নীলফামারীতে ‘স্বপ্ন দেখাচ্ছে টিটিসি’

প্রকাশিত: ৬:৩৪ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ৯, ২০২০

নীলফামারীতে ‘স্বপ্ন দেখাচ্ছে টিটিসি’

ফজল কাদির,নীলফামারী প্রতিনিধি ঃ স্বপ্ন দেখাচ্ছে নীলফামারী বেকার যুবদের সরকারী কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (টিটিসি)। ইতোমধ্যে এখান থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে বিদেশে গিয়ে কর্মসংস্থানে নিয়োজিত হয়েছেন ২৩ জন। যাওয়ার তালিকায় নারীসহ রয়েছেন আরো অন্তত ১৫জন। দ্রæতই প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া শেষে তারাও পাড়ি জমাবেন জাপান, ওমান, সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতে। ২০১৬সালে ৪টি ট্রেড এবং নবম শ্রেণীতে ভোকেশনালে দুটি ট্রেড নিয়ে যাত্রা শুরু করা প্রতিষ্ঠানটিতে এখন কারিগরি প্রশিক্ষণ বিষয়ক ১৫টি ট্রেড, পাঁচটি ভাষা শিখন কোর্স এবং ভোকেশনালে ৭টি কোর্স চালু হয়েছে এখন পর্যন্ত। ভোকেশনালে দেশের দ্বিতীয় জেলা হিসেবে রয়েছে নীলফামারী। একমাত্র বগুড়া টিটিসিতে ১১টি ট্রেড রয়েছে তারপরের জেলাই নীলফামারী। কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে আর্কিটেকচার ড্রাফটিং উইথ অটোক্যাড, কম্পিউটার অপারেশন, গার্মেন্টস ম্যানুফেকচারিং, ইলেকট্রিক্যাল হাউজওয়্যারিং, কনজুমার ইলেকট্রনিক্স, মেশিন টুলস অপারেশন, ওয়েল্ডিং অ্যান্ড ফেব্রিকেশন, মটর ড্রাইভিং, রেফ্রিজারেশন অ্যান্ড এয়ারকন্ডিশনিং, মোবাইল সার্ভিসিং, সিএনসি অপারেশন, সলিড ওয়াকার্স এ্যান্ড মাস্টারক্যাম, ম্যাশন, হাউস কিপিং এবং প্রাক বর্হিগমন ট্রেডে দেয়া হচ্ছে প্রশিক্ষণ। এছাড়া জাপানী, কোরিয়ান, ইংরেজি এবং চাইনিজ ভাষা শেখানো হচ্ছে এখানে। ট্রেড ভেদে একমাস থেকে শুরু করে ছয় মাস পর্যন্ত সময় কালে প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে প্রশিক্ষনার্থীদের। অষ্টম শ্রেণি পাস থেকে এইচএসসি পাস করা যুবরা ভর্তি হতে পারেন টিটিসিতে। প্রতিষ্ঠান সুত্র জানায়, গার্মেন্টস ম্যানুফেকচারিং এ প্রশিক্ষণ নিয়ে জর্ডানে গেছেন এক নারী, হাউস কিপিং এ প্রশিক্ষণ নিয়ে ওমানে চারজন, সৌদি আরবে ১৫জন এবং ড্রাইভিং-এ প্রশিক্ষণ নিয়ে দুবাইয়ে গেছেন ৩ জন। এছাড়া জাপানি ভাষা প্রশিক্ষণ নিয়ে সেখানে যেতে দুই নারীসহ সাতজন নির্বাচিত হয়েছেন সম্প্রতি। দুবাই’র তালিকায় রয়েছেন ২৩ এবং দক্ষিণ কোরিয়ার তালিকায় রয়েছেন ৭জন। প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ শেষে দ্রæতই পাঠানো হবে তাদের। জাপান যেতে মনোনীত হওয়া জেলা শহরের গাছবাড়ি এলাকার গোলাম আযম সাজু বলেন, আমি অনার্স সম্পন্ন করে অনেক চেষ্টা করেও সরকারী চাকুরী পাইনি। টিটিসিতে জাপানী ভাষার উপর ছয়মাসের প্রশিক্ষণ নিয়ে জাপান যাওয়ার জন্য মনোনীত হয়েছি। আমার পরিবার নি¤œ আয়ের। সেখানে গিয়ে আমি পরিবারের স্বচ্ছলতা ফেরাতে চাই। শহরের ধনীপাড়া এলাকার ঈশিতা বানু পপি জানান, আমার পক্ষে জাপান যাওয়ার চিন্তা করাটাও দুঃস্বপ্ন ছিলো কিন্তু টিটিসিতে প্রশিক্ষণ নিয়ে সেটা তৈরি হয়েছে। সেখানে গিয়ে আমি দেখাতে চাই মেয়েদেরও সক্ষমতা রয়েছে। জাপানী ভাষা প্রশিক্ষণ কোর্সের প্রশিক্ষক মাসুদ আলম বলেন, জাপানে বাংলাদেশীদের চাকুরীর সুযোগ অনেক। আমরা সেটা ধরতে পারছি না। এটার মুল কারণ হচ্ছে ভাষা জানা না থাকা। তিনি বলেন, সেখানে আমি ১২বছর ছিলাম। নীলফামারীতে জাপানি ভাষা প্রশিক্ষণ কোর্স চালু হওয়ার ফলে বেকার যুবদের জন্য বড় একটি জায়গা তৈরি হয়েছে এটি ব্যবহার করে জাপান যাওয়ার সুযোগকে কাজে লাগাতে হবে। মাত্র কয়েক বছরের এই প্রতিষ্ঠানটি সফলতা দেখালেও জনবল সংকট অনেকটা পিছিয়ে রাখছে দ্রæত গতির কাজের ক্ষেত্রে। ১৮ জন কর্মকর্তার স্থলে ১৩জন, ২২জন কর্মচারীর স্থলে রয়েছেন ১১জন। প্রতিষ্ঠান প্রধান প্রকৌশলী জিয়াউর রহমান বলেন, দক্ষ জনশক্তি তৈরির কারখানা তৈরি হয়েছে টিটিসি। এটির সুযোগ নিয়ে প্রতি নিয়ত আমরা চেষ্টা করছি প্রশিক্ষনার্থী ভর্তি করতে। এজন্য গ্রামে গঞ্জে হাটে বাজারে প্রচারণা চালানো হচ্ছে। তিনি বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার লক্ষ্য প্রতি উপজেলা থেকে ১হাজার বেকার যুবককে দক্ষ হিসেবে গড়ে তুলে বিদেশে পাঠানো। সেটি বাস্তবায়নে কাজ করছি। আগামী কয়েক বছরের মধ্যে নীলফামারী টিটিসি অনেক সফলতা দেখাতে পারবে। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রনালয়ের অতিরিক্ত সচিব(প্রশাসন ও অর্থ) নাজীবুল ইসলাম জানান, অদক্ষ হয়ে দালালের মাধ্যমে বিদেশে গিয়ে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন হাজারো বেকার যুবক। আমরা এটা চাই না। বৈধ হয়ে প্রশিক্ষণ নিয়ে বিদেশে গেলে নিজের-পরিবারের এবং দেশের জন্য উপকারে আসবে। তিনি বলেন, সারাদেশের মধ্যে একমাত্র নীলফামারীতেই চাইনিজ ভাষা শিখন কোর্স চালু হয়েছে। এরফলে জেলার যুবকরা প্রশিক্ষণ নিয়ে উত্তরা ইপিজেডসহ বিভিন্ন ইপিজেডে চাকুরী করতে পারবেন ভালো বেতনে। একদিন এখানকার ছেলে মেয়েরা চাইনিজ কারখানাগুলো দখলে নিতে পারবেন। তিনি বলেন, নীলফামারীতে এখন অগাধ সুযোগ কারিগরি প্রশিক্ষণের জন্য। আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টিতে প্রতিষ্ঠানটির বিকল্প নেই। প্রসঙ্গত প্রতি ট্রেডে ৪০জন করে এখন পর্যন্ত ১৮১২জন প্রশিক্ষণ নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তাগণ। এছাড়াও নারীরা প্রশিক্ষণ নিয়ে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছেন উত্তরা ইপিজেডে। ছাত্রী নিবাসসহ ড্রাইভিং এর জন্য বড় মাঠ এবং অকেজো যন্ত্রাংশ মেরামত ও কেনার অর্থ না থাকায় নানামুখী সমস্যায় পড়তে হচ্ছে বলে জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাগণ।


মুজিব বর্ষ

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

Pin It on Pinterest