করোনার প্রভাব: এবার রাজশাহীতে নেই বাহারি ধরণের ইফতারি পসরা

প্রকাশিত: ৭:৩৪ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ২৭, ২০২০

করোনার প্রভাব: এবার রাজশাহীতে নেই বাহারি ধরণের ইফতারি পসরা
ওমর ফারুক, রাজশাহী ব্যুরো : করোনা ভাইরাসের প্রভাবে অন্যান্য বছরের মতো শিক্ষানগরী খ্যাত রাজশাহী মহানগরীতে এবার বসছেনা না বাহারি ধরনের ইফতারি পসরা দোকান। নগরীর কোথাও ইফতার সামগ্রীর পসরা সাজিয়ে দোকান বসাতে দেখা যায়নি। বাজার বা পাড়া-মহল্লায় এবার ইফতারি দোকান না বসায় মুসল্লীরা নিজ বাড়িতে বাড়িতে ইফতারি আয়োজন করছেন। নিজেরাই তৈরি করছেন পছন্দের ইফতার সামগ্রী। করোনার প্রভাবে বাজারে ইফতারি না পেলে কি হবে থেমে নেই ইফতার সামগ্রী তৈরি। পহেলা রমজান থেকেই রাজশাহী মহানগরীর বাড়িতে বাড়িতে আসর নামাজের পর থেকেই শুরু হয় ইফতার সামগ্রী তৈরি। সাধ এবং সাধ্য অনুযায়ী মহানগরবাসী তৈরি করছেন ইফতার সামগ্রী। বাইরের ইফতার সামগ্রী এবার কিনে না পেলে কি হবে কিন্তু কমতি নেই আনন্দের। কারণ নিজ হাতে তৈরি ইফতারি যেন পরিবারের সদস্যদের আনন্দ বাড়িয়ে দিচ্ছেন বহুগুণে। নগরবাসী নিজ বাড়িতে বাড়িতে যে সমস্ত সামগ্রী তৈরি করছেন তার মধ্যে রয়েছে ছোলা পিয়াজু, বেগুনি, নিমকি, জিলাপি, খিচুড়ি, বিরানি, শরবত সহ বিভিন্ন ধরনের ইফতার সামগ্রী। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাংলাদেশে করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব বাড়ার পর থেকেই চলতি বছরের গত ১৭ মার্চ থেকে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়। তারপর থেকে রাজশাহী থেকে দূরপাল্লার বাস চলাচল ও সকল দোকানপাট বন্ধ ঘোষণা করে দেওয়া হয়। এরপর রাজশাহীতে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ায় চলতি মাসের ১৪ এপ্রিল থেকে রাজশাহী জেলা অনির্দিষ্টকালের জন্য লকডাউন ঘোষণা করে দেয়া হয়। এ পর্যন্ত রাজশাহীতে ৯ জন আক্রান্ত হয়েছেন। এরমধ্যে ২৬ এপ্রিল একজন মারা গেছেন। এর মধ্যেই আসে পবিত্র মাহে রমজান। প্রতিবছর রাজশাহী মহানগরীর অন্যতম প্রাণকেন্দ্র সাহেব বাজার, মনি চত্বর, জিরো পয়েন্ট, গণকপাড়া, রানীবাজার, বাটার মোড়, রেলগেট, কোর্ট স্টেশন, ভদ্রাসহ বিভিন্ন স্থানে বড় বড় রেস্টুরেন্ট কে কেন্দ্র করে বসানো হতো বাহারী ধরনের ইফতার সামগ্রীর দোকান। আর এসব দোকান থেকে জোহর নামাজের পর থেকেই ইফতার সামগ্রী বিক্রি শুরু হয়। বিকেল চারটা পর্যন্ত গ্রাহকের আনাগোনা কম থাকলেও আসরের নামাজের পর থেকে ইফতার শুরু ১০ মিনিট আগ পর্যন্ত বিক্রি হয় ইফতার সামগ্রী। ক্রেতাদের পছন্দ অনুযায়ী বিক্রেতারাও তৈরি করেন বাহারি ধরনের ইফতার সামগ্রী। আবার স্কুল কলেজের ছাত্র-ছাত্রীদের কথা চিন্তা করে স্টুডেন্ট প্যাকেজ তৈরি করতেন বড় বড় রেস্টুরেন্ট মালিকরা। দাম কম থাকায় ছাত্র ছাত্রীরা এসব রেস্টুরেন্টে ইফতার করার জন্য ভিড় জমাতেন। রমজান মাসের রোজা কে স্মরণ করে রাখতে ইফতারি আয়োজনে কোন ধরনের কমতি রাখতেন না নগরীর উচ্চ বিত্তবান মানুষরা। নগরীর উচ্চবিত্তবান মানুষ নামিদামি হোটেল রেস্টুরেন্ট থেকে ইফতার সামগ্রী কিনতেন। আর ক্রেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য রেস্টুরেন্ট মালিকরা একেক দিন একেক রকম ইফতার সামগ্রী বিক্রি করতেন। পহেলা রমজান থেকেই শুরু হতো উৎসব আমেজের মধ্য দিয়ে ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের ইফতার সামগ্রী কেনা। শুধু উচ্চবিত্তবান ও মধ্যবিত্তরা ইফতার সামগ্রী কিনতো তা নয় রাজশাহী মহানগরীর বিভিন্ন ফুটপাত ও পাড়া মহল্লার দোকানে শুধু রমজানকে কেন্দ্র করেই ইফতার সামগ্রী দোকান বসানো হতো। এরা শুধু রমজান মাসেই ইফতার সামগ্রী বিক্রি করত। ফুটপাতের এসব দোকান থেকেই নগরের নিম্নবিত্ত মানুষেরা ইফতার সামগ্রী কিনতেন। শুধু তাই নয় মাঠা ও বিভিন্ন ধরনের শরবত বিক্রি হতো প্রচুর। দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ক্রেতাদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে থাকতো। আর ক্রেতাদের চাহিদা পূর্ণ করতে সব সময় ব্যস্ত থাকেন দোকানের কর্মচারী। কিন্তু এবারের মাহে রমজানে যেন দেখা গেছে একেবারেই ভিন্ন চিত্র। এ যেন এক অচেনা নগর। প্রতি বছরের তুলনায় মহামারী ভাইরাস করোনার প্রভাবে সব কিছুতেই যেন ভাটা পড়েছে। দিনের বেলায় নগরের বিভিন্ন অলিগলিতে দু’একটি রিকশা বা মানুষ চলাচল করলেও রাতের বেলা হয়ে পড়ে নিস্তব্ধ সম্পূর্ণ অচেনা ভুতুড়ে এক নগরী। ঠিক এই সময়ে এবার এসেছে মুসলমানদের আত্মশুদ্ধি ও আল্লাহ তাআলার নৈকট্য অর্জনের পবিত্র মাস মাহে রমজান। এ রমজানে সবকিছুই যেন বদলে গেছে। নগরের বড় বড় রেস্টুরেন্টে ইফতার সামগ্রী তো দূরের কথা ছোট ছোট হোটেল দোকানগুলোতেও এবার বিক্রি হচ্ছে না ইফতার সামগ্রী। কোথাও কোনো দেখা যায়নি আয়োজন। তাইতো নগরবাসী কোন দোকান বা হোটেল রেস্টুরেন্টের আশায় না থেকে নিজেরাই তৈরি করছে ইফতার সামগ্রী। বিভিন্ন স্থানে খোঁজ নিয়ে এমন চিত্রই দেখা গেছে। আসরের নামাজের পর থেকেই প্রত্যেকটি বাড়িতে বাড়িতে শুরু হচ্ছে ইফতার সামগ্রী তৈরি। বিশেষ করে বাড়িতে বাড়িতে যেসব ইফতার সামগ্রী তৈরি হচ্ছে তার মধ্যে রয়েছে ছোলা, পিয়াজু, বেগুনি, বুন্দিয়া, খিচুড়ি ও বিরানি তারা বাড়িতে বাড়িতে যেন আনন্দ উৎসবে সাথেই তৈরি করছেন। নগরের জলি নামের এক গৃহবধূর সাথে কথা হলে তিনি জানান, অন্যান্য বছর বাজার থেকেই বেশিরভাগ ইফতার সামগ্রী কেনা হতো। কিন্তু এবার সেই সুযোগ না থাকায় নিজ বাড়িতেই বিভিন্ন ধরনের ইফতার সামগ্রী তৈরি করছি। এটাতে ভালো লাগছে। শুধু তিনি নন শারমিন নামের এক গৃহবধূ বলেন, বাড়িতে ইফতার সামগ্রী তৈরি করতে খুব খারাপ লাগছে না ভালই লাগছে। নিজের পছন্দ অনুযায়ী বিভিন্ন ইফতার সামগ্রী তৈরি করছি। এটা পরিবারের সদস্যরা আনন্দ এবং উৎসবের মতোই মনে করছে। অনেক বাড়ির গৃহবধূ ছাড়াও পুরুষরাও ইফতারি তৈরী করছেন বলে জানা গেছে। করোনার প্রভাবে রাজশাহী মহানগরবাসীর স্বাভাবিক জনজীবনে ভাটা পড়লেও এর মধ্যে এসেছে পবিত্র মাহে রমজান। আল্লাহর নৈকট্য লাভ ও আত্মশুদ্ধির এই মাসে নগরবাসী সবকিছু ভুলে গিয়ে আল্লাহর দরবারে দোয়া করছেন যাতে আবার সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে যায়। খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে আল্লাহতালা সবকিছু স্বাভাবিক করবেন বলে নগরবাসী প্রত্যাশা।

মুজিব বর্ষ

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

Pin It on Pinterest