রাজশাহীর সাহেব বাজারের দুই পারের অর্ধেক রাস্তা হকারদের দখলে, যানজটে জনদুর্ভোগ

প্রকাশিত: ১২:৩২ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ২১, ২০২০

রাজশাহীর সাহেব বাজারের দুই পারের অর্ধেক রাস্তা হকারদের দখলে, যানজটে জনদুর্ভোগ

ওমর ফারুক, রাজশাহী ব্যুরো: রাজশাহী মহানগরীর প্রাণকেন্দ্র হিসেবে পরিচিত সাহেব বাজারের দুই পারের অর্ধেক রাস্তা হকাররা দখল করে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। এতে ওই রাস্তা দিয়ে চলাচলকারী ও পথচারীরা ব্যাপক ভোগান্তির মধ্যে পড়ছেন। এ কারণে প্রায় সবসময় যানজট লেগে থাকে। আর দুই পারের রাস্তা দখল করে ডাবলভাবে হকাররা দখল করে রাখার কারণে প্রায় সময় দুর্ঘটনাও ঘটে। এ নিয়ে পথচারী ও স্থানীয়দের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। মাঝেমধ্যেই রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ এসব ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ীদের উঠিয়ে দিলেও আবার তারা দোকান বসিয়ে ব্যবসা করে। অভিযান শেষ হওয়ার পরপরই তারা আবার রাস্তা দখল করে বসে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজশাহী মহানগরীর প্রাণকেন্দ্র সাহেব বাজার মনিচত্বর থেকে জিরোপয়েন্ট পর্যন্ত সব সময় যানজট থাকে। যানজটের কারণে পথচারীরা ভোগান্তির মধ্যে পড়েন। তার উপর আবার “মরার উপর খাড়ার ঘা” হয়ে দাঁড়িয়েছে হকারদের রাস্তা দখল করে বসা দোকান ও ভ্রাম্যমাণ দোকান। প্রতিদিন দুপুর ২টা থেকে রাত ১০ টা পর্যন্ত এই রাস্তা হকারদের দখলে থাকে। নগরীর অন্যান্য এলাকাতে কিছু রাস্তা ও ফুটপাত দখল করে দোকান বসলেও সাহেব বাজারে একেবারেই ভিন্ন চিত্র। সেখানে স্থায়ী মার্কেটের সামনে স্থায়ীভাবে রাস্তা ও ফুটপাত দখল করে ফুলসহ বিভিন্ন জিনিসপত্রের দোকান বসানো হয়েছে। তার উপর আবার ভ্রাম্যমাণ দোকানিরা মূল রাস্তা দখল করে ব্যবসা করছেন। শুধু রাস্তার একপার নয় দুই পারেই একইভাবে দখল করা হয়েছে।
নাম না প্রকাশ করার শর্তে রাস্তা ও ফুটপাত দখল করে বসা ব্যবসায়ীরা জানান, তারা স্থায়ী দোকানদের সামনে বসার জন্য টাকা দেন। কত টাকা দিতে হয় তা বলতে অপারগতা জানান তারা। নিয়মিতই এ টাকা প্রদান করতে হয় তাদের। আর দুপুরের পর থেকে রাত পর্যন্ত বসা ভ্রাম্যমাণ দোকানিরা তাদের ইচ্ছামত রাস্তা দখল করে ভ্যান নিয়ে দাঁড়িয়ে ব্যবসা করে থাকেন। আরএমপির ট্রাফিক বিভাগের পক্ষ থেকে মাঝেমধ্যে উচ্ছেদ অভিযান চালালেও অভিযান শেষ করে যাওয়ার কিছুক্ষণ পর আবার তারা বসে যায়। এ কারণে পুলিশি অভিযানেও কোন স্থায়ী সমাধান