাটি উঠিয়ে খাল পুনরায় উন্মুক্ত করার জন্য ২ আগষ্ট লিখিত নোটিশ প্রদান করে। নোটিশটি সড়ক উপ-বিভাগ-২ রাজশাহীর উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী (সওজ) (চঃদাঃ) শাহ মো: আসিফ স্বাক্ষরিত। অত্র নোটিশে দ্রুত সময়ের মধ্যে মাটি ভরাটকারীদের মহাসড়ক সংলগ্ন সরকারী জমিতে অবৈধভাবে নির্মিত স্থাপনা সম্পূর্ণ নিজ খরচে দ্রুততম সময়ে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়। অন্যথায় সরকারী বিধি মোতাবেক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে নোটিশে উল্লেখ করা হয়।
নোটিশ পাওয়ার পর খাল ভরাটকারীরা কয়েকদিন খাল ভরাট থেকে বিরত থাকে। তারপরও তারা মাটি সরিয়ে নেয়নি। সরকারী নির্দেশ অমান্য করে খাল থেকে মাটি সরিয়ে নেয়নি অন্যদিকে তারা ২২ আগষ্ট সোমবার বিকেল থেকে আবারো মাটি ভরাট করতে শুরু করে ও ভরাট করা মাটি সমান করতে থাকে প্রকাশ্য দিবালোকে গাড়ী দিয়ে। বিষয়টি স্থানীয়রা জরুরী সেবা ৯৯৯ এ কল দিয়ে জানালে মতিহার থানার একটি টহল দল ঘটনাস্থলে যায়। তখনো মাটি সমান করার কাজ চলছিল। কিন্ত পুলিশ মাটি ভরাট করার কাজে ব্যবহৃত যন্ত্রটি জব্দ বা ভরাটকারীকে আটক করেনি। এরপর মাটি ভরাটকারী গাড়ীটি চলে যায়। তারপরও পুলিশ ব্যবস্থা নেয়নি। খাল ভরাট করার কাজে ব্যবহৃত গাড়ীর চালক বকুল জনসম্মুখে স্বীকার করেছেন যে, তাকে দুই হাজার টাকার বিনিময়ে উপরে উল্লেখিত খাল ভরাটকারীরা ভাড়া করে। সহযোগী ৩ জন হলেন, স্থানীয় পিয়ারুল ও পলাশ এবং পারভেজ। পিয়ারুল সাংবাদিকদের বলেন, সোহেল নামের একজন তাদের টাকা দিয়ে ভাড়া করেছিল। পুলিশ বাধা দিলে আমরা চলে এসেছি।
সরকারি নির্দেশ অমান্য করে বার বার মাটি ভরাটকারীরা মহাসড়কের পাশের খাল ভরাট করে মার্কেট নির্মাণের চেষ্টা করছে। তারপরও তাদের আইনের আওতায় নিয়ে এসে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছেনা। এ অবস্থায় এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। শুধু তাই নয় সরকারী এই খালটি সংশ্লিষ্ঠ কর্তৃপক্ষ অর্থাৎ সড়ক বিভাগের অজান্তেই খাল ভরাটকারীরা খালটি অন্য মানুষের কাছে অর্থের বিনিময়ে ভাড়া দিয়েছে। খালটি ভরাট বন্ধের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ ও খাল ভরাটকারীদের আইনের আওতায় নিয়ে আসার জন্য অভিযোগে উল্লেখ করা হয়। নাম না প্রকাশ করার শর্তে স্থানীয় একব্যক্তি বলেন, খাল ভরাটকারীরা একের পর এক সরকারী নির্দেশ অমান্য করে চলেছেন তারপরও তাদের আইনের আওতায় আনা হচ্ছেনা। বিষয়টি নিয়ে সরকারের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করছি। যাতে কেউ সরকারী খাল দখল করতে না পারে।
ঘটনাস্থলে গিয়ে খাল ভরাট বন্ধ করা মতিহার থানার এএসআই সেলিম বলেন, ৯৯৯ এর কল পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে খাল ভরাট বন্ধ করে দিয়েছি। আমাকে ওসি স্যার খাল ভরাট বন্ধ করতে বলেছিল তাই বন্ধ করা হয়েছে। ভেকু মেশিন জব্দ করা যেত কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাকে কাউকে আটক বা মেশিন জব্দ করতে বলা হয়নি। এ জন্য করিনি। তবে আমাদের দেখে তারা পালিয়ে গেছে।
এ বিষয়ে সড়ক ও জনপথ বিভাগ রাজশাহীর নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল হাকিম এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমরা খাল ভরাটকারীদের লিখিত নোটিশ দিয়ে খাল ভরাট বন্ধের জন্য নির্দেশনা দিয়েছিলাম। সেই সাথে যেটুকু তারা ভরাট করেছে সেটুকুও মাটি উঠিয়ে নিয়ে উন্মুক্ত করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। কিন্ত খাল ভরাটকারীরা আমাদের নির্দেশ অমান্য করে আবারো খালটি ভরাট করছে। আমরা এখন খাল ভরাটকারীদের বিরুদ্ধে থানায় জিডি করবো। আইন অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। সরকারী খাল ভরাট করার কোনো সুযোগ নেই।
© স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০২০ Developed By Agragami HOST