ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৬ আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৩:৫৭ অপরাহ্ণ, জুলাই ৪, ২০২২
আবু রায়হান, জয়পুরহাটঃ
জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার মাত্রাই ইউনিয়নের
শাইলগুন আইপিএম কৃষি সমবায় সমিতি লিঃ এর নামে জালিয়াতি করে খাস খতিয়ানের ৭ টি পুকুর ইজারা নেওয়ার ঘটনায় উপজেলা প্রশাসন কর্তৃক দায়েরকৃত মামলার তদন্ত সমাপ্ত করে দোষীদের শাস্তির দাবি জানানো হয়েছে।
ঘটনা সূত্রে জানা গেছে, ৩ বছর আগে মাত্রাই ইউনিয়নের শাইলগুন আইপিএম কৃষি সমবায় সমিতি লিঃ এর নাম দিয়ে জালিয়াতি করে ৭ সরকারি পুকুর ইজারা নেয় এলাকার একটি কুচক্রী মহল। মেয়াদ শেষে ইজারার বাঁকি টাকা পরিশোধের জন্য সম্প্রতি উপজেলা ভূমি অফিস থেকে সমিতির আসল নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা হতভম্ব হয়ে পরেন।
শাইলগুন আইপিএম কৃষি সমবায় সমিতি লিঃ এর আসল সভাপতি ফরিদুজ্জামান ও সাধারণ সম্পাদক ফেরদৌসজ্জামান জানান, তারা কখনোই কোন পুকুর ইজারা নেননি। অত্র এলাকার একটি কুচক্রী মহল তাদের সমিতির নাম ও রেজিষ্ট্রেশন নম্বর ব্যাবহার করে ভূয়া একটি কমিটি গঠন করে ৩ বছর মেয়াদে ৭ টি পুকুর ইজারা নেয় এবং প্রথম এক বছরের টাকা জমা দিয়ে বিভিন্ন জনের কাছে পুকুরগুলো মোটা অংঙ্কের টাকার বিনিময়ে ভাড়া দেয়। পরের দুই বছরের বকেয়া টাকা পরিশোধ না করলে উপজেলা ভূমি অফিস থেকে সমিতির আসল কার্যালয়ে নোটিশ আসলে তারা হতভম্ব হয়ে পরেন। পরে তারা এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে একটি লিখিত অভিযোগ দিলে তদন্ত সাপেক্ষে জানা যায়, সমিতির নাম ব্যবহার করে ভূয়া কমিটির মাধ্যমে পুকুর নেওয়া হয়েছিল। এরপর উভয় পক্ষকে ডেকে ভূয়া কমিটির সভাপতি / সম্পাদককে ২ বছরের বকেয়া টাকা পরিশোধের নির্দেশ দিলে তারা সেটি পরিশোধ না করায় তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়। তারা আরো বলেন, যারা এই জালিয়াতি করেছে তাদের দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি দেওয়া হোক।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সমিতির নাম ও রেজিষ্ট্রেশন নম্বর ঠিক রেখে একই এলাকার কুসুমসাড়া গ্রামের জিন্নুরাইন নয়নকে সভাপতি ও সাইফুল ইসলাম কে সাধারণ সম্পাদক দেখিয়ে ৭ সদস্য বিশিষ্ট একটি ভূয়া কমিটি গঠন করে পুকুরগুলো ইজারা নেওয়া হয়েছিল।
জালিয়াতির বিষয়টি অস্বীকার করে ভূয়া কমিটির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম বলেন, শাইলগুন গ্রাম থেকে আমাদের গ্রাম ৫ কিলোমিটার দূরে হলেও প্রায় প্রতিদিনই তাদের সাথে দেখা হয়। আমি বা আমাদের গ্রামের আরো যেকয়েক জনের নাম ব্যাবহার করে কমিটি গঠন করে কে বা কাহারা পুকুর ইজারা নিয়েছিল সে ব্যাপারে আমরা কিছুই জানিনা।
এদিকে পুকুরগুলো ইজারার পর ৩ বছর মেয়াদে ভাড়া নিয়ে ভোগদখলকারী আব্দুল মুমিন, ফারুক হোসেন ও জহুরুল এর সাথে যোগাযোগ করলে তারা বলেন ৩ বছর মেয়াদে মাত্রাই এলাকার মনোয়ার হোসেন বিএসসি, বিয়ালা গ্রামের হারুনুর রশিদ ও মাত্রাই কারিগরি কলেজ এর ইনসট্রাক্টর বাদেশ আলীর নিকট থেকে সম্পূর্ণ টাকা পরিশোধ করে তারা ভাড়া নিয়ে ভোগদখল করেছেন।
অপরদিকে জালিয়াতি করে পুকুর ইজারা নিয়ে অর্থের বিনিময়ে অন্যত্র ভাড়া দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে মাত্রাই এলাকার মনোয়ার হোসেন বিএসসি, বিয়ালা গ্রামের হারুনুর রশিদ ও মাত্রাই কারিগরি কলেজ এর ইনসট্রাক্টর বাদেশ আলী বলেন তারা এ বিষয়ে কিছুই জানেনা এবং তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করা হচ্ছে।
উপরোক্ত ঘটনার বিষয়ে কালাই উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট জান্নাতুল ফেরদৌস এর সাথে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, যেহেতু আসল সমিতির নেতারা কখনো পুকুর ইজারা নেয়নি তাই বিষয়টি জানতে পেরে তারা ঘটনার বিষয়ে কালাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার এর নিকট একটি অভিযোগ দায়ের করলে উভয় পক্ষকে ডাকার পর বিষয়টি প্রমানিত হলে বকেয়া টাকা পরিশোধের নির্দেশ দিলে সেটি না দেওয়ায় ভূয়া কমিটির বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করা হয়।
এলাকার সুধীমহল, সমিতির আসল নেতাকর্মী ও সদস্যদের দাবি, পুকুর ইজারা জালিয়াতির ঘটনায় দায়েরকৃত মামলাটির তদন্ত দ্রুত শেষ করে প্রকৃত দোষীদের সনাক্ত করে কঠোর শাস্তির আওতায় আনা হোক।
© স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০২০ Developed By Agragami HOST