বরিশাল দেখা নেই অতিথি পাখির জলবায়ু পরিবর্তনে

প্রকাশিত: ১২:১৭ পূর্বাহ্ণ, জানুয়ারি ৭, ২০২০

বরিশাল দেখা নেই অতিথি পাখির জলবায়ু পরিবর্তনে

মোঃ শফিউর রহমান কামাল বরিশাল ব্যুরোঃপাখির আগমন ছিলো প্রকৃতির একটি স্বাভাবিক নিয়ম। কিন্তু গত এক যুগের ব্যবধানে বরিশালে আশংকাজনক হারে কমেছে অতিথি পাখির আগমন। চলতি মৌসুমে অতিথি পাখি আসেনি বললেই চলে। এর কারন হিসেবে জলবায়ু পরিবর্তন ও খাদ্যের অভাব, শব্দ দূষন এবং পাখি শিকারকেই দায়ি করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, নিরাপদ আশ্রয়স্থল না থাকার কারনেই অতিথি পাখিদের আগমন দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, শীতকালীন ঋতুতে ইউরোপসহ বিভিন্ন দেশ বরফে ঢাকা পরে। তাই অতিথি পাখিগুলো বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পরে। যেকারণে আমাদের দেশেও বালুহাঁস, বিদেশী পানকৌড়ি, গাঙ্গচিল, টিয়া, বক, শালিকসহ বিভিন্ন অতিথি পাখি শীত মৌসুমে এসে থাকে। সূত্রমতে, যেসব অঞ্চলে হাওর-বাওর, বিল-ঝিল, দীঘি, বড় পুকুর, সমুদ্র-সৈকত থাকে সেসব অঞ্চল অতিথি পাখি তাদের আবাসস্থল হিসেবে বেঁছে নেয়। তবে বরিশালে পরিবেশের অভাবসহ বিভিন্ন কারণে এবার অতিথি পাখিদের তেমন দেখা মিলছে না। বরিশালে অতিথি পাখির আবাসস্থল দূর্গাসাগর, সারসী দীঘি, তালতলী, পদ্মা দীঘি, দপদপিয়া, লাহারহাটসহ বিভিন্নস্থান। এসবস্থানে অতিথি পাখির অবাধ বিচারণের জন্য নেই কোন সু-ব্যবস্থা। খাবার (মাছ) এর সল্পতার কারণে এবার শীতে কিছু পাখি আসলেও তা আবার চলে গেছে। সূত্রে আরও জানা গেছে, বরিশালের অন্যতম পর্যটন এলাকা হচ্ছে দূর্গাসাগর। বরিশাল নগরী থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে বাবুগঞ্জ উপজেলার মাধবপাশা এলাকায় অবস্থিত এই দূর্গাসাগর। মাধবপাশা ছিল চন্দ্রদ্বীপ রাজ্যের সর্বশেষ রাজধানী। ১৭৮০ সালে চন্দ্রদ্বীপ রাজ্যের তৎকালীন রাজা শিব নারায়ণ তার স্ত্রী দুর্গা রাণীর নামে খনন করেন বিশাল জলাধার। যার নাম দেয়া হয় দুর্গাসাগর। ১৯৯৬ সালে প্রায় ৪৬ একরের এই দীঘিকে দুর্গাসাগর দীঘি উন্নয়ন ও পাখির অভয়ারণ্য প্রকল্পের আওতায় নিয়ে পরিণত করা হয় অন্যতম পর্যটন কেন্দ্রে। যার তত্বাবধায়নে রয়েছে বরিশাল জেলা প্রশাসন। স্থানীয়রা জানান, মাত্র এক দশক আগেও পুরো শীত মৌসুম জুড়েই দুর্গাসাগর দীঘি মুখরিত থাকতো হাজারো অতিথি পাখির কল কাকলিতে। কিন্তু ২০০৭ সালের প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় সিডরের পর থেকেই দুর্গাসাগরে অতিথি পাখির আগমন কমে যায়। স্থানীয়রা আরও জানান, জানুয়ারি মাসের ২/৩ তারিখে পাঁচ শতাধিক অতিথি পাখি ঝাঁক বেঁধে দুর্গাসাগরে নেমে ছিলো। কিন্তু মাত্র এক থেকে দেড় ঘন্টা পরই পাখিগুলো উড়ে চলে যায়। এরপর মাঝে মধ্যে ৪/৫টি করে পাখি আসলেও তা বেশিক্ষন থাকছে না।বলেন, আমি ঢাকা থেকে বরিশালে ঘুরতে এসেছি। শুনেছি বরিশালের দুর্গাসাগর অনেক মনোরম পরিবেশ আর শীতে এখানে অতিথি পাখিরা আসে। তাই সন্তানদের নিয়ে এসেছি। কিন্তু এখানে অতিথি পাখি নেই বললেই চলে। অপর পর্যটক শাহাদাত হোসেন বলেন, অনেক আগে একবার এখানে এসেছিলাম। তখন অতিথি পাখির সমারহ ছিলো। এখানের পরিবেশটাও ভালো। কিন্তু কয়েক বছরের ব্যবধানে পুনরায় এসেছি দুর্গাসাগর ভ্রমনে। এখানে মনোরম পরিবেশ ঠিকই আছে কিন্তু নেই অতিথি পাখি। অতিথি পাখি না আসা প্রসঙ্গে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞান অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. হাসিনুর রহমান বলেন, এক দশক ধরেই দুর্গাসাগরসহ বরিশালের আশপাশে অতিথি পাখিদের আসা যাওয়া নেই বললেই চলে। এর প্রধান কারন জলবায়ু পরিবর্তন। তিনি আরও বলেন, সাইব্রেরীয় এই অতিথি পাখি স্বাচ্ছন্দ্যে থাকার পরিবেশ না পাওয়ায় হয়তো এসেও চলে যাচ্ছে। আবার শব্দদূষণ ও খাদ্য সংকটও পাখিদের না আসার কারন হতে পারে। পরিবেশ অধিদপ্তরের বরিশাল বিভাগীয় পরিচালকের কার্যালয়ের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা অতিথি পাখির আগমন কমে যাওয়া এবং আসলেও না থাকার কারন হিসেবে জলবায়ু পরিবর্তন ও দূষনমুক্ত পরিবেশকে দায়ী করেছেন। এ ব্যাপারে গবেষনার মাধ্যমে এর সঠিক কারন উদ্ঘাটন করা দরকার বলেও ওই কর্মকর্তা উল্লেখ করেন।


মুজিব বর্ষ

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

Pin It on Pinterest