নলছিটিতে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ১১ সদস্যের অনাস্থা

প্রকাশিত: ৮:০০ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ৬, ২০২০

নলছিটিতে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ১১ সদস্যের অনাস্থা

মিলন কান্তি দাস,নলছিটি,ঝালকাঠি

নানা অনিয়ম, দুর্নীতি, অর্থ আত্মসাত ও অশালীন আচরণের অভিযোগ এনে ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার সুবিদপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল মান্নান সিকদারের বিরুদ্ধে এবার ইউএনওর কাছে অনাস্থা প্রস্তাব দিয়েছেন ওই ইউনিয়ন পরিষদের ১১ সদস্য।

৬ সেপ্টেম্বর রবিবার সকালে ইউনিয়ন পরিষদের ১১ জন সদস্য লিখিত ভাবে চেয়ারম্যানের অনিয়ম ও দুর্নীতির তথ্য তুলে ধরে অনাস্থা প্রদান করেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মোহম্মদ সাখাওয়াত হোসেন ইউপি সদস্যদের লিখিত অভিযোগ গ্রহণ করে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন। এর আগে গত ১৬ আগস্ট ওই ইউনিয়ন পরিষদের ৯ জন ইউপি সদস্য ঝালকাঠির জেলা প্রশাসক মোহম্মদ জোহর আলী’র কাছে লিখিত অনাস্থা প্রস্তাব দেন। জানা গেছে জেলা প্রশাসক বরাবরে দেওয়া লিখিত অভিযোগেরও তদন্ত শুরু করেছে জেলা প্রশাসন।

ইউপি সদস্যরা অভিযোগ করে বলেন, সুবিদপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আবদুল মান্নান সিকদার ইউপি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই ক্ষমতার অপব্যবহার করে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতি করে আসছেন। তার সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে ইউপি সদস্যদের ভয় দেখিয়ে প্রকল্প বানিয়ে রেজুলেশনে সাক্ষর নিতেন। কিন্তু প্রকল্পের কোন কাজ না করেই লাখ লাখ টাকা আত্মসাত করতেন ইউপি চেয়ারম্যান। এমনকি ইউনিয়ন পরিষদের পুরনো ভবন ভাড়া দিয়ে তিন লাখ টাকা নিজের পকেটে নিয়েছেন তিনি। তাঁর বিরুদ্ধে কথা বললে সদস্য পদ থেকে বরখাস্তের ষড়যন্ত্র, হামলা, মামলা ও মেরে ফেলার হুমকি দিতো চেয়ারম্যান। অবশেষে পরিষদের সকল সদস্যরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে এসব অনিয়ম ও দুর্নীতির রুখে দিতে ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অনাস্থা দেন। জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ দিতে আসেন প্যানেল চেয়ারম্যান মো. মানছুর খান, ফিরোজ আলম সোহাগ জোমাদ্দার, ইউপি সদস্য আমানুর রহমান সুমন, শাহ আলম হাওলাদার, রেজাউর রহমান রেজা, আবদুল জলিল মৃধা, রেজাউল করিম সোহাগ খান, মিজানুর রহমান, শারমিন বেগম, লাভলী বেগম ও রাফিকা বেগম।

লিখিত অভিযোগে জানা যায়, ২০১৫-২০১৬ অর্থবছরে এলজিএসপি-২ প্রকল্পের আওতায় ইছাপাশা মুসল্লিবাড়ির দরজায় আয়রন সেতু নির্মাণের জন্য ৭০ হাজার টাকা বরাদ্দ হয়। কোন কাজ না করেই পুরো টাকা আত্মসাত করেন ইউপি চেয়ারম্যান আবদুল মান্নান সিকদার। সুবিদপুরের নাপিত বাড়ির সেতু থেকে হাবিব হাওলাদারের বাড়ি পর্যন্ত ইট সোলিং রাস্তার জন্য বরাদ্দকৃত ৫০ হাজার টাকা, পশ্চিম গোপালপুর খলিফা বাড়ি থেকে কদম আলীর বাড়ি পর্যন্ত ইট সোলিং রাস্তার বরাদ্দ ৪০ হাজার টাকা, এলজিএসপির বিবিজি প্রকল্পের আওতায় ৬টি গভীর নলকূপ স্থাপনের জন্য পাঁচ লাখ ৪০ হাজার টাকা পুরোটাই কাজ না করে আত্মসাত করেন চেয়ারম্যান। তিনি ২০১৭-২০১৮ অর্থ বছরের এলজিএসপির স্যানিটেশন প্রকল্পের এক লাখ টাকা, সেলাই মেশিন ও দরিদ্র শিক্ষার্থীদের বাইসাইকেল বিতরণের এক লাখ ৬০ হাজার টাকাও আত্মসাত করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। ইউপি চেয়ারম্যান ট্রেড লাইসেন্সের টাকা, জন্ম ও মৃত্যু সনদের টাকা, বিজিডি কার্ডের চাল পরিবহণের খরচের টাকা, হাট বাজার থেকে আদায় করা টাকা ব্যাংকে পুরোটা জমা না দিয়ে আত্মসাত করেন। এছাড়াও ৪০ দিনের কর্মসৃজন কর্মসূচির লেবারদের টাকা কম দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। তিনি ইউনিয়ন পরিষদে শালিস মিমাংসার নামে দুই পক্ষের কাছ থেকে টাকা গ্রহণ করেন। স্থানীয় সংসদ সদস্যর নাম ভাঙিয়ে এবং ক্ষমতার অপব্যবহার করে তিনি অঢেল অর্থ সম্পদের মালিক হয়েছেন বলেও অভিযোগ করেন ইউপি সদস্যরা।

সুবিদপুর ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান মো. মানছুর খান বলেন, আমরা অনেক সহ্য করেছি, চেয়ারম্যান আমাদের নানা ভাবে হয়রানি করছে। তাঁর বিরুদ্ধে কথা বললেই হুমকি আসে। এলাকায় কোন উন্নয়ন হয়নি। মানুষকে যে প্রতিশ্রুতি দিয়ে নির্বাচনে অংশ নিয়েছি, কিছুই করতে পারিনি শুধু চেয়ারম্যানের দুর্নীতির কারণে। নলছিটি উপজেলায় মন্নান চেয়ারম্যানের মতো দুর্নীতিবাজ আর কোন চেয়ারম্যান নেই। তাই তাঁর অপসারণ দাবি করছি।

ইউপি সদস্য ফিরোজ আলম সোহাগ বলেন, চেয়ারম্যান বর্তমানে ঢাকায় আছেন, কিন্তু তিনি কাউকে দায়িত্ব দিয়ে যাননি। পরিষদে অচলাবস্থা বিরাজ করছে। এমনকি তিনি ইউএনওকের অবহিত না করেই ঢাকা গেছেন।
অভিযোগ অস্বাীকার করে ইউপি চেয়ারম্যান আবদুল মান্নান সিকদার বলেন, ইউপি সদস্যদের অনৈতিক প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় তাঁরা অনাস্থা দিয়েছে। আমি কোন অনৈতিক কাজ করি না।

নলছিটি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহম্মদ সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ইউপি সদস্যদের অনাস্থা পেয়েছি। আইনগত ব্যাবস্থা নেওয়া হবে।


মুজিব বর্ষ

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

Pin It on Pinterest