পুকুরে চিংড়ি পোনা উৎপাদনে লাগসই প্রযুক্তি উদ্ভাবন

প্রকাশিত: ৪:১৯ অপরাহ্ণ, জুলাই ১৬, ২০২১

পুকুরে চিংড়ি পোনা উৎপাদনে লাগসই প্রযুক্তি উদ্ভাবন

বিশেষ প্রতিনিধি, খুলনা।

সাদাসোনা খ্যাত গলদা চিংড়ির পোনা উৎপাদন এবার হ্যাচারিতে নয়-পুকুরেই উৎপাদন করা যাবে চিংড়ির পোনা। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের মাধ্যমে বায়োফ্লক পদ্ধতিতে গলদা চিংড়িসহ কয়েকটি দেশীয় প্রজাতির মাছ চাষ নিয়ে গবেষণা করে সফলতা পেয়েছেন। দেশীয় আবহাওয়ার উপযোগী করে বৃষ্টির পানির গুণাগুণ রক্ষা করে বিনা অপচয়ে বা পুনরায় পানি ব্যবহার না করেই এ পদ্ধতিতে মাছ চাষের এ লাগসই প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছেন। একই সাথে গবেষকরা মাছের এমন একটি সাশ্রয়ী মূল্যের শর্করা প্রধান খাদ্য উদ্ভাবন করেছেন যাতে মাছের প্রজাতিভিত্তিক প্রকৃত স্বাদ, বর্ণ ও গন্ধ অক্ষুণ্ন থাকে। সলিডার্ড এশিয়া ও ওয়ার্ল্ড ফিসের সহযোগিতায় খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিসারিজ এন্ড মেরিন রিসোর্স টেকনোলজি ডিসিপ্লিন এবং নেদারল্যান্ডের ওয়াগিনন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকবৃন্দের যৌথ উদ্যোগে খুলনা বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষক, পিএইচডি, স্নাতকোত্তর ও স্নাতক পর্যায়ে কয়েকজন শিক্ষার্থী এ গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করেন। গবেষক দলের নেতৃত্ব দেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিসারিজ এন্ড মেরিন রিসোর্স টেকনোলজি ডিসিপ্লিনের প্রফেসর ড. মোঃ নাজমুল আহসান এবং সহযোগী গবেষক হিসেবে ছিলেন খুবি ফিসারিজ এন্ড মেরিন রিসোর্স টেকনোলজি ডিসিপ্লিনের শিক্ষক এসিস্ট্যান্ট প্রফেসর সুদিপ দেবনাথ, এসিস্ট্যান্ট প্রফেসর শাহিন পারভেজ।

