সুনামগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতি অবনতি দুর্ভোগ চরমে

প্রকাশিত: ১১:৩৮ অপরাহ্ণ, মে ১৮, ২০২২

সুনামগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতি অবনতি দুর্ভোগ চরমে

শামসুল কাদির মিছবাহ, সুনামগঞ্জঃ সুনামগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতি আশঙ্কাজনক। ভারী বৃষ্টিপাত বন্ধ না হলে ভয়াবহ রুপ ধারণ করতে পারে বন্যা পরিস্থিতি।তবে গত ২৪ ঘন্টায় ভারী বৃষ্টিপাত না হওয়ায় এবং পাহাড়ি ঢল কম থাকায় সুনামগঞ্জের তাহিরপুর, বিশ্বম্ভরপুর ও সদর উপজেলার বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও জেলার ছাতক ও দোয়ারাবাজার উপজেলার বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। ছাতক উপজেলার ১৩ ইউনিয়নের কয়েক হাজার মানুষ পানি বন্দি হয়ে পড়েছে। ছাতকের ৬ টি পয়েন্ট দিয়ে পানি ঢুকে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে সড়ক, বসত বাড়ি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ শত শত একর ফসলের ক্ষেত তলিয়ে গেছে। ছাতক সিলেট সড়কের ১৫ কিলোমিটার সড়কের মধ্যে ১০ কিলোমিটারই ডুবে যোগাযোগ ও যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। জরুরী প্রয়োজনে নৌকা দিয়ে মানুষ পারাপার করছেন। ঢলের পানিতে অধিকাংশ টিউবওয়েল পানির নীচে থাকায় বিশুদ্ধ খাবার পানির সংকট দেখা দিয়েছে। ফলে বিভিন্ন পানি বাহিত রোগের প্রকোপ দেখা দেয়ার আশঙ্কা রয়েছে। মৎস্য খামারিরাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। অনেকের চাষকৃত পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। ছাতক উপজেলার বিভিন্ন জায়গাতে ১৪ টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে এবং ত্রাণ সহ শুকনো ও রান্না করা খাবার দেয়া হচ্ছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো মামুনুর রহমান জানান দুর্গতদের পাশে আছেন সতর্ক অবস্থানে।
দোয়ারাবাজার উপজেলার বিভিন্ন জায়গাতেই পানি কিছুটা কমলেও মানুষের দুর্ভোগ কমেনি। উপজেলার সাথে গ্রামীণ সড়কের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন আছে। এমনকি জেলা সদরের সাথেও যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন আছে। নৌকা ছাড়া কোনও বিকল্প নেই চলাচলের জন্য। বিদুৎবিহীন রয়েছে উপজেলাবাসী। আলীপুর গ্রামের কৃষক কাজল মিয়া জানান, হাওরের উঁচু জমিতে থাকা খেতের ধান এখনও কাটতে পারেন নি। পানি কমলে কাটতে পারবেন কি না নিশ্চয়তা নেই। দোয়ারাবাজার উপজেলার অনেক চাষকৃত পুকুরের মাছ ভেসে গিয়ে মৎস্য চাষীগণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। মৎস্য চাষী সিরাজ মিয়া জানান ৫ টি পুকুরের মাছ পানিতে ভেসে গেছে। সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার ও চাষকৃত পুকুরের মাছ ভেসে গেছে পানির সাথে। রঙ্গারচর গ্রামের মৎস্য চাষী আলীম জানান কয়েকটি পুকুরে মাছ চাষ করেছিলাম। সব ভেসে গেছে পানিতে।
সুনামগঞ্জ জেলার-৫টি উপজেলার ২১৬ টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পানি প্রবেশ করার ফলে সাময়িক বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে এবং ২৮ টিতে আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। পানি কমলে যথারীতি বিদ্যালয় খুলবে জানিয়েছেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আব্দুর রহমান। সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড সুত্রে জানা যায় গত ২৪ ঘন্টায় ভারী বৃষ্টিপাত না হওয়ায় ও সীমান্তের ওপার থেকে পাহাড়ি ঢল আসা বন্ধ থাকার ফলে সুরমা নদীর পানি ১৭ সেন্টিমিটার কমে ১৮ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সুনামগঞ্জ জেলা সদরের সাথে তাহিরপুর ও বিশ্বমভর পুর উপজেলার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। তাহিরপুর ও বিশ্বমভর পুর উপজেলার উচু জমিতে যাকে নন হাওর বলা হয় সেসব হাওরের অনেক ফসল তলিয়ে গেছে। জেলা কৃষিসম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সূত্র জানায় জেলায় ৫শ হেক্টর বোরো ধান (নন হাওর ) ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেই সাথে দুই উপজেলার প্রচুর বাদাম ক্ষেতের ক্ষতি হয়েছে। কৃষিসম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মতে ৫০ হেক্টর জমির বাদাম ক্ষেত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
তাহিরপুর উপজেলার উত্তর বড়দল ইউনিয়নের বারহাল গ্রামের বাদাম চাষি মোহাম্মদ আলী জানান, এবার ক্ষেতে বাদাম চাষ করেছিলেন। টানা বৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢলের পানিতে বাদাম তলিয়ে গেছে।
টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের পানিতে ডুবে যাওয়ার কারণে একই অবস্থা উপজেলার বলদার হাওর, রসুলপুরের হাওর, ঘিঘড়ার হাওর, মোল্লাপাড়া হাওরসহ কৃষকদের রোপন করা কষ্টের ফসল বাদাম ও ধান নিয়ে রয়েছেন বিপাকে।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন জানান বন্যা দুর্গতদের জন্য ইতিমধ্যেই ১৫ মেট্রিক টন চাল, আড়াই লক্ষ নগদ টাকা, শুকনো খাবার ও রান্না করা খাবার দেয়া হচ্ছে। আমরা তালিকা করে ক্ষতিগ্রস্তদের সরকারের পক্ষ থেকে সাহায্যের আওতায় নিয়ে আসব।


মুজিব বর্ষ

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

Pin It on Pinterest