হয়না। এভাবে হকাররা রাস্তা দখল করে বসে থাকার কারণে পথচারী ও যানবাহন চালকরা চরম ভোগান্তির মধ্যে পড়েন। হকাররা যেসব দোকান নিয়ে সেখানে ব্যবসা করেন তার মধ্যে অন্যতম হলো, ফলের দোকান, ফুলের দোকান, ফুচকা, চটপটি, নুডলস্, কসমেটিকস্ সামগ্রী, সাংসারিক কাজে ব্যবহৃত জিনিসপত্র, অন্যপারে কাপড় ও মেয়েদের কসমেটিকস্ সামগ্রীর দোকানিরা দখল করে ব্যবসা করেন।
সাহিদা নামের এক পথচারী নারী বলেন, গুরুত্বপূর্ণ এই স্থানটা হকারমুক্ত থাকা দরকার। এমনিতেই এখানে সবসময় ভিড় থাকে। হকারররা দখল করে রাখার কারণে আরো বেশি ভিড় থাকে। এ অবস্থায় হকারদের উচ্ছেদ করা জরুরী। কলেজ ছাত্রী মাইসা বলেন, এদিক দিয়ে প্রায় যাতায়াত করি। স্থায়ী হকার ভ্রাম্যমাণ দোকানিরা রাস্তা দখল করে দাঁড়িয়ে থাকার কারণে চলাচলে সমস্যা হয়। এর স্থায়ী সমাধান প্রয়োজন। নাম না প্রকাশ করার শর্তে এক ব্যবসায়ী বলেন, স্থায়ী দোকানের সামনে যারা ব্যবসা করছেন তারাতো আর বিনামূল্যে নেই। তাদের টাকা দিয়েই থাকতে হয়।
বাহাদুর নামের এক মোটরসাইকেল চালক বলেন, পেশাগত কারণেই প্রতিদিন এই রাস্তা দিয়ে চলাচল করতে হয়। কিন্ত মনিচত্বর থেকে জিরোপয়েন্ট পর্যন্ত খুব সমস্যা হয়। যানজটের কারণে এই সমস্যা হয়। যানজট লাগার অন্যতম কারণ হচ্ছে ফুটপাত দখল করে বসা দোকান ও ভ্রাম্যমাণ হকার। এদের উচ্ছেদ করা জরুরী হয়ে পড়েছে। রাহিদ নামের এক অটোরিক্সা চালক বলেন, এখানকার যানজটতো প্রতিদিনের ব্যাপার। যানজটের কারণে আমিতো এই রাস্তায় আসতে চায়না। অটোরিক্সার যাত্রীরাও বিরক্ত হন। রাস্তা দখল করে দোকান না থাকলে এ সমস্যা হবেনা। কর্তৃপক্ষের সুদুষ্টি কামনা করছি। এদিকে, সরজমিনে সোমবার বিকেলে সাহেব বাজার জিরোপয়েন্টে গিয়ে দেখা যায়, ভ্রাম্যমাণ দোকানিরা রাস্তার উপর এলোমেলোভাবে ভ্রাম্যমাণ দোকান দিয়ে পথচারী ও যানবাহন চলাচলে প্রতিবন্ধিকতা সৃষ্টি করছে। মনিচত্বর থেকে জিরোপয়েন্ট পর্যন্ত ডাবল করে হকাররা রাস্তা দখল করে বসে আছে। এক হকারের সাথে হলে তিনি বলেন, কি করবো? সংসার চালানোর জন্য এভাবে ব্যবসা করতে হয়। এছাড়া অন্য কোন উপায় নেই। রাস্তায় কেন এমন প্রশ্ন করলে তিনি চুপ হয়ে যান। অন্য এক হকারের সাথে কথা হলে তিনি কিছু না বলে চুপ থাকেন।
এ বিষয়ে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার অনির্বান চাকমা বলেন, মাঝেমধ্যেই অভিযান চালিয়ে রাস্তা দখল করে বসা ব্যবসায়ীদের উঠিয়ে দেয়া হয়। কিন্ত তেমনভাবে স্থায়ী সমাধান হয়না। আবার খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।


মুজিব বর্ষ

Pin It on Pinterest