কুড়িগ্রামে ৫ কন্যা সন্তানের পর আবারো একসাথে ৩ কন্যার জন্ম

প্রকাশিত: ১১:৫৭ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ১৭, ২০২০

কুড়িগ্রামে ৫ কন্যা সন্তানের পর আবারো একসাথে ৩ কন্যার জন্ম

সাইফুর রহমান শামীম,, কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি।।

এক পূত্র সন্তানের আশায় পর পর ৫ কন্যা সন্তানের জন্ম দেয়া এক জননী আবারো এক সাথে ৩ কন্যা সন্তানের জন্ম দিয়েছেন। এ নিয়ে পরেছে হৈ-চৈ। দরিদ্র দম্পতির ঘরে এতগুলো কন্যা সন্তানের ভরণপোষণ নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন ওই দম্পতি। বর্তমানে শিশু তিনটি স্থিতিশীল থাকলেও মায়ের অবস্থা খুব একটা ভাল নেই। অর্থের অভাবে চিকিৎসা আর খাবার না পেয়ে ঘরের মেঝেতে তিন কন্যা সন্তানকে নিয়ে প্রহর গুণছেন তিনি।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিষয়টি ছড়িয়ে পরলে তিন কন্যাকে দত্তক নেয়ার আগ্রহ দেখিয়েছেন এক দম্পতি। দরিদ্র দিনমজুর বাবা কষ্ট হলেও নিজেরাই সন্তানদের মানুষ করতে চাইছেন।

জানা যায়, কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার হাসনাবাদ ইউনিয়নের দক্ষিণ নওদাপাড়া গ্রামের মৃত: আইয়ুব আলীর বড় মেয়ে ফাতেমার বিশ বছর আগে বিয়ে হয় পাশ্র্ববর্তী ফুলবাড়ি উপজেলার ভাঙ্গামোড় ইউনিয়নের নগরাজপুর গ্রামের দিনমজুর সাইফুর রহমানের সাথে। বিয়ের পর তাদের সংসার এক এক করে ৫টি কন্যার জন্ম হয়। বড় কন্যাক এক বছর আগে বিয়ে দেন। বাকি চারজনের মধ্যে একজন নবম শ্রেণি, একজন সপ্তম শ্রেণি এবং দুইজন শিশু শ্রেণিতে পড়ছে। দরিদ্র পরিবারে এতগুলো সন্তান নিয়ে টানাপোড়নের মধ্যে দিন কাটছে ফাতেমা ও সাইফুর দম্পত্তির। এর মাঝে পুত্র সন্তানের আশায় আবারও গর্ভধারণ করে ফাতেমা। সন্তান প্রসবের জন্য মায়ের বাড়ি হাসনাবাদের নওদাপাড়ায় আসেন ফাতেমা।

ফাতেমার মা রহিমা বেগম নিজেও একজন দরিদ্র মানুষ। বাড়ির পাশের হাফেজিয়া মাদ্রাসায় ঝিয়ের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন তিনি। গত সোমবার ১২ অক্টাবর বিকেলে সেখানেই একসাথ তিন কন্যা সন্তানের জন্ম দেন ফাতেমা। পরিবারের সকলে পুত্র সন্তানের আশা করলেও ফাতেমা এক সাথে তিন কন্যা সন্তান জন্ম দেয়ায় কেউ-ই খুশি হতে পারেননি।

ফাতেমার মামা প্রভাষক মহর আলী জানান, জন্মের পর তিন শিশুর শারীরিক অবস্থা ভালো থাকলেও ফাতেমার শারীরিক অবস্থা নাজুক হয়ে পড়েছে। গত ৬ দিনেও বিছানা ছেড়ে উঠতে পারেনি ফাতেমা। তিনি আরো জানান, ফাতেমা এখনো সংজ্ঞাহীন অবস্থায় রয়েছে। কথা বলার মত অবস্থায় নেই। তবে চিকিৎসা চলছে।

ফাতেমার স্বামী সাইফুর রহমান এই খবরে মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েছেন। কারো সাথে ভাল করে কথা বলছেন না। মহর আলী আরো জানান, তাদের দরিদ্র সংসার এবং আগের ৫ কন্যা সন্তান রয়েছে তাই সদ্য জন্ম নেয়া তিন কন্যা সন্তানদের দত্তক দেয়ার চিন্তা করে ফেসবুক স্টাটাস দেয়া হয়েছিল। তবে এখন সিদ্ধান্ত বদলানো হয়েছে। সন্তানদের মা সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত দত্তক দেয়া হবে না।

কন্যাদের পিতা সাইফুর রহমান জানান, আল্লাহ যা করেছে তা ভালো হয়েছে। কষ্টের সংসার হলেও তাদের মানুষ করতে হবে।

সাইফুরের প্রতিবেশি বাবুল চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, সাইফুরের বাড়ি ভিটে ছাড়া তেমন জমিজমা নেই। সে কখনও সবজি বিক্রি করে কখনও দিনমুজরি করে সংসার চালায়। এতগুলো সন্তানের মুখে খাবার যোগাতে হিমশিম খেতে হয় তাকে। তার শাশুড়ীও দিন এনে দিন খায়। দুই পরিবার দরিদ্রসীমার নিচে বসবাস করে। এরপর একসাথে তিন সন্তানের জন্মে তার (সাইফুরর) মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়েছে। সে মানসিকভাব বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।

নাগেশ্বরী উপজলা নির্বাহী কর্মকর্তা নূর আহম্মদ মাছুম জানান, এ বিষয়টি কেউ আমাকে জানায়নি। তারপরেও খোঁজ খবর নিয়ে ওই তিন সন্তানকে দত্তক যেন না দেয় এবং সরকারের পক্ষ থেকে ওই দম্পত্তিকে সহযাগিতার আশ্বাস দেন তিনি।


মুজিব বর্ষ

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

Pin It on Pinterest