এ গবেষণালদ্ধ ফলাফলের ভিত্তিতে মাঠ পর্যায়ে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা উপকূলীয় উপজেলা বটিয়াঘাটার ছয়ঘরিয়া গ্রামের পুকুরে গলদা চিংড়ির পোনা উৎপাদনের লাগসই প্রযুক্তি ব্যবহার করে সফল হয়েছেন। এর ফলে পোনার অভাবে গলদা চিংড়ি চাষ যে সংকটের মুখে পড়েছিল এখন সেক্ষেত্রে নতুন সম্ভাবনার আশা জাগিয়েছে। পুকুরে গলদা চিংড়ির পোনা (পিএল) উৎপাদন এবং তা দিয়ে চিংড়ি চাষ সম্প্রসারিত হলে প্রাকৃতিক ও হ্যাচারি উৎসের উপর নির্ভরতা কমবে। অপরদিকে পুকুরে গলদা চিংড়ির পোনা উৎপাদন সম্ভব হলে এ অঞ্চলের শত কোটি পোনার চাহিদার সংকট পূরণ হবে।ফলে চাহিদা মাফিক পোনা সরবরাহ সম্ভব হওয়ায় বদলে যাবে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সাদাসোনা চাষের চিত্র। একই সাথে পোনার মূল্য ও সংগ্রহের খরচ হ্রাস এবং উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে যার ফলে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে চিংড়ি রপ্তানি ও বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে।
অপরদিকে, খুলনা বিশ^বিদ্যালয়ের একদল গবেষক বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের মাধ্যমে বায়োফ্লক পদ্ধতিতে গলদা চিংড়িসহ কয়েকটি দেশীয় প্রজাতির মাছ চাষ নিয়ে গবেষণা করে সফলতা পেয়েছেন। দেশীয় আবহাওয়ার উপযোগী করে বৃষ্টির পানির গুণাগুণ রক্ষা করে বিনা অপচয়ে বা পুনরায় পানি ব্যবহার না করেই এ পদ্ধতিতে মাছ চাষের এ লাগসই প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছেন। একই সাথে গবেষকরা মাছের এমন একটি সাশ্রয়ী মূল্যের শর্করা প্রধান খাদ্য উদ্ভাবন করেছেন যাতে মাছের প্রজাতিভিত্তিক প্রকৃত স্বাদ, বর্ণ ও গন্ধ অক্ষুণ্ন থাকে।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগে সলিডার্ড এশিয়া ও ওয়ার্ল্ড ফিসের সহযোগিতায় খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিসারিজ এন্ড মেরিন রিসোর্স টেকনোলজি ডিসিপ্লিন এবং নেদারল্যান্ডের ওয়াগিনন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকবৃন্দের যৌথ উদ্যোগে খুলনা বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষক, পিএইচডি, স্নাতকোত্তর ও স্নাতক পর্যায়ে কয়েকজন শিক্ষার্থী এ গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করেন। গবেষক দলের নেতৃত্ব দেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিসারিজ এন্ড মেরিন রিসোর্স টেকনোলজি ডিসিপ্লিনের প্রফেসর ড. মোঃ নাজমুল আহসান।
প্রকল্পের প্রধান ইনভেস্টিগেটর ও সমন্বয়কারী খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিসারিজ এন্ড মেরিন রিসোর্স টেকনোলজি ডিসিপ্লিনের প্রফেসর ড. মোঃ নাজমুল আহসান জানান, “দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে জলবায়ুতে টেকসই খাদ্য নিরাপত্তার উন্নয়নে ইন্টার ডিসিপ্লিনারি গবেষণার অপরিহার্যতাকে সামনে রেখে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগে সলিডারেট এশিয়া ও ওয়ার্ল্ড ফিসের সহযোগিতায় খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিসারিজ এন্ড মেরিন রিসোর্স টেকনোলজি ডিসিপ্লিন এবং নেদারল্যান্ডের ওয়াগিনন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকবৃন্দের যৌথ উদ্যোগে সেন্টার অব এক্সিলেন্স ক্লাইমেন্ট রেসিলেন্স কোস্টাল ফুড সিস্টেম প্রতিষ্ঠা এই প্রকল্পের মূল লক্ষ্য। যার আওতায় বিভিন্ন ধরণের প্রায়োগিক গবেষণা পরিচালিত হচ্ছে। করোনার সময়ে শ্রেণিকক্ষে পাঠদান বন্ধকালীন ডিসিপ্লিনের গবেষকদের তত্ত্বাবধানে ছাত্রছাত্রীবৃন্দ এই গবেষণা চালিয়ে গেছেন।”
তিনি জানান, “সারা বাংলাদেশে গত ১০ বছর ধরে গলদা হ্যাচারীর অধিকাংশই বন্ধ রয়েছে। গলদা চিংড়ি হ্যাচারিতে পোনা উৎপাদনে ধস নামায় এবং উপকূলের প্রাকৃতিক উৎস থেকে পোনা আহরণ সরকারিভাবে নিষিদ্ধ হওয়ায় চিংড়ি চাষীদের পোনা সংগ্রহে সংকটে পড়তে হচ্ছে। ফলে উৎপাদন ও রপ্তানিতে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। প্রতিকূলতার কারণে চাষীরাও আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন। এ অবস্থায় তাদের গবেষণার মূল লক্ষ্য ছিলো-বিকল্প হিসেবে পুকুরের পানিতে গলদা চিংড়ির পোনা উৎপাদন নিয়ে গবেষণা করা এবং এর মাধ্যমে পোনার চাহিদা পূরণ করা। চাষীরা তাদের পুকুরে পোনা উৎপাদন প্রযুক্তি আয়ত্ত করতে পারলে তা সম্ভাবনার নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে। গ্রামের পুকুরে পুকুরে গলদা চিংড়ির চাষ বাড়লে চাষী আর্থিকভাবে লাভবান হবেন।”

তিনি আরো জানান, “আমরা ২০২০ সালের শুরু থেকে এই গবেষণা চালিয়ে পুকুরের পানিতে গলদার পোনা উৎপাদনে লাগসই প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেঠি। খুলনার উপকূলীয় এলাকা বটিয়াঘাটার ছয়ঘরিয়া গ্রামে পুকুরের জমি লিজ নিয়ে এ গবেষণা প্রকল্প পরিচালনা করা হয়েছে। পুকুরের পানিতে উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টি করতে আমরা কিছু প্রাকৃতিক ও প্রযুক্তিগত কলাকৌশল কাজে লাগিয়েছি। এখানে পানিতে লবণাক্ততার মাত্রা, অক্সিজেনের উপস্থিতি, খাদ্য ব্যবস্থাপনা, পানির প্রবহতা, তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ উল্লেখযোগ্য। প্রাকৃতির পরিবেশ ও লাগসই প্রযুক্তির সমন্বয়ে আমরা গলদা চিংড়ির পোনা উৎপাদনে সাফল্য লাভ করেছি।


মুজিব বর্ষ

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

Pin It on Pinterest