কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীতে একই পরিবারের তিন সন্তান থ্যালাসেমিয়া রোগে আক্রান্ত, সন্তানদের বাঁচাতে বাবার আকুতি

প্রকাশিত: ২:৫৩ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ২৪, ২০২২

কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীতে একই পরিবারের তিন সন্তান থ্যালাসেমিয়া রোগে আক্রান্ত, সন্তানদের বাঁচাতে বাবার আকুতি

সাইফুর রহমান শামীম,, কুড়িগ্রাম।।।
“ছওয়াগুলার কষ্ট সহ্য হয় না বাহে! ওমাকগুলাক বাঁচান। মুঁই আর পারং না”। কান্নাভেজা কন্ঠে কথাগুলো বলেন ফুলবাড়ীর ভাঙ্গামোড় ইউনিয়নের মধ্য রাবাইতারী গ্রামের দিন মজুর রফিকুল ইসলাম। তার ৪ সন্তানের ৩জনই থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত।
মাত্র দেড় শতাংশ জমির বসত ভিটায় একটি চালা ঘর ছাড়া সহায় সম্বল কিছুই নেই তার। দিন মজুরী করে স্ত্রী-চার সন্তানকে নিয়ে অতিকষ্টে দিন পার করছেন। এক মাত্র মজুরী বিক্রির টাকা ও মানুষের কাছে ধার-দেনা করেই অসুস্থ তিন সন্তানকে নিয়ে খেয়ে না খেয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন। নিয়তির নিষ্ঠুর কষাঘাতে জর্জড়িত রফিকুল কথার মাঝে মাঝে আকাশের পানে চেয়ে বিরবির করে কথা বলেন। তার কষ্টেভরা কথাগুলো শুনে এক অসহায় পিতার আর্তনাদ হয়ে ফুটে ওঠে।
রফিকুল ইসলামের চার ছেলে। প্রথম ছেলে আবু হাসান (২৩), দ্বিতীয় ছেলে আবু হোসেন (২০), তৃতীয় ছেলে হাসু মিয়া (১৬)। এই তিন ছেলে জন্ম থেকেই থ্যালাসেমিয়া রোগে আক্রান্ত। শুধুমাত্র সব ছোট ছেলে (১০) সুস্থ এখনও আছে। বয়স অনেক হলেও চেহারা ও আকৃতিতে তিন ছেলেকেই শিশুর মত দেখা যায়। এক মাস আগে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাট-বাজারসহ মানুষের দ্বারে দ্বারে ভিক্ষা করে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বড় ছেলে আবু হাসানের অপারেশন করা হয়েছে। অপারেশনে খরচ হয়েছে প্রায় দেড় লাখ টাকা। সপ্তাহখানেক আগে সে হাসপাতাল থেকে বাড়ীতে এসেছে। এখনও পুরোপুরি সুস্থ হয়নি। মেজ ছেলে আবু হোসেন অসুস্থ শরীর নিয়ে পাশ্ববর্তী বটতলা বাজারে অন্যের দোকানে মাসিক দুই হাজার টাকা বেতনে কাজ করে। প্রতি মাসে দ্বিতীয় ছেলে আবু হোসেন ও তৃতীয় ছেলে হাসু মিয়ার শরীরে এক ব্যাগ করে রক্ত দিতে হয়। ডাক্তার জানিয়েছেন, অতি দ্রুত সময়ে এই দুজনেরও অপারেশন করা খুবই জরুরি।
অর্থের অভাবে অনেক আগেই তিন ছেলের পড়ালেখা বন্ধ হয়ে গেছে। নিজের কিছু জমানো অর্থসহ আত্মীয়-স্বজন, পাড়া প্রতিবেশিসহ বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে ছেলের চিকিৎসার জন্য ভিক্ষা করে প্রায় সাড়ে ৩ লক্ষ টাকা খরচ করেছেন। পরিবারটির করুণ পরিণতি দেখে স্থানীয়দের সহায়তায় পনের টাকা কেজির চালের রেশন কার্ডটি পেয়েছেন। আর কোনো সরকারি-বেসরকারি সুযোগ সুবিধা নেই। ছেলেদের চিকিৎসার টাকা যোগানো তার পক্ষে অসম্ভব।
রফিকুল বলেন, “ছওয়াগুলার কষ্ট সহ্য হয় না বাহে, ওমাকগুলাক বাঁচান। ট্যাকার অভাবে ছেলেদের চিকিৎসা বন্ধ পরায়। প্রতিমাসে দুই ছেলের রক্ত দেওয়া সম্ভব হবার নাগচে না।”
তাই সন্তানদের বাঁচাতে রফিকুল সমাজের সহৃদয়বান ব্যক্তিসহ সরকারের কাছে সন্তানদের সু-চিকিৎসার জন্য সহযোগিতা চেয়েছেন। সাহায্য পাঠানোর বিকাশ নম্বর (আবু হাসান ০১৩২৪১৩২৩১৪)।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও প.প.কর্মকর্তা ডাঃ সুমন কান্তি সাহা বলেন, থ্যালাসেমিয়া একটি বংশগত রক্তের রোগ। এ রোগে আক্রান্তদের শরীরে রক্ত দিতে হয়। নিরাময় না হলেও বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের চিকিৎসায় এ রোগ নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) সুমন দাস জানান, রোগাক্রান্ত পরিবারের সাথে যোগাযোগ করে সমাজসেবা অধিদপ্তরের মাধ্যমে সহযোগিতা করা হবে।


মুজিব বর্ষ

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

Pin It on Pinterest