সুখী হওয়ার পাঁচটি উপায়: অধ্যাপকের পরামর্শ

প্রকাশিত: ৪:০২ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ২, ২০২১

সুখী হওয়ার পাঁচটি উপায়: অধ্যাপকের পরামর্শ

“বিজ্ঞানে এটা প্রমাণ হয়েছে যে সুখী হতে হলে সচেতন প্রচেষ্টার প্রয়োজন,” বলেছেন যুক্তরাষ্ট্রে ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ে মনোবিজ্ঞান এবং কগনিটিভ বিজ্ঞান বিভাগের একজন অধ্যাপক লরি স্যান্টোস। মডেল :নীহারিকা হায়দার

বিবিসিকে তিনি বলেছেন, “এটা খুব একটা সহজ কাজ নয়, এজন্যে সময় লাগবে।” তবে তিনি হয়তো জানেন যে সুখী হতে হলে কি করতে হবে? কারণ তিনি পড়ান ‘মনোবিজ্ঞান ও সুন্দর জীবন’ বিষয়ে।

ইতিবাচক মনোবিজ্ঞানের উপর ভিত্তি করে এই কোর্সটি পরিচালনা করেন অধ্যাপক স্যান্টোস। এটা মনোবিজ্ঞানেরই একটি শাখা যেখানে সুখ এবং আচরণগত পরিবর্তনের বিষয়ে পড়ানো হয়।

তিন্তু এসব তত্ত্ব আমরা কিভাবে আমাদের প্রতিদিনের বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করতে পারবো?

“সুখী হওয়া বিষয়টি এমন নয় যে এটা আপনা আপনি হয়ে যায়। সুখী হওয়ার জন্যে আপনাকে এটা চর্চ্চা করতে হবে,” বলেন অধ্যাপক স্যান্টোস, “এটা অনেকটা ভালো সঙ্গীত শিল্পী বা ক্রীড়াবিদ হয়ে উঠার মতোই, সাফল্যের জন্যে তাদেরকে যেমন চর্চ্চা করতে হয় সুখী হওয়ার ব্যাাপরেও আপনাকে সেটা করতে হবে।”

আপনি সুখী হতে চান কিন্তু সমস্যা হচ্ছে আপনি তো আর ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারছেন না? এখান তার দেওয়া পাঁচটি টিপস তুলে ধরা হলো। চর্চ্চা করার চেষ্টা করে দেখতে পারেন।

১. কৃতজ্ঞতার একটি তালিকা তৈরি করুন
অধ্যাপক স্যান্টোস তার শিক্ষার্থীদের বলেন, প্রত্যেক রাতে তারা যাদের কাছে বা যেসব জিনিসের কাছে কৃতজ্ঞ তার একটি তালিকা তৈরি করতে।

“এটা শুনতে খুব সহজ মনে হতে পারে, কিন্তু আমরা দেখেছি যেসব শিক্ষার্থীরা নিয়মিতভাবে এটা চর্চ্চা করেন তাদের সুখী মনে হয়,” বলেন অধ্যাপক স্যান্টোস।

২. আরো বেশি করে ও নিশ্চিন্তে ঘুমাতে চেষ্টা করুন

এই কাজটা করা সবচেয়ে সহজ বলে মনে হয় কিন্তু আসলে এই কাজটা করা খুব কঠিন, বলেন তিনি।

এখানে চ্যালেঞ্জ হচ্ছে, প্রতি রাতে আট ঘন্টা করে ঘুমানো। এবং এই কাজটা করতে হবে এক সপ্তাহ ধরে।

অধ্যাপক স্যান্টোস বলেন, “আমরা সবাই জানি যে বেশি ঘুমাতে পারলে এবং নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারলে বিষণ্নতায় ভোগার সম্ভাবনা কম থাকে। এর ফলে ইতিবাচক মনোভাবও তৈরি হয়।”

৩. ধ্যান করুন
আপনার কাজ হবে প্রত্যেকদিন ১০ মিনিট করে মেডিটেট বা ধ্যান করা।

অধ্যাপক স্যান্টোস বলেন, তিনি যখন ছাত্রী ছিলেন তখন তিনি নিয়মিত ধ্যান করতেন এবং দেখেছেন সেটা করলে মন ভালো থাকে।

এখন তিনি একজন অধ্যাপক, এখন তিনি তার শিক্ষার্থীদের শেখাচ্ছেন কিভাবে ধ্যান করতে হয়। তিনি বলেন, এধরনের কাজে পূর্ন মনোযোগ দিতে হয় যা মানুষকে সুখী হতে সাহায্য করতে পারে।

৪. পরিবার ও বন্ধুদের সাথে আরো সময় কাটান
অধ্যাপক স্যান্টোস বলেছেন, গবেষণায় পরিষ্কার একটি বিষয় দেখা গেছে- পরিবার ও বন্ধুদের সাথে ভালো সময় কাটালে আপনি সুখী হবেন।

আপনার যদি ভালো বন্ধুত্ব থাকে এবং সামাজিক যোগাযোগ থাকে এবং তাদের মধ্যে সরাসরি যোগাযোগ হয় তখন তারা উল্লেখযোগ্য রকমের ভালো বোধ করেন।

এজন্যে যে খুব বেশি কিছু করতে হবে তা নয়, স্যান্টোস বলেন, “শুধু এটা নিশ্চিত করুন যে আপনি এই সময়ে বেঁচে আছে, মনে করুন যে আপনারা একসাথে বর্তমান সময় কাটাচ্ছেন এবং আপনি কিভাবে আপনার সময় কাটাচ্ছেন সেবিষয়ে একটু সচেতন থাকুন।”

তিনি বলেন, আপনার সুখী হওয়ার জন্যে সময় সম্পর্কে আপনার ধারণা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

“আমাদের কতো অর্থ আছে সেটা দিয়ে আমরা প্রায়শই আমাদের সম্পদের হিসাব করি। কিন্তু গবেষণায় দেখা গেছে, সম্পদ হচ্ছে আসলে আমাদের হাতে কতো সময় আছে সেটার সাথে সম্পর্কিত,” বলেন তিনি।

৫. সোশাল মিডিয়ায় যোগাযোগের পরিবর্তে বাস্তবে এই যোগাযোগ বৃদ্ধি করুন
অধ্যাপক স্যান্টোস মনে করেন, সোশাল মিডিয়া থেকে সুখের বিষয়ে মিথ্যা যেসব ধারণা পাওয়া যায় সেসবে ভেসে যাওয়া উচিত নয়।

“সবশেষ গবেষণায় দেখা গেছে, যারা ইন্সটাগ্রামের মতো সামাজিক নেটওয়ার্কের মাধ্যম ব্যবহার করেন তারা, যারা এটা খুব বেশি ব্যবহার করেন না তাদের চাইতে কম সুখী,” বলেন তিনি।

তো, এখন তো সব জানা হয়ে গেলো।

আপনি যদি সত্যিই জীবনে সুখী হতে চান, তাহলে কৃতজ্ঞ হতে শুরু করুন, পরিবারের সাথে আরো বেশি সময় কাটান, বন্ধুদের সাথে মেলামেশা করুন, দিনের একটা সময়ে কিছুক্ষণের জন্যে নিজেকে সবকিছু থেকে সরিয়ে ধ্যানে মগ্ন হউন, সোশাল মিডিয়া থেকে দূরে সরে এসে আরো একট বেশি ঘুমাতে চেষ্টা করুন।

ইয়েলের শিক্ষার্থীদের জন্যে যদি এটা কাজ করে, তাহলে এসব পরামর্শ আপনার ক্ষেত্রেও নিশ্চয় কাজ করবে।


মুজিব বর্ষ

Pin It on Pinterest