কুড়িগ্রামে বৃষ্টি আর দমকা হাওয়ায় কাঁদাপানিতে লেপ্টে গেছে কৃষকের স্বপ্ন

প্রকাশিত: ৩:৫১ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ২৬, ২০২০

কুড়িগ্রামে বৃষ্টি আর দমকা হাওয়ায় কাঁদাপানিতে লেপ্টে গেছে কৃষকের স্বপ্ন

সাইফুর রহমান তাঁর, কুড়িগ্রাম প্রতিনিধিঃ কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীতে গত কয়দিনের টানা বর্ষণ আর দমকা হাওয়ায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে রোপা আমনসহ বিভিন্ন প্রকার সবজি ক্ষেতের। শতশত কৃষকের স্বপ্নের ক্ষেতের ফসল বর্তমানে কাঁদাপানিতে লেপ্টে আছে।

চলতি রোপা আমন চাষের শুরু থেকে প্রকৃতির সাথে অবিরাম লড়াই চলছে ফুলবাড়ীর কৃষকদের। আমনের চারা রোপনের পরে কয়েক দফা বন্যার ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই অনেক ক্ষেতে দেখা দেয় পোকার আক্রমণ। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ব্যাপক তৎপরতা আর কৃষকদের হার না মানা লড়াইয়ে জয় কৃষকের। ফুলবাড়ীর দিগন্তজুরে খেলা করে সবুজের ঢেউ। কৃষাণ-কৃষাণীরা আশায় বুক বাঁধেন, স্বপ্ন দেখেন ফসল ঘরে তুলে নবান্ন উৎসবে মেতে ওঠার। তবে তাদের আশার পাতে ছাঁই। তাদের স্বপ্নের আমন ক্ষেতের ধান গাছ এখন মাটির সাথে মিশে আছে।

উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে শত শত কৃষকের পাকা, আধাপাকা, কাঁচা ধান মাটিতে লুটিয়ে পড়েছে। বৃৃষ্টি আর বাতাসের তোড়ে নষ্ট হয়ে গেছে ফুলকপি, বাঁধাকপি, বেগুন, লাউ ক্ষেত সহ বিভিন্ন প্রকার সবজি ক্ষেত।বড়ভিটা ইউনিয়নের ঘোগারকুটি গ্রামের কৃষক আশরাফুল আলম বলেন, তার সাড়ে তিন বিঘা জমির ক্ষেতের সদ্য শীষ বের হওয়া স্বর্ণ জাতের ধানের গাছ মাটিতে শুয়ে পড়েছে। সদর ইউনিয়নের চন্দ্রখানা গ্রামের কৃষক শাহ আলম ব্যাপারী জানান, তার সাত বিঘা জমির ধান গাছ এলোমেলো ভাবে জমির কাঁদাপানিতে লেপ্টে আছে। এতে জমির ধান পঁচে নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা দেখছেন তিনি। ভাঙ্গামোড় ইউনিয়নের খোঁচাবাড়ী গ্রামের শামসুল হক জানান, তিনি এবারে দশ বিঘা জমিতে আমন চারা রোপন করেছেন। তার মধ্য প্রায় সাড়ে চার বিঘা জমির ধান গাছ মাটিতে পড়ে গেছে। এতে ফলন হানির পাশাপাশি গো-খাদ্যে সংকটের সম্ভাবনার কথাও বলেন তিনি। একই পরিস্থিতির কথা জানিয়ছেন উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চলের প্রান্তিক কৃষক। চলতি মৌসুমে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে সৃষ্ট দুরাবস্থা কাটিয়ে উঠতে সরকারী সহায়তার দাবি জানান ক্ষতিগ্রস্ত প্রান্তিক কৃষকরা।

উপজেলা কৃষি অফিস সুত্রে জানা গেছে, উপজেলায় এবারে ১১ হাজার ৪২৬ হেক্টর জমিতে আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়েছে। এরমধ্যে ৪৫০ হেক্টর জমির আগাম জাতের ধান কাটা হয়েছে।বন্যায় প্রায় ২৪০ হেক্টর জমির ধান নষ্ট হয়ে গেছে। সবশেষ বৃষ্টি ও বাতাসের কারণে ৪১০ হেক্টর জমির ধান মাটিতে লুটিয়ে পড়ায় ২ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাহবুবুর রশীদ জানিয়েছেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণের ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের তালিকা প্রনয়ণ করার কাজ চলমান রয়েছে। আমরা কৃষকদের সর্বোচ্চ সহায়তার জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছি। পাশাপাশি জমিতে লুটিয়ে পড়া ধান গাছগুলিকে মুটো করে বেঁধে দেয়ার পরামর্শ দিচ্ছি। অাগামীদিনে বড় ধরনের কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে অবশিষ্ঠ জমিতে আশানুরুপ ফলনের আশাবাদ ব্যক্ত করেন পাশাপাশি ধান এবং খড়ের বর্তমান বাজার মূল্যের কারণে কৃষকরা ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারবেন বলেও জানান তিনি।


মুজিব বর্ষ

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

Pin It on Pinterest