আমতলীতে সাড়ে ৩ কোটি টাকা ফেরত পাওয়ার দাবীতে মানবন্ধন কর্মসূচী পালন

প্রকাশিত: ৮:৫১ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ১৪, ২০২০

আমতলীতে সাড়ে ৩ কোটি টাকা ফেরত পাওয়ার দাবীতে মানবন্ধন কর্মসূচী পালন

মোঃ হাইরাজ বরগুনা ।। পন্য বিক্রি ও অধিক মুনাফা লোভ দেখিয়ে টাকা জামানত রাখার নামে সাড়ে তিন কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে সোমবার দুপুরে উধাও হয়েছে মোনাভী অল বাংলাদেশ নামের একটি ভুয়া বে-সরকারী কোম্পানী। এতে ২শ পাঁচ জন কর্মী ও প্রায় এক হাজার গ্রাহক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এ ঘটনার প্রতারকদের বিচার দাবীতে মঙ্গলবার দুপুরে আমতলী উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গণে মানববন্ধন কর্মসুচী পালন করেছে ভুক্তভোগীরা। জানাগেছে, মোনাভী অল বাংলাদেশ নামের একটি ভুয়া বেসরকারী কোম্পানী ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে আমতলীতে পন্য বিক্রি ও অধিক মুনাফার লোভ দেখিয়ে গ্রাহক সংগ্রহ করে। প্রথমে আমতলী পৌর শহরের সাকিব প্লাজার তিন তলায় অফিস নেয়। ওই খানে গত এক বছর ধরে কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে তারা। গ্রাহক সংগ্রহের জন্য আমতলী উপজেলায় ২শ পাঁচ জন প্রতিনিধি নিয়োগ দেয় প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান জামাল হোসেন মুকুল। প্রত্যেক প্রতিনিধির কাছ থেকে জামানত বাবদ সত্তর হাজার টাকা নেয়। প্রতিনিধিদের মাসব্যাপী প্রশিক্ষক দেয় তারা। প্রত্যেক প্রতিনিধি বিশ হাজার টাকা দামের একটি এলইডি টিভি বিক্রি করতে পারলে কোম্পানী কতৃপক্ষ এক হাজার পাচশ’ ৪১ টাকা মুনাফা দেয়। টিভি না নিয়ে টাকা জমা দিলেও তাকে ওই পরিমান টাকা মুনাফা দেয় কোম্পানীর কর্তৃপক্ষ। এভাবে যে যতগুলো টিভি বিক্রির নামে টাকা জমা দিতে পারবে তাকে প্রতি টিভি বাবদ এক হাজার পাচথশ ৪১ টাকা দেয়া হবে। অধিক মুনাফার আশায় আমতলী উপজেলার বিভিন্ন এলাকার প্রায় এক হাজার গ্রাহক এভাবে টাকা জমা দিয়েছেন। পন্য বিক্রি ছাড়াও অনেক গ্রাহক অধিক মুনাফার আশায় টাকা জমা দিয়েছেন। এছাড়াও এক লক্ষ টাকায় মাসে সাত হাজার সাতথশ ৮ টাকা লাভ দিবে বলে গ্রাহকদের কাছ থেকে টাকা সংগ্রহ করে। এভাবে প্রায় এক হাজার গ্রাহকদের কাছ থেকে টাকা সংগ্রহ করেছে এই প্রতারক চক্র। ওই প্রতারক চক্র গ্রাহকদের কাছ থেকে প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে জানান কোম্পানীর স্টোর ইন চাজ জামাল মিয়া। তাদের কাযক্রম নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে আমতলীর জনমনে সন্দেহ ছিল। গত তিন মাস পূর্বে সাকিব প্লাজার অফিস ছেড়ে আমতলী হাসপাতাল এলাকায় অফিস ভাড়া নেয়। সোমবার দুইথশ পাচজন প্রতিনিধিদের বেতন দেয়ার কথা ছিল। ওইদিন সকালে ওই প্রতিনিধিরা অফিসে বেতন নিতে আসেন। এ সময় অফিসের মাকেটিং অফিসার আনিস মিয়া, হিসাব রক্ষক আল আমিন, স্টোর ইন চাজ জামাল মিয়া ও প্রশাসনিক কর্মকতার্ দীপক চন্দ্র শীল উপস্থিত ছিল। সকাল গড়িয়ে দুপুর হয়ে গেলেও চেয়ারম্যান জামাল হোসেন মুকুলের দেখা নেই। এর পরপর তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায় চেয়ারম্যানের