দারিদ্র্যতা থামাতে পারেনি তাদেরঃ নিজ মনোবল ও মেধাশক্তিতে পেল এসএসসিতে জিপিএ-৫

প্রকাশিত: ১১:১৪ অপরাহ্ণ, জুন ১২, ২০২০

দারিদ্র্যতা থামাতে পারেনি তাদেরঃ নিজ মনোবল ও মেধাশক্তিতে পেল এসএসসিতে জিপিএ-৫

এসএম স্বপন,বেনাপোল প্রতিনিধিঃ অভাব অনটনের সংসার। নুন আন্তে, পান্তা ফুরায়। বাবা যেন থেকেও, না থাকার মত। পড়াশোনার খরচ ভালো মতো না জুটলেও, এ অদম্য মেধাবীদের সাফল্যে শেষ পর্যন্ত কোন কিছুই বাধা হতে পারেনি। এসএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়ে সবাইকে অবাক করেছেন তারা। এদের কেউ স্বপ্ন দেখছে ডাক্তার হওয়ার আবার কেউবা ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার। এ অবস্থায় সমাজের বিত্তবান মানুষের একটু সহযোগিতা পেলে যশোরের ঝিকরগাছা শংকরপুর রাজবাড়ীয়া গ্রামের এ অদম্য মেধাবীদের ভবিষ্যতের স্বপ্ন পূরণের পথ অনেকটাই সুগম হবে। দুই দরিদ্র ঘরের, দুই দরিদ্র সন্তান গোলাম মোস্তফা ও আকাশ। দুইজনই একই পথের পথিক। মানে দারিদ্র্যতার করাল গ্রাসে ধরা সায়ী দুই মেধাবী ছাত্রই।

যশোরের ঝিকরগাছা শংকরপুর রাজবাড়ীয়া গ্রামের গোলাম মোস্তফা। পিতা পেশায় একজন ঘেরের পাহারাদার। নাম আবুল কাশেম। মাসে যা বেতন পায় তাতে করে সংসার চালাতেই হিমশিম খেতে হয়, সেখানে ছেলের পড়াশুনার খরচ জোগাবেন কিভাবে? ভিটে বাড়ী বলতে সম্বল দেড় কাটা জমিতে টালীর একটা সালা ঘর আর সেখানে তাদের বসবাস। চারজনের অভাব অনটনের সংসারে নিজের অদম্য মনোবলের জেরে পড়াশোনা করে এ বছর গোলাম মোস্তফা এসএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়ে সবাইকে চমকে দিয়েছেন। সে শংকরপুর হরিদ্রাপোতা মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে মানবিক শাখায় এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহন করে জিপিএ-৫ পেয়েছে। স্বপ্ন তার ডাক্তার হওয়ার। কিন্তু স্বপ্নের পথে বাধা দারিদ্র্যতা। ভবিষ্যতে সেই স্বপ্ন পূরণ হবে কিনা এমন শঙ্কা তাড়া করছে তাকে।

গোলাম মোস্তফা বলেন, আমি লেখাপড়ার মাধ্যমে এগিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখি। কিন্তু বাধা শুধু দারিদ্র্যতা।

অন্যদিকে, একই গ্রামের আকাশ। তার পিতা মনিরুজ্জামান মনি পেশায় একজন ভ্যান চালক । সারাদিন ভ্যান চালিয়ে যা আয় করে তাই দিয়ে কোন রকমে সংসার চালান। গ্রামের মধ্যে মাত্র দেড় শতক জমিতে টালীর ছাবড়ি ঘরে বসবাস তার। ভ্যান চালিয়ে সারাদিন যা জোটে, তাই দিয়ে কোন মতে ৪ সদস্যের সংসার চলে। অনেক সময় অনাহারেও থাকতে হয়। এমন পরিবারে জন্ম নেওয়া আকাশ নিজের ইচ্ছা শক্তি দ্বারা অতি কষ্টে পড়াশুনা করে সেও এ বছর শংকরপুর হরিদ্রাপোতা মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে বিজ্ঞান বিভাগে থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছে। ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার স্বপ্নে বিভোর আকাশের পথের বাধাও ওই দারিদ্র্যেতা। আর আকাশের ছোট বোন বাগআঁচড়া গালর্স স্কুলের মেধাবি ছাত্রী। স্কুল একটু দুরে হওয়ায় বাবা প্রতিদিন নিজের ভ্যান চালিয়ে পৌঁছে দেন। দুই ভাই বোনের পড়াশুনা চালাতে তার বাবাকে হিমশিম খেতে হয়। দারিদ্র্যতার মাঝে আকাশের ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার স্বপ্ন কি পূরণ হবে কি, এমন শঙ্কা তারও।

অদম্য মেধাবী এই দুই ছাত্রের পড়াশুনার খরচে সহযোগিতা করলে, তারা তাদের স্বপ্ন পূরণ করতে পারবে বলে জানান হরিদ্রাপোতা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা।

কথা হয় শংকরপুর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ নেতা কবিরুজ্জামান মিঠুর সাথে। তিনি বলেন, রাজবাড়ীয়া গ্রামের দুই গরিব পরিবারে দুই উজ্জ্বল নক্ষত্র গোলাম মোস্তফা ও আকাশ। তারা দুজনই এসএসসি পরীক্ষায় হরিদ্রাপোতা মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তির্ণ হয়েছে। মোস্তফা ডাক্তার হতে চায় আর আকাশ ইঞ্জিনিয়ার হতে চায়। কিন্তু তারা অর্থাভাবে তাদের সেই স্বপ্ন পূরণ করতে পারবেন কিনা সন্দেহ হয়। তাই তিনি সমাজের বিত্তবানদের সাহায্যের হাত বাড়ানোর আহবান জানান।


মুজিব বর্ষ

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

Pin It on Pinterest