পুলিশ-প্রশাসন বাড়াবাড়ি করছে, অভিযোগ বরিশাল আ’লীগ নেতাদের

প্রকাশিত: ১১:০১ পূর্বাহ্ণ, আগস্ট ২১, ২০২১

পুলিশ-প্রশাসন বাড়াবাড়ি করছে, অভিযোগ বরিশাল আ’লীগ নেতাদের

বরিশালে ইউএনও’র বাসভবনে হামলার ঘটনায় সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহকে দায়ী করে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন যে বিবৃতি দিয়েছে তার তীব্র সমালোচনা করছেন মেয়রের ঘনিষ্ঠ আওয়ামী লীগ নেতারা। একই সাথে তারা ইউএনও’র বাসায় হামলার ঘটনাকে ‘নাটক’ আখ্যায়িত করে বলছেন যে এ ঘটনা নিয়ে পুলিশ ও প্রশাসন বাড়াবাড়ি করছে এবং পুলিশ প্রশাসনের তদন্তে তাদের কোন আস্থা নেই।

বরিশাল নগর আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি আফজালুল করিম বলেন, “সরকারি কর্মকর্তাদের যারা স্টেটমেন্ট দিয়েছে বরিশালের বাস্তবতার আলোকে তাদের এই স্টেটমেন্ট দেয়া ঠিক হয়নি। টিএনও’র বাসায় হামলা হয়নি। উপরন্তু পোস্টার অপসারণকে কেন্দ্র করে যেভাবে প্রশাসন দলীয় নেতাকর্মীদের মারধর করেছে এমনকি মেয়রকে লক্ষ্য করে গুলিও করেছে। এটি আড়ালের জন্য হামলার বিষয়টি সামনে এনেছে।”

সরকার যে তদন্ত করছে পুলিশ ও প্রশাসনের মাধ্যমে তার উপরে আপনাদের আস্থা নেই?- এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন “আমাদের আস্থা নেই। কারণ তারা একটি পক্ষ হয়েছে। এবং বিপরীতে ইউএনওর বাসায় হামলার নাটক সাজিয়েছে। আমরা মনে করি পুলিশ পক্ষ নিয়েছে। প্রশাসনও আমাদের বিপক্ষে অবস্থা নিয়েছে। আমরা মনে করি নিরপেক্ষ তদন্ত হোক। সেজন্য বিচার বিভাগীয় তদন্ত চেয়েছি।”

দুই মামলায় অভিযুক্ত হওয়ার পর মেয়র এখন কি করবেন – এমন প্রশ্নের জবাবে করিম বলেন, “এটা আমরা আইনানুগ ভাবে দেখবো”।

ওদিকে অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন তাদের বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলেছে, সাদিক আবদুল্লাহ তার দুর্বৃত্ত বাহিনী সিটি কর্পোরেশনের কর্মচারীদের দিয়ে নানা প্রকার প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে এবং সমস্ত জেলায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে।

এদিকে বুধবার রাতে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বাসভবনে হামলার ঘটনায় শুক্রবার আরও একজনকে আটক করেছে তারা। এ নিয়ে এ বিষয়ে দায়ের করা দুটি মামলার আসামিদের মধ্যে ১৬ জনকে আটক করা হলো। তবে শহরে আর কোন অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটায় এখনি বিজিবি মোতায়েনের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার বিষয়টি সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেছেন বিভাগীয় কমিশনার সাইফুল হাসান বাদল।

“কোর কমিটির মিটিংয়ে আমরা ১০ প্লাটুন বিজিবি ও আটজন ম্যাজিস্ট্রেট মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। কিন্তু আপনারা দেখেছেন বরিশালের বিভাগে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক ও চমৎকার আছে। সে কারণে আমরা মনে করছি বিজিবি এখন প্রয়োজন হবে না। যদি হয় বিজিবিসহ সব বাহিনী প্রস্তুত আছে। তবে আশা করি জনপ্রতিনিধি রাজনীতিক বরিশালের মানুষকে সম্মান করেন- এ ধরণের পরিস্থিতির উদ্ভব হবেনা।”

বরিশালের কর্মকর্তারা বলছেন সিটি মেয়র সাদিক আব্দুল্লাহকে মামলার আসামী করলে তার অনুসারীরা অপ্রীতিকর ঘটনার জন্ম দিতে পারে এমন আশংকা থেকে অতিরিক্ত সতর্কতা হিসেবে বিজিবি মোতায়েনের চিন্তা করেছিলো প্রশাসন। কিন্তু ব্যাপক গ্রেফতার অভিযান ও মামলায় সুনির্দিষ্টভাবে মেয়রকে অভিযুক্ত করার পর মেয়রের অনুসারীদের কোন তৎপরতা শহরের কোথাও দেখা যায়নি।

বরিশালের সাংবাদিক শাহীনা আজমিন বলছেন, শহরের অবস্থা এখন স্বাভাবিক হলেও পরিস্থিতি কোন দিকে যায় তা নিয়ে রয়েছে ব্যাপক কৌতুহল। আর শহরের বাইরে মেয়র অনুসারীরা মাঝে মধ্যেই মিছিল করে মেয়রকে মামলা থেকে অব্যাহতি দাবিও জানাচ্ছেন।

তিনি জানান, “তার অনুসারির বৃহস্পতিবার অনেক জায়গায় কর্মসূচি পালন করেছিলো। বাস লঞ্চ ও বড় বড় দোকানপাট বন্ধ ছিলো। তবে আজ সে রকম নেই। বিশেষ করে নগরে হঠাৎ করে মিছিল করছে। আর উপজেলাগুলোতেও মিছিল হচ্ছে। আবার পরিস্থিতি একেবারেই স্বাভাবিক তাও বলা যাবেনা কারণ সবাই উদগ্রীব যে কি হয়- কারণ দুটি মামলাতেই মেয়রই হুকুমের আসামী।”

মেয়র সাদিক আব্দুল্লাহ অবশ্য ঘনিষ্ঠ কয়েকজন নেতাসহ তার বাসাতেই অবস্থান করছেন।

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ইউএনওর বাসায় হামলার ফুটেজ দেখে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার ঘোষণা করার পর থেকে বরিশালে আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগি সংগঠনের নেতারাও সতর্ক অবস্থায় আছেন।

একদিকে প্রশাসনের কর্মকর্তাদের চাপ আরেকদিকে আওয়ামী লীগের মধ্যে মেয়রের পরিবারের শক্ত রাজনৈতিক অবস্থান-দুটি বিষয়কে চিন্তায় রেখেই পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের কথা বলেছেন তাদের অনেকেই।

বরিশালের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা- ইউএনও-র বাসায় হামলার ঘটনায় সেখানকার সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহকে দায়ী করে তাকে গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন। তার বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে বলেও প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের এ সংগঠনটির পক্ষ থেকে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে। সংগঠনটির সভাপতি ও পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কবির বিন আনোয়ার স্বাক্ষরিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ দাবির কথা জানানো হয়েছে।

সেখানে অভিযোগ তোলা হয়েছে যে সমগ্র বরিশালবাসী এই মেয়রের অত্যাচারে অতিষ্ঠ।

বরিশালের ওই ঘটনায় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাতটার দিকে অ্যাসোসিয়েশনের কার্যনির্বাহী পরিষদের এক জরুরি সভা ডাকা হয়। সভায় আলোচনা শেষে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় যে- ‘আইনের মাধ্যমে দুর্বৃত্তদের মোকাবিলা করা হবে’ এবং ‘আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে’।

অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তারা বরিশালের ঘটনাবলীর বিশ্লেষণ করে দেখেছেন যে, সরকারি কর্তব্য পালন করতে গিয়ে একজন নির্বাহী অফিসার কীভাবে ‘রাজনৈতিক দুর্বৃত্তদের’ দ্বারা হেনস্থা হয়েছেন।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ইউএনও-র বাসায় হামলা করা হয়, যেখানে তার করোনা আক্রান্ত অসুস্থ পিতা-মাতা উপস্থিত ছিলেন। তাদের উপস্থিতিতেই ওই কর্মকর্তাকে গালিগালাজ করা হয়েছে, তার বাড়ির গেট ভেঙে প্রবেশ করা হয়েছে। আগ্নেয়াস্ত্র ও গুলি ব্যবহার করা হয়েছে এবং তার চামড়া তুলে নেয়ার জন্য প্রকাশ্যে স্লোগান দিয়ে মিছিল করা হয়েছে।

মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ তার দুর্বৃত্ত বাহিনী সিটি কর্পোরেশনের কর্মচারীদের দিয়ে নানা প্রকার প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে এবং সমস্ত জেলায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে বলে ওই সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে অভিযোগ আনা হয়েছে।

এরপর বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন এমন কার্যকলাপের তীব্র নিন্দা জানায়।

মেয়রের হুকুমেই এমন ঘটনা সংঘটিত হয়েছে অভিযোগ এনে তারা অবিলম্বে তার গ্রেপ্তার দাবি করছে এবং তার বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য অঙ্গীকার ব্যক্ত করছে। হামলার বিষয়টি নিয়ে মেয়রের বক্তব্য জানার চেষ্টা করা হলেও তার সাথে কথা বলা সম্ভব হয়নি।


alokito tv

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

Pin It on Pinterest