জাতীয় সমন্বয় কমিটি গঠনের মাধ্যমে নতুন রাজনৈতিক সংগঠন “রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন” এর আত্মপ্রকাশ

প্রকাশিত: ৯:২৫ অপরাহ্ণ, আগস্ট ৭, ২০২১

জাতীয় সমন্বয় কমিটি গঠনের মাধ্যমে নতুন রাজনৈতিক সংগঠন “রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন” এর আত্মপ্রকাশ

আজ ০৭ আগস্ট ২০২১, শনিবার সকাল ১১ টায় এক অনলাইন প্রতিনিধি সভার মাধ্যমে সারাদেশের সদস্য প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে ৩৭ সদস্য বিশিষ্ট একটি জাতীয় সমন্বয় কমিটি গঠন করার মধ্য দিয়ে “রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন” নামক রাজনৈতিক সংগঠনের আত্মপ্রকাশ ঘটেছে। এই রাজনৈতিক সংগঠন রাষ্ট্র সংস্কারের লক্ষ্যে অনতিবিলম্বে জনগণের অংশগ্রহণে একটি রাজনৈতিক দল গড়ে তুলবে। ঔপনিবেশিক একপদকেন্দ্রীক ক্ষমতাকাঠামোকে জবাবদিহিতামূলক গণক্ষমতাতন্ত্রে রূপান্তরকে এই “রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন” তার রাজনৈতিক লক্ষ্য হিশেবে ঘোষণা করেছে।
অনলাইন প্রতিনিধি সভায় উপস্থিত সকল সদস্যের সম্মতিতে “রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন” এর অন্তর্বর্তীকালীন ঘোষণাপত্র গৃহীত হয়েছে। ইমরান ইমনের সঞ্চালনায় ও সৈয়দ হাসিবউদ্দিন হোসেন এর সভাপতিত্বে অনলাইন প্রতিনিধি সভায় স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন নতুন রাজনৈতিক সংগঠনের জাতীয় সমন্বয় কমিটির অন্যতম সদস্য হাসনাত কাইয়ূম। সংগঠনটির খসড়া ঘোষণাপত্র উত্থাপন করেন রাখাল রাহা। জাতীয় সমন্বয় কমিটির সদস্যদের নাম প্রস্তাব করেন ফরিদুল হক। সারাদেশের প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে নতুন সংগঠনের খসড়া ঘোষণাপত্র, সংগঠনের নাম ও জাতীয় সমন্বয় কমিটির সদস্যদের নাম উত্থাপন/প্রস্তাব করা হয়, এবং সকলের মতামত ও সম্মতির ভিত্তিতে তা গৃহীত হয়।
ঘোষণাপত্রে বলা হয়, ‘গণপ্রজাতন্ত্র’কে সংস্কার করে ‘গণক্ষমতার’ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে শহীদদের রক্তের দায় পরিশোধ করার জন্য নতুন রাজনীতি গড়ে তোলা এবং রাষ্ট্র/সরকারকে জনগণের কাছে জবাবদিহিতে বাধ্য করার জন্য আইন ও সংবিধান সংস্কারের দাবীতে আন্দোলন গড়ে তোলার আহবান জানানো হয়। আরও বলা হয়, দেশ স্বাধীন হওয়ার পরপরই এমন একটি সংবিধান (শাসনতন্ত্র) রচনা করা হয়েছে, যা ওকালতি চাতুরীতে পরিপূর্ণ; যার প্রথম অংশে (ভূমিকা থেকে রাষ্ট্রপরিচালনার মূলনীতি অংশ পর্যন্ত) অনেক সুন্দর সুন্দর প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে, কিন্তু সেই অংশেই কৌশলে এ কথাও বলে রাখা হয়েছে যে, এইসব মূলনীতি বাস্তবায়ন করা বা না করা সব হলো সরকারের ইচ্ছার বিষয়। আর সরকারের ক্ষমতাকে এমনভাবে সাজানো হয়েছে যাতে সরকার তথা সরকারের প্রধান যখন যা ইচ্ছা তাই করতে পারেন, এবং তার কোথাও কোনো জবাবদিহি করতে না হয়। এ ছাড়া ব্রিটিশ এবং পাকিস্তান আমলের যেইসব আইন-কানুন ছিলো, তার সবকিছুকেই আইনের ধারাবাহিকতা রক্ষার নামে বৈধতাও দেয়া হয়েছে। ফলে রাষ্ট্র হয়ে গেছে মুখে গণতন্ত্র আর কার্যত নিকৃষ্ট রাজতন্ত্রের চাইতেও বীভৎস; নামে স্বাধীন, কাজে আধুনিক ক্রীতদাসত্বের।
স্বাধীনতার ৫০ বছরে সেই জবাবদিহিহীন ক্ষমতা ও ইচ্ছাতন্ত্র এমনভাবে বিকশিত এবং প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পেয়েছে যার সর্বব্যাপ্ত মাত্রা এবং তীব্রতা বর্ণনা করতে হলে নতুন ভাষা নির্মাণ করতে হবে। এই করোনাকালেও সরকার বাজেটের নামে বাংলাদেশের ৮৪ হাজার গ্রাম আর কয়েকশ শহর থেকে ৪ লক্ষ কোটি টাকার বেশি আদায় করবে ডাইরেক্ট-ইনডাইরেক্ট ট্যাক্স হিসাবে আর বাকীটা ঋণ করবে; অর্থাৎ প্রতি গ্রাম থেকে আদায় করবে ৬ কোটি টাকার বেশি। আমরা গরুর খাবার কিনতে ট্যাক্স দেই, বাচ্চার ঔষুধ কিনতে ট্যাক্স দেই, বিদেশে চাকরী করা সন্তানের সাথে কথাবলতে-ফোনকরতে ট্যাক্স দেই, কারখানার যন্ত্র কিনতে ট্যাক্স দেই, কাঁচামাল আনতেও ট্যাক্স দেই, ডিজেল কিনতে ট্যাক্স দেই, বিদ্যুৎ ব্যবহার না করলেও তার কেপাসিটির জন্য ট্যাক্স দেই, জমি বেচতেও ট্যাক্স দেই, এমনকি আমাদের বাচ্চাদের পরীক্ষা দিতেও ট্যাক্স দেই। এক কথায় ‘দোলনা থেকে কবর’ পর্যন্ত সকল ক্ষেত্র থেকে ট্যাক্স তুলে লক্ষ লক্ষ কোটি টাকা তারা নিজেদের হাতে নেয়। এ টাকায় তারা এমপি, মন্ত্রী, পুলিশ, মিলিটারী, জজ-ব্যারিষ্টারদের বেতন নেয়, তাদের বাড়ী-গাড়ী বানায়, পেয়াদা-পাইক, চাকর-বাকর পোষে, মাসে মাসে বিদেশ যায়, দেশে-বিদেশে ঘোরে, বন্দুক কেনে, গুলি কেনে, আদালত বানায়, জেল বানায়।
এ টাকা থেকে কিছু টাকা দিয়ে তারা আমাদের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির কথা বলে উন্নয়নের নামে রাস্তাঘাট, ফ্লাইওভার, আন্ডার পাস, ব্রিজ, স্যাটেলাইট, বিদ্যুৎকেন্দ্র, হাসপাতাল, যুদ্ধজাহাজ, অস্ত্রপাতি, ঔষুধপত্র কেনা, ইত্যাদি বাবদ ১ টাকার জায়গায় হাজার টাকা খরচ দেখায়, অপচয় করে, দলীয় গুন্ডা-মাস্তানদের মাঝে কিছু উচ্ছিষ্ট বিভিন্নভাবে বণ্টন করে, বাকীটা আত্মসাৎ করে, পাচার করে; নদ-নদী, বন-বাদাড়, ক্ষেত-খামার ধ্বংস করে। এইসব অপকর্মকে বৈধতা দেওয়ার জন্য, রাষ্ট্রীয় এবং সরকারী প্রতিষ্ঠানগুলিকে তাদের ইচ্ছামাফিক পরিচালনার জন্য তারা অনেক অনেক আইন বানায়, যেগুলিকে প্রধানত অর্থনৈতিক, প্রশাসনিক এবং রাজনৈতিক—এই তিন ভাগে ভাগ করা যায়। অর্থনৈতিক আইনগুলির মাধ্যমে তারা আমাদের পরিশ্রমের টাকাপয়সা তাদের পকেটে নিয়ে যায় (যেমন বাজেট), তাদের এই নিয়ে যাওয়ার কাজে বাধা দিলে যাতে মানুষকে থানায়-হাজতে-জেলে নিয়ে আটকে রাখা যায়, খুন করা যায়, গুম করা যায় আর বাকী মানুষদের ভয় দেখানো যায়, সেজন্য তারা প্রশাসন এবং প্রশাসনিক আইনগুলো বানায়; এবং এই দুই রকমের আইন বানানো ও কার্যকর করার ক্ষমতা যাতে তাদের হাত থেকে অন্য কেউ না নিতে পারে সেইলক্ষ্যে তারা রাজনৈতিক আইনগুলো বানায় (যেমন, ভোটার হওয়া, রাজনৈতিক দল হিসাবে রেজিষ্ট্রেশন পাওয়া বা নির্বাচন করা, ইত্যাদি)। আর এইসব আইনের শাসনের নামে তারা সারা দেশে শাসনের আইন কায়েম করে।
বাংলাদেশকে শাসনতান্ত্রিক সংকট থেকে উদ্ধার করতে হলে, সংবিধানের সংস্কার করতে হলে আমাদের ‘সংবিধান (সংস্কার) সভা’র একটি নির্বাচন করতে হবে। আর সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচন করতে হলে কোনো দলীয় সরকারের অধীনে সে নির্বাচন করা সম্ভব হবে না। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা যেহেতু সর্বোচ্চ আদালতের (একটি বিতর্কিত) রায়ের মাধ্যমে বাতিল করা হয়েছে, সে কারণে এ সংবিধান বহাল থাকা অবস্থায় তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বহাল এবং তার অধীনে নির্বাচন আয়োজন করা যাবে না। সেক্ষেত্রে সবচাইতে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনটি হতে পারে যদি সকল দল এবং আন্দোলনকারী সকল সংগঠনের ঐকমত্যের ভিত্তিতে একটি জাতীয় সরকার গঠন করা যায়। একটি জাতীয় সরকার গঠন করতে হলে একদিকে এইসব সুনির্দিষ্ট দাবী-দাওয়ার ভিত্তিতে যেমন জাতীয় ঐকমত্য গড়ে তোলার চেষ্টা করতে হবে, আবার অন্যদিকে বর্তমান ক্ষমতাসীন দলকে দেশ-জাতি এবং জনগণের স্থায়ী শান্তির স্বার্থে তাদের স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করার কথাও বলতে হবে এবং যদি তারা পদত্যাগে রাজী না হয় তাহলে তাদেরকে পদত্যাগে বাধ্য করার জন্য ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তোলার উদ্যোগ নিতে হবে। কিন্তু আন্দোলনে সেই ঐক্য এ সময়ে কেবল তখনই গড়ে উঠতে পারে যখন অতীতের সকল অভিজ্ঞতার সার সংকলন করে সবাই মিলে রাষ্ট্র সংস্কারের প্রয়োজনীয়তাকে উপলব্ধি করে এবং স্বীকার করে নেয়া হয়।
লিখিত ঘোষণাপত্রে উল্লেখ করা হয়, “আমরা উপরে আলোচিত দায়িত্বগুলো পালনের সর্বাত্মক চেষ্টা করবো। আজ থেকে ৫০ বছর আগে ‘সাম্য, মানবিক মর্যাদা এবং সামাজিক ন্যায় বিচার’ প্রতিষ্ঠার রাষ্ট্র গড়ে তোলার যে অঙ্গীকার তখনকার নেতৃবৃন্দ করেছিলেন এবং তাঁদের সেই অঙ্গীকারে বিশ্বাস করে আমাদের যে পূর্বসুরীরা নিজেদের জীবন এবং নিজেদের পরিবার-পরিজনদের উৎসর্গ করেছেন, অজস্র মানুষের রক্ত দিয়ে লেখা সে চুক্তি বাস্তবায়ন না করার কোনো অধিকার আমাদের নাই।”
আমাদের পূর্বসুরীদের রক্তের সাথে বেঈমানী করে এদেশকে যারা কার্যত দেশি-বিদেশী শক্তির লুটপাট আর মুনাফাক্ষেত্র বানিয়ে রেখেছে, নাগরিকের অধিকার প্রতিষ্ঠার বদলে এদেশকে যারা বৈষম্যের দোজখ বানিয়ে রেখেছে, মানবিক মর্যাদার বদলে মানুষকে যারা আধুনিক ক্রীতদাস বানিয়ে ছেড়েছে, তাদের সেই অন্যায় শাসন দূর করে বাংলাদেশকে গণক্ষমতাতান্ত্রিক বাংলাদেশ হিসাবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে আমরা স্বাধীনতার ৫০তম বছর আজ ৭ই আগষ্ট ২০২১ খ্রিষ্টাব্দে / ২৩শে শ্রাবণ ১৪২৮ সন রোজ শনিবার ‘রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন’-এর আত্মপ্রকাশ ঘোষণা করছি। এই সংগঠন জনগণের প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণে খুব শীঘ্রই একটি রাজনৈতিক দলে পরিণত হবে৷ অনতিবিলম্বে পূর্ণাঙ্গ ঘোষণাপত্র, কর্মসূচী ও গঠনতন্ত্র প্রণয়নের পাশাপাশি নিম্নোক্ত ৩ দফা আশু দাবিতে রাজনৈতিক আন্দোলন গড়ে তুলবেঃ
১ ) বর্তমান সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে; অন্যথায় পদত্যাগে বাধ্য করার জন্য আন্দোলনকারী দল- সংগঠনের মধ্যে ঐক্য গড়ে তুলতে হবে।
২) সরকারের পদত্যাগের পর সবার কাছে গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচন আয়োজনের জন্য একটি সর্বদলীয় অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করার বিষয়ে ঐক্যমতে পৌঁছতে হবে।
৩) নতুন করে স্বৈরতান্ত্রিক শাসন প্রতিষ্ঠার পথ স্থায়ীভাবে বন্ধ করার জন্য সংবিধান এবং সরকার ও রাষ্ট্র পরিচালনার আইন-কানুন তথা রাষ্ট্রকাঠামোর সংস্কার করে গণক্ষমতাতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিতে হবে।
“রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন” এর নব-গঠিত জাতীয় সমন্বয় কমিটির সদস্যরা হচ্ছেন: [পরবর্তী সংযোজন এর মাধ্যমে এই তালিকা আরও বড় করা হবে এবং দ্রুততম সময়ে সমন্বয় কমিটির সদস্যদের কার্যকরী সভার মাধ্যমে একটা নির্বাহী কমিটি গঠন করা হবে।]
“রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন” এর জাতীয় সমন্বয় কমিটি সদস্যদের নামের তালিকা:
• হাসনাত কাইয়ুম
• রাখাল রাহা
• সৈয়দ হাসিবউদ্দীন হোসেন
• মুক্তিযোদ্ধা মাহমুদ জামাল কাদেরী
• জাকিয়া শিশির
• ফরিদুল হক
• ইমরান ইমন
• দিদারুল ভূঁইয়া
• মাহবুবুর রহমান
• এডঃ রায়হান কবির
• মোহাম্মদ আরিফ খান
• রিয়াজ খান
• জাবেদ আহমেদ
• অনুপম দেবাশীষ রয়
• এডঃ সিরাজুল ইসলাম মামুন
• খন্দকার হাবিবুর রহমান রাজা
• আদিল হোসাইন
• নাইমুল ইসলাম নয়ন
• মাসুম রহমান
• মোঃ আব্দুল জলিল
• মুক্তিযোদ্ধা নুর হোসেন মোল্লা
• শাহাবুদ্দিন কবিরাজ লিটন
• প্রীতম দাস
• শেখ নাসির
• মোহাম্মদ মহসিন
• সামসুল হক কাজল
• এডঃ জয়নাল আবেদীন
• সাইফুল ইসলাম
• আবদুল্লাহ মহিউদ্দিন
• আনোয়ার সর্দার
• আব্দুল মজিদ অন্তর
• আরিফ সোহেল
• সামিউল আলম রাশু
• এস. এম. রুবেল
• দিল্লুর রহমান
• লুতফর রহমান নয়ন
• আমিনুর রশীদ


মুজিব বর্ষ

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

Pin It on Pinterest