ফোন বন্ধ পেয়ে অফিসের কমকতারা সকলে সটকে পড়ে এতে প্রতিনিধিদের সন্দেহ হয়। পরে উপস্থিত গ্রাহক ও প্রতিনিধিরা অফিসের আসবাবপত্র ভাংচুর করে। খবর পেয়ে আমতলী থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে। এ দিকে কোম্পানী টাকা নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার খবর পেয়ে কয়েক শত গ্রাহক অফিসের সামনে জড়ো হয়। অনেক গ্রাহক ও প্রতিনিধি টাকা হারিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পরে জ্ঞান হারিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পরে। এ ঘটনার পর থেকে কোম্পানীর চেয়ারম্যান জামাল হোসেন মুকুলসহ অফিসের সকল কমকতাদের মোবাইল ফোন বন্ধ রয়েছে। এ ঘটনার বিচার দাবীতে মঙ্গলবার ভুক্তভোগীরা প্রতারকদের বিরুদ্ধে আমতলী উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গণে মানবন্ধন কর্মসূচী পালন করেছে। ঘন্টাব্যাপী মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন মোঃ জিয়া উদ্দিন জুয়েল, তানজিলা বেগম, মেঘলা, হনুফা, খালেদা, হাওয়া রাবেয়া, নুসরাত, ইতি, সোনিয়া, সুখি আক্তার ও সোহেল মাহমুদ। বক্তব্য দ্রুত প্রতারক জামাল হোসেন মুকুল, আনিস মিয়া, আল আমিন, জামাল মিয়া ও কর্মকতার্ দীপক চন্দ্র শীলকে গ্রেফতার করে বিচার দাবী করেছেন। এদিকে প্রতারক চক্র ও তাদের সহযোগী কোম্পানীর প্রশাসনিক কর্মকতার্ দীপন চন্দ্র শীলকে রক্ষার একটি মহল উঠেপড়ে লেগেছে। বক্তরা বলেন, আমরা সরল বিশ্বাসে এ কোম্পানীতে টাকা বিনিয়োগ করেছি। প্রতিমাসে আমাদের টাকার বিপরীতে মুনাফা দিবে। কিন্তু এখনতো আমাদের সবই গেল। আমরা নিঃস্ব হয়ে গেলাম। আমাদের এখন পথে বসতে হবে। ভুক্তভোগী লিজা, জান্নাতি,সুখি, রাবেয়া, সোনিয়া, সোহেল বলেন, চাকুরী দিবে বলে আমাদেওর প্রত্যেকের কাছ থেকে সত্তর হাজার টাকা নিয়েছে। এখন তারা আমাদের চাকুরী না দিয়ে টাকা নিয়ে পালিয়ে গেছে। জান্নাতি বলেন, আমি চাকুরী দেয়ার সময় এক লক্ষ টাকা জমা দিয়েছি। এখন পযন্ত বেতন পাইনি। এখনতো পালিয়েই গেল। কি জবাব দিব বাড়ীতে গিয়ে। তানজিলা, হনুফা, খালেদা ও নুসরাত বলেন, কোম্পানীর চেয়ারম্যান জামাল হোসেন মুকুলসহ তার সহযোগীরা টাকা নিয়ে পালিয়ে গেছে। আমরা এ ঘটনার বিচার চাই। আমতলী কাউনিয়া গ্রামের সুখি আক্তার বলেন, মুনাফা দেয়ার কথা বলে আমার কাছ থেকে চার লক্ষ টাকা নিয়ে পালিয়ে গেছে। মোনাভী অল বাংলাদেশ আমতলী শাখার স্টোর ইন চার্জ জামাল মিয়া বলেন, কোম্পানীর চেয়ারম্যান প্রতারক জামাল হোসেন মুকুল আমতলীর বিভিন্ন গ্রাহকদের কাছ থেকে প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে পালিয়ে গেছে। এ ব্যাপারে মোনাভী অল বাংলাদেশের চেয়ারম্যান মোঃ জামাল হোসেন মুকুলের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে। আমতলী থানার ওসি তদন্ত মনোরঞ্জন মিস্ত্রি বলেন, এ বিষয়ে এখনো কোন অভিযোগ পাইনি অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। আমতলী ইউএনও মনিরা পারভীন বলেন, এ বিষয়টি আমার জানা নেই। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হবে।


মুজিব বর্ষ

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

Pin It on Pinterest