এসএম স্বপন,বেনাপোলঃ
কিছুদিন আগে বেনাপোল ১নং গোডাউনের সামনে থেকে গ্যাসের চুলা জ্বালানোর জন্য দুটি গ্যাসলাইট কিনে বাসায় নিয়ে আসি। ৪-৫ দিন আগে হঠাৎ দুপুর বেলা গিন্নি দেখি আমাকে বলছে, রান্না ঘরের লাইটটা ভেঙেচুরে মেঝেতে পড়ে আছে। কে করেছে? আমি বললাম আমি তো রান্না ঘরে ঢুকিনি। তাহলে কে করলো? বরাবরের মতো দুষ্টুমির সূত্র ধরে সন্দেহের তীর গিয়ে পড়লো ৬ বছরের বড় ছেলে সোয়াদের উপর। নিশ্চয়ই সে কোন কিছু টানাটানি করতে গিয়ে মেঝেতে ফেলেছে। বকাঝকার এক পর্যায়ে সোয়াদের সরল স্বীকারোক্তী আমি করিনি। অগত্য সেটা মেনে নিতে হলো। কিন্তু আজ সকাল আনুমানিক সাড়ে ৮ টার দিকে গিন্নি রান্না ঘরে রান্না করছে। আর আমি ঘুমের ঘোরে বিকট একটা শব্দ শুনলাম। ভাবলাম গিন্নি রান্না করতে গিয়ে কিছু একটা মেঝেতে ফেলে দিয়েছে। কয়েক মিনিট পর গিন্নির ডাকাডাকি। ওগো ওঠো, এই দেখ আজ আবার মিকশেপের উপরে রাখা লাইটটা ব্লাস্ট হয়ে, মেঝেতে পড়েছে। আমি তড়িঘড়ি করে ঘুম থেকে উঠে রান্নাঘরে গিয়ে দেখি লাইট মশাই ভেঙেচুরে মেঝেতে পড়ে আছে। মনে মনে ভাবলাম এ আবার কোন অশনিসংকেত। দিলাম ভাঙা লাইটের একটা ছবি তুলে ফেসবুকে পোস্ট। যথারীতি বন্ধুদের কমেন্টও সেই একই রকম। কোন অশনিসংকেত। সাবধানে থাকো। কেউ বললো ডেট স্পেয়ার। আমি ভাবলাম তাই, যেহেতু একই দোকান থেকে কেনা। কিন্তু মাথার মধ্যে একটা বিষয়ই ঘুরপাক খাচ্ছে। কেন ব্লাস্ট হলো। লাইট তো এর আগেও অন্য দোকান থেকে অনেক কিনেছি। কোনদিন এমন হয়নি। তবে খটকা ছিল একই দোকান থেকে কেনা লাইট দুটোই বা কেন ব্লাস্ট হলো। প্রশ্ন ছিল মনে। কারণ গ্যাসলাইট সম্পর্কে আমার কোন ধারণাই ছিল না। ঝট খুললোঃ- বাসা থেকে বের হয়ে, বাড়ির নিচের যে দোকান থেকে নিয়মিত গ্যাসলাইট সহ অন্যান্য মালামাল কেনা হয়। সেই দোকানে গেলাম। যদিও ওই লাইট দুটো কেনার সময় উক্ত দোকান বন্ধ ছিল। ঘটনাটি দোকানদারকে কৌতুহল বশত খুলে বলি। তখন দোকানদার বকুল ভাই আমাকে বলেন, আপনি কোন কোম্পানির লাইট কিনেছেন। এটা কি ৩জি কোম্পানির? আমি বললাম তা তো জানিনা। চুলা জ্বালানোর দরকার, তাই আপনার এখন থেকে লাইট কিনে নিয়ে যায়। কিন্তু আপনার দোকান বন্ধ থাকায় অন্য দোকান থেকে কিনেছি। কোম্পানি বলতে পারবো না, তবে আমার কাছে ছবি তোলা আছে। ছবি দেখে তিনি বললেন, ভাই এটা ৩জি কোম্পানির লাইট। আমি খেয়াল করে দেখলাম, ঠিকই তো ৩জি কোম্পানির লাইট। আমি বললাম তাতে সমস্যা কি? তিনি যা বললেন তাতে ভিমরী খেলাম, রহস্য তো ওখানেই। সানলাইট বলে একটা কোম্পানি আছে। যে কোম্পানির একটা গ্যাসলাইট আছে। যেটা আমরা কিনি পাইকারি ৯ টাকা দরে। আর বিক্রি করি ১০-১২ টাকা দরে। এর মধ্যে কিছু লাইট অনেক সময় নষ্ট থাকে। তাই ১০ টাকায় বিক্রি করলে লাভ লস সমান সমান হয়ে যায়। এজন্য অনেক ক্ষেত্রে ১২ টাকায় বিক্রি করতে হয়। অন্যদিকে, ৩জি কোম্পানির একটা গ্যাসলাইট কেনা পড়ে ৫ টাকা দরে। আর বিক্রি ১০ টাকায়। তাই অনেক দোকানদার লাভের আশায় ৩জি কোম্পানির লাইট বিক্রি করে থাকেন। আবছা মনে পড়ে গেল, হ্যা তাই তো আমি বরাবরই তো সানলাইট কোম্পানির লাইট কিনি। অবশেষে শালা রহস্য ভেদ হলো। আমি তো ভেবেছিলাম করোনা, আম্পানে আবার কোন বিপদ সংকেত।
দুটি কথাঃ- গ্যাসলাইটের মতো একটা ডেঞ্জারাস পদার্থ কেন এতো নিম্ন মানের হলো? আর কারাই বা তার অনুমোদন দিলো? এমন লাইট বাংলাদেশের লক্ষ লক্ষ দোকানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। বড় ধরনের দূর্ঘটনা ঘটলে দ্বায় ভার কে নেবে?