কুড়িগ্রামে ধীর গতিতে পানি কমছে।। এখনো অনেক চরে ত্রাণ পৌঁছেনি

প্রকাশিত: ১০:২৯ অপরাহ্ণ, জুন ২২, ২০২২

কুড়িগ্রামে ধীর গতিতে পানি কমছে।।  এখনো অনেক চরে ত্রাণ পৌঁছেনি

সাইফুর রহমান শামীম কুড়িগ্রাম: ২২.০৬.২০২২

কুড়িগ্রামে সবগুলো নদ-নদীর পানি ধীরগতিতে কমতে শুরু করেছে। বন্যা কবলিত চর, দ্বীপ চর ও নিম্নাঞ্চল গুলোর বাড়িঘরে এখনো কোমর থেকে হাঁটু পানি রয়েছে । জেলার কুড়িগ্রাম সদর, নাগেশ্বরী,ফুলবাড়ী, রাজারহাট, উলিপুর, রৌমারী, রাজিবপুর ও চিলমারী উপজেলার ৪৮ ইউনিয়নের বন্যা কবলিত নিম্নাঞ্চল, চর, দ্বীপ চরসহ শতাধিক চরের লক্ষাধিক মানুষ বন্যার শুরু থেকে পানিবন্দি রয়েছে। এসব ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের অনেকেই এখনও নৌকা অথবা ঘরের ভেতর মাচাং পেতে ঝড় বৃষ্টি উপেক্ষা করে অবর্ণনীয় কষ্টে রয়েছে। বন্যা স্থায়ী হওয়ায় চরে অধিকাংশ বাড়ির বাঁশের খুঁটি ভেঙে ঘর হেলে পড়ার উপক্রম হয়েছে। এসব বাড়ি ঘর দ্রুত দুমড়ে-মুচড়ে পড়বে বলে ভুক্তভোগীরা আশঙ্কা করছে। এসব এলাকায় বিশুদ্ধ খাবার পানি, শুকনো খাবার,গো-খাদ্য ও শিশু খাদ্যের সংকট তীব্র হয়েছে । জেলা প্রশাসন সরকারি ভাবে ত্রাণ সামগ্রী বরাদ্দের ঘোষণা দিলেও বিতরণে ধীরগতির কারণে অনেক দুর্গম এলাকার মানুষের ভাগ্যে এখনো কোন সাহায্য পৌঁছেনি বলে অভিযোগ উঠেছে। ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের তুলনায় বরাদ্দের পরিমান নগণ্য হওয়ায় সর্বত্র ত্রাণ যাচ্ছেনা না বলেও অভিযোগ করেছে অনেকে। আজ বুধবার ব্রম্মপুত্রের চিলমারী পয়েন্টে দুপুর ১২ পর্যন্ত পানি ২ সেন্টিমিটার কমে বিপদসীমার ৫১ সেন্টিমিটার, নুনখাওয়া পয়েন্টে ৩ সেন্টিমিটার কমে বিপদসীমার ১৬ সেন্টিমিটার ও ধরলা ব্রিজ পয়েন্টে ১ সেন্টিমিটার কমে বিপদসীমার ৪০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। তবে তিস্তার পানি কাউনিয়া পয়েন্টে ২ সেন্টিমিটার কমে বিপদসীমার ১৯ সেন্টিমিটার নীচ দিয়ে প্রবাহিত হয়।
এ অবস্থায় চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চলের ডুবে যাওয়া ঘরবাড়ি, আশ্রয় কেন্দ্র ও নৌকায় সপ্তাহ খানেক ধরে অবস্থান করা বানভাসি মানুষজন অবর্ণনীয় কষ্টের শিকার হচ্ছে। তাদেরকে এক বেলা খেলে অন্নবেলা উপোশ কাটাতে হচ্ছে ।
কিছু কিছু এলাকায় সরকারী ভাবে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রমের পাশাপাশি বেসরকারি ভাবেও বিভিন্ন সংস্থার ত্রাণ তৎপরতা লক্ষ্য করা গেছে। তবে প্রয়োজনের তুলনায় বরাদ্দ অপ্রতুল হওয়ায় তা ক্ষতিগ্রস্থ মানুষজন পাচ্ছেন না বলে একাধিক ভুক্তভোগী দাবি করেছে।
আজ বুধবার উলিপুর উপজেলার বন্যা কবলিত সাহেবের আলগা ইউনিয়নের চর বাগুয়ায় দুপুর ১২ টার দিকে এ প্রতিবেদক নৌকায় করে পৌঁছুলে ঐ চরের প্রায় ৫০/ ৫৫টি বাড়ির সবগুলোতেই হাঁটু পানি ও কোমর পানি দেখতে পান । ঐ চরের বাসিন্দা ছলিমুদ্দিন ঘরে মাচাং তৈরি করে পরিবার নিয়ে পানিবন্দি আছেন। তার সাথে কথা হলে তিনি জানান, বন্যায় তাদের সব কিছু ভেসে গেছে। প্রায় সাত দিন বানের পানিতে ভেসে আছে। কাজকর্ম নাই। ঘরে যা খাবার ছিল তাও শেষ হয়ে গেছে। আত্মীয়ের বাড়ি থেকে চাল নিয়ে এসে দুই দিন চলল, এখন কি খাবে তা ভেবে পাচ্ছে না। কেউ কাজেও নিচ্ছে না। সরকারি সাহায্য পেয়েছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, সরকারি কোনো লোক এই চরে আসেন নাই। তার মত দুরবস্থার কথা জানালেন, একই চরের আছর উদ্দিন, ইছুব আলী, রবিয়াল,জায়েদুল, রকিব, মোকসেদ আলী, ছমেদ আলী, রকমত পাগলা, চাঁন মিয়া, শহিদুল, সাইদুল, মাঈদুল ও লাল মিয়া। সবার বাড়িতে কোমর থেকে হাঁটু পানি অবস্থান করছে। একই অবস্থা পার্শ্ববর্তী কাজিয়ারচর, হকের চর ও সুখের বাতীচরের পানিবন্দি মানুষের।
পানি নেমে না যাওয়ায় এসব পানিবন্দি মানুষ পরিবার পরিজন নিয়ে দুর্বিষহ জীবন পার করছে। এখানে বিশুদ্ধ পানি ও খাদ্য সংকট তীব্র ।
বন্যাকবলিত এ চরের কোথাও সরকারি বা বেসরকারি কোন ত্রাণসামগ্রী পৌঁছেনি বলে চরের মানুষজন জানান। সাহেবের আলগা ইউনিয়নের ৭ নং ওয়ার্ড কমিশনার আবু সাইম একই ধরনের অভিযোগ করেন।
জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ পর্যন্ত ৯ টি উপজেলার বন্যা কবলিত মানুষের জন্য ৩শ ৩৮ মেট্রিক টন চাল, নগদ ১৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা, ১ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার, ১৮ লাখ ৯৫ হাজার টাকার শিশু খাদ্য ও ১৭ লাখ ৭৫ হাজার টাকা গো-খাদ্য বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। যা উপজেলা পর্যায়ে বন্টন করা হয়। তাদের ভাষায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় এসব ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম চলছে ।


মুজিব বর্ষ

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

Pin It on Pinterest