ঢাকা ২ আগস্ট, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১৮ শ্রাবণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ১০:৫৫ পূর্বাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ৩০, ২০২০
প্রথম পর্ব-
আবু রায়হান, জয়পুরহাটঃ
জয়পুরহাটের কড়ই নুরুলহুদা কামিল মাদ্রাসার রেজুলেশন বিহীন ভূয়া প্রতিষ্ঠাতা সদস্য আহমদ ইশতিয়াক এর বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাৎ ও জালিয়াতির অভিযোগ পাওয়া গেছে।
কড়ই নুরুলহুদা কামিল মাদ্রাসার সভাপতি জয়পুরহাট জেলা প্রশাসক বরাবর একটি লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে জানা গেছে, উক্ত মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হওয়ার জন্য আহমদ ইশতিয়াক জয়পুরহাটের কড়ই মৌজায় ৮০৩ দাগে ২৫,০০০/- (পঁচিশ হাজার) টাকা সমমানে ১৪ শতক জমি দান করেছেন। উক্ত দাগে তাদের মোট জমির প্রাপ্যতা হল ৮ শতক। যা রেকর্ডে প্রমানিত। তারা দুই ভাই, এক বোন, উপরোন্ত তাদের বোন উক্ত দাগ থেকে ১০ শতক জমি অনত্র বিক্রি করেছেন। তিনি দলিলে দেখিয়েছেন ৮০৩ দাগে ৪৮ শতকের কাত ১৪ শতাংশ জমি দান করেছেন। বাস্তবে উহা সঠিক নহে। কারণ ৮০৩ দাগে ৪৮ শতক জমিতে অনেক ওয়ারিশের প্রাপ্যতা রয়েছে যা সি, এস, এ আর, এস খতিয়ান দ্বারা প্রমানিত। তথ্য গোপন করে ওয়ারিশদের না জানিয়ে তিনি ১৯৯৭ইং সাল থেকে প্রতিষ্ঠাতা সদস্য পদ দখল করে আছেন যা দীর্ঘদিন গোপন ছিল। বিষয়টি জানা জানি হওয়ার পর সদস্য পদ রক্ষার জন্য আহমদ ইশতিয়াক রেকর্ড সংশোধনের কথা বলে বিভিন্ন অপ-কৌশল চালিয়ে যাচ্ছেন।
কড়ই পশ্চিম পাড়া এলাকার মৃত ইউনুছ আলীর ছেলে ফরহাদ হোসেন কড়ই নুরুলহুদা কামিল মাদ্রাসার সভাপতি জয়পুরহাট জেলা প্রশাসক বরাবর একটি লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করেছেন, উল্লেখিত মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা সদস্য আহমদ ইশতিয়াক ১৯৯৭ইং সাল থেকে অবৈধ ভাবে পদ দখল করে আছেন। ভূয়া দলিলের মাধ্যমে অন্য শরীকের জমি দান করে তিনি সদস্য হয়েছেন যা প্রমানিত সত্য। তাছাড়া তিনি যে প্রতিষ্ঠাতা সদস্য সে মর্মে কোন রেজুলেশন নেই। ২০০৬ইং সালে গভর্নিং বডিতে আলোচনা ছাড়াই জালিয়াতীর মাধ্যমে একটি রেজুলেশন করেছেন কিন্তু শর্ত মোতাবেক ৬ লক্ষ টাকা জমা দেননি। অধিকন্ত অন্যায় প্রভাব খাটিয়ে বিভিন্ন মেয়াদে প্রতিষ্ঠানের সেক্রেটারী পদ দখল করেছিলেন, যা সম্পূর্ণ নীতিমালা বিরোধী।
এলাকার ধর্মপ্রান মুসলমানদের ওয়াকফ দানের মাধ্যমে মাদ্রাসাটি প্রায় ৯৫ একর জমির মালিক ও অনেক সম্পদশালী হয়। প্রতি বছর জমি লীজ, পুকুর লীজ, বাজারের দোকান ঘড় ভাড়া ও অন্যান্য আয়ের মাধ্যমে ৩০ খেকে ৩৫ লাখ টাকা আয় আসে। বিগত ০১-০৩-২০১৬ইং থেকে ১৪-০২-২০১৭ইং সাল পর্যন্ত মাদ্রাসাটিতে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করেন মোঃ নরুনব্বী মন্ডল। গর্ভনিং বডির সদস্য আহমদ ইশতিয়াক (সহ-সভাপতি) অবৈধভাবে ব্যাংক একাউন্ট পরিচালনা করে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের যোগসাযসে মাদ্রাসার লক্ষ লক্ষ টাকা দুর্নীতি করে আত্বসাৎ করেছে। উক্ত সময়ে তারা মাদ্রাসার কোন প্রকার নির্মান বা দৃশ্যমান কোন উন্নয়ন মূলক কাজ ছাড়াই ২৮ থেকে ৩০ লক্ষ টাকা খরচ দেখিয়েছেন। বিষয়টি জনমনে প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে যে, এতো টাকা তারা কোন খাতে ব্যয় করলো। বাংলাদেশ বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আইন ৪৫ এর (২) ধারা মোতাবেক অধ্যক্ষ ও সভাপতি সমন্বয়ে যৌথ ব্যাংক একাউন্ট খুলে আর্থিক লেনদেন পরিচালিত হওয়ার বিধান থাকলেও দীর্ঘদিন ধরে অন্যায়ভাবে প্রভাব খাটিয়ে দুর্নীবাজ সদস্য আহমদ ইশতিয়াক ও অধ্যক্ষের সমন্বয়ে ব্যাংক একাউন্ট পরিচালনা করে মাদ্রাসার লক্ষ লক্ষ টাকা নিয়মিত আত্বসাৎ করেছে। এমনকি ব্যাংকে জমা না করে লক্ষ লক্ষ টাকা ব্যয় করে থাকে যা স্পষ্টতই আইনের লংঘন। ২০০৭/০৮ইং অর্থবছরে মাদ্রাসার জমি ডাকের ২৭ লক্ষ টাকা থেকে ২১ লক্ষ টাকা ব্যাংকে জমা জমা করে বাঁকী টাকা হাতে হাতে খরচ করেছে। এভাবে বিগত ১০ থেকে ১৫ বছরের ব্যাংক হিসাব তদন্ত করলে আরও বড়-বড় দূর্নীতি বেরিয়ে আসবে।
শুধু তাইনয় ইতিপূর্বে এই দূর্নীতিবাজ সদস্য বিভিন্ন সময়ে অত্র মাদ্রাসায় শিক্ষক নিয়োগের বানিজ্য করেছে। প্রমাণ স্বরুপ ২০১৭ইং সালে অধ্যক্ষ নিয়োগের সময় একজন প্রার্থীর কাছ থেকে ২১ লক্ষ টাকা নিয়েছে এবং এ বিষয়ে বম্বু ইউনিয়ন পরিষদে বিচার শালিসে স্বীকারও করেছেন। ২০১৫ইং সালে ৪জন শিক্ষক নিয়োগের সময় প্রায় ৪৫ লাখ টাকার নিয়োগ বাণিজ্য করেছেন মর্মে অত্র এলাকাবাসি সবাই অবগত আছেন। এভাবে নিয়োগ বাণিজ্য করে অত্র প্রতিষ্ঠানের ভাব-মূর্তি ক্ষুন্ন করে গভর্নিং বডিতে থাকার যোগ্যতা হারিয়ে ফেলেছেন। প্রভাব খাটিয়ে গভর্নিং বডিতে তাদের লোকদের রেখে দূর্নীতি অব্যাহত রাখতে নির্বাচিত শিক্ষক প্রতিনিধিদের নাম পরিবর্তন করে বিশস্ত দুইজন শিক্ষকের নাম পাঠিয়েছে। তিনি মনে করেন প্রতিষ্ঠানটি তার পৈত্রিক সম্পত্তি। অথচ সদস্য হওয়ার জন্য যতটুকু প্রয়োজন ততটুকু দেওয়ার বেলাতেও তিনি জালিয়াতী করেছেন।
অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ইশতিয়াক আহমদের সাথে একাধীকবার সরাসরি কথা বলার চেষ্টা করলে তিনি বাড়িতে থেকেও অন্যের দ্বারা মিথ্য তথ্য ও তালবাহানা করলে অবশেষে সংবাদ প্রতিবেদক তার মুঠফোনে ০১৭১২-৮৮৮৯৭৫ নম্বরে যোগাযোগ করে তিনি কড়ই নুরুলহুদা কামিল মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা সদস্য তার কোন রেজুলেশন আছে কিনা জিজ্ঞাসা করলে তিনি সোজা উত্তর না দিয়ে মাদ্রাসার সভাপতি ও অধ্যক্ষের সাথে কথা বলতে বলেন। মাদ্রাসার কোন প্রকার নির্মান বা দৃশ্যমান কোন উন্নয়ন মূলক কাজ ছাড়াই ২৮ থেকে ৩০ লক্ষ টাকা খরচের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি এ বিষয়ে কোন কথা বলতে চাননা এবং বলেন আমিত সহ-সভাপতি। পদাধীকার বলে প্রতিষ্ঠানের প্রিন্সিপাল সদস্য সচিব হওয়ার বিধী থাকলেও প্রভাব খাটিয়ে বিভিন্ন মেয়াদে সদস্য সচিব পদ দখলের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান রেজুলেশন মোতাবেক তিনি তা হয়েছেন এবং এসব কাগজপত্র তো আর পকেটে নিয়ে ঘুরিনা মাদ্রাসার অধ্যক্ষের কাছে গেলেই রেজুলেশনের কপি পাবেন। আহমদ ইশতিয়াকের ভাষ্যমতে উক্ত মাদ্রাসাটিতে সরেজমিনে গিয়ে সেই রেজুলেশনের কপি চাইলে বর্তমান অধ্যক্ষ মাওঃ মোঃ আব্দুর রহমান জানান এরকম কোন রেজুলেশ আমার কাছে নেই।
কয়েক মাস পূর্বে যোগদানকৃত জেলা প্রশাসক ও অত্র মাদ্রাসার সভাপতি মোঃ শরীফুল ইসলাম এর সাথে যোগাযোগ করলে উপরোল্লেখীত বিষয়ে তিনি জানান, এ সংক্রান্ত লিখিত অভিযোগ তিনি পেয়েছেন এবং তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
© স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০২০ Developed By Agragami